মাসুদ রানা।।
অর্জনের আনন্দ সর্বজনবিদীত। আর যদি সেটা হয় ভালো কিছু অর্জন কিংবা সম্পদ তাহলে তো সেটার আনন্দ আরো বেশি।তবে সেই অর্জনের আনন্দ আর কয়জন ই বা পায়। প্রকৃত অর্জনের আনন্দ সুধু অর্জন এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না।একটু খুজে আসি অর্জনের আনন্দ কিছু স্মৃতির রেখা থেকে। গ্রামীণ পরিবেশে যে শিশু গুলো বড় হয় তারা কেন জানি একটু বেশি সাধাসিধে হয়। তা যাহোক ওইসব শিশুদের জীবনের গল্পে খুজবো মানুষের জীবনে আসল অর্জনের আনন্দ। যে গল্প দেখতে দেখতে আমার বেড়ে ওঠা আমি খুজে পাই সেই সুন্দর স্মৃতির মাঝে অর্জনের আনন্দের গল্প।গ্রমের শিশুরা ছোটবেলায় কিছু রংিন সময় পার করে যেটা সত্যিকার অর্থেই প্রকৃতির খুব কাছাকাছি নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আর একটু গভীর চিন্তা করলেই বের হয়ে আসে অর্জনের আনন্দ আর জীবনে সুখী থাকার ভেতরের রহস্য।শরতকালে যখন আকাশে সাদা মেঘের আসর বসে প্রকৃতি যখন হালকা শীতল সুমিষ্ট হাওয়া বর্ষণ করে নদীতে যখন অল্প পানিতে জাল নিয়ে মাছ ধরা শুরু হয় গল্পের আবহ টা ঠিক সেই সময় এর। শিশুরা সভাবসুলভ খেলাধুলা বেশি পছন্দ করে আর গ্রামের শিশুরা একটু বেশিই সেই সুজগ টা পায়।প্রকৃতি যেন আশীর্বাদ হিসাবে তাদের সে সুজগ করে দেয়। শিশুরা সাধারণত এই সময়েই কলাপাতার ছাউনি বেড়া আর পাট কাঠির খুটিতে তৈরি করে খেলাঘর। যে খেলাঘর এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অর্জনের আনন্দ। ছুটির দিনে বড় গাছের নিচে সাধারণত তাদের এই ঘর তৈরির প্রয়াশ দেখা যায়। তারা সকাল বেলা শুরু করে তাদের ঘর বানানোর কাজ। পরম যত্নে তৈরি সে ঘরগুলো, যদিও সেটা আয়ুকাল খুবই সীমিত। তবু তাদের প্রচেষ্টার কমতি থাকে না। ২/৪ জনের গ্রুপ যেখানে সবার কাজ থাকে আলাদা। কেও কলাপাতা সংগ্রহ করতে মহাব্যস্ত আবার কেও পাটকাঠি সংগ্রহ করতে। আস্তে আস্তে রসদ জমানো শেষ হলে শুরু হয় ঘর বানানোর কাজ। কেউ পাটের দড়ি বানায় ঘরের বাধন মজবুত করতে কেও ব্যস্ত খুড়াখুড়ি করতে যেখানে পাটকাঠি দিয়ে খুটি পুতার কাজ হবে। এভাবে পরম যত্নে দুপুরের মধ্যে বা দুপুর গড়িয়ে সেই ঘরের সমাপ্তি। তাদের এই প্রপরিশ্রমে কেও ক্লান্ত হয়না, বরং নতুন কিছু অর্জনের আশায় তারা অধিক আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে থাকে। এর মাঝে কিছু সময় এর জন্য দুপুরের খাবার গোসল। তারপর আবার সেই ঘরে ফেরার তাড়া। যাহোক সেই ছোট্ট ঘর সেখানেই তারা মেতে উঠে তাদের জীবনের সেই সুবর্ণ সময় পার করতে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। আর কিছু সময় পরেই সন্ধ্যা নামবে তবু তাদের আনন্দের শেষ থাকে না একে অন্যের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকে। পশ্চিম আকাশে যখন লাল বর্ণ ধারন করে যখন তাদের মনে হয় তখন তাদের মা ডাকবে আর একটু বেশি থাকলে বকাঝকা করবে ঠিক সেই মুহুর্তের কথাই আজ বলছি। তখন তারা খুশি মনে তাদের সারাদিনের এত পরিকল্পনা এত পরিশ্রম এর ফল যেখানে তারা কখনোই ক্লান্ত হয়না সেই ঘর আবার সবাই মিলে ভেংগে ফেলে। সন্ধা নামের দিনের সমাপ্তি ঘটে তবু তাদের কোন দুক্ষ থাকে না। কিছু সময় পরেই তারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এ হলো সেই গ্রাম বাংলার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দিন। এখন খুজবো আমাদের জীবনের অর্জনের সুখ। শুরুতেই বলেছিলাম অর্জনের আনন্দ সর্বজনবিদিত। মানুষের জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সবাই ছোট বড় কিছু ভালো কাজ বা সম্পদ অর্জনে ব্যস্ত। এখানে কেও ক্লান্ত হয়না। সবাই সেই ছোট্ট শিশুরা যেমন ২/৪ এর দলে ঘর বানানোর কাজ করে ঠিক তেমনি ভাবে বাস্তব জীবনে সবাই কিছু মানুষ নিয়ে পরিবার গঠন করে।যেখানে সবাই পরিবার এর উন্নয়ন এর জন্য কাজ করে। কিভাবে মাথার উপরের চালটা ভালো থাকবে পেট খুধামুক্ত থাকবে এই চিন্তায় ব্যস্ত। কিন্তু কেও ই এই অর্জনের প্পরিশ্রম টাকে ক্লান্তি হিসাবে নেয় না। কিন্তু সেই অর্জনের পিছু সেই ছোট্ট বেলার মত সুখ থাকেনা। কারণ এখানে সবাই সম্পদ পুঞ্জিভুত করতে মহাব্যস্ত। কেও মনে করে না যে সুর্যের আলো যেমন নিভে যাবে সকালের সুর্য একসময় অস্ত যাবে জীবনের সময় ফুরিয়ে আসবে। ছোট্ট শিশুরা যেমন হাসিমুখে দিন শেষ এ তাদের এত পরিশ্রম এর ঘরে ভেংে ফেলতে কষ্ট বোধ হয়না কিন্তু বড় হয়ে যখন মানুষের এই অর্জনের পরিশ্রম সে কোনভাবেই চাইনা শেষ করতে। যেখান থেকেই অসুখী মানুষের জীবন শুরু। অর্জন সেটা যাই হোক না কেন সেটা ত্যাগ করার সক্ষমতা যাদের আছে তারাই প্রকৃত সুখী। অর্জনের আনন্দ বিলিয়ে দেবার মাঝে সম্পদ বানানোর আনন্দ সেটা খরচ করার মাঝে। কিন্তু সেই আনন্দের রেশ তখন ই মলিন হয় যখন সেটা আক্রে ধরে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। নদী পাড়ের মানুষ গুলো তাদের ভাংা ঘরেও সুখী কারন তারা জানে জীবন এর অর্থ। তারা জানে কলাপাতার ঘর যেমন ভেংে গেলে আবার কিভাবে তৈরি করতে হয় আবার সেটা কিভাবে হাশি মুখে ভাংতে হয়। সেজন্য নদী গর্ভে সবকিছু বিলুপ্ত হবার পর ও তারা সুখী কারন তারা অর্জন এবং ত্যাগ দুটো সমান ভাবে নিতে পারে। কিন্তু শহরের মানুষ কিংবা যারা বড় অট্টালিকায় থাকে তাদের মধ্যে হারানোর ভয় বা ত্যগের আনন্দ নেই। তাই তারা অসুখী জীবন যাপন করে। অর্জনের আনন্দ তখনই আসে যখন সেটা নিজ হাতে বিলিয়ে দিতে বা খরচ করতে পারে। ঠিক যেমন ছোট্ট শিশুরা সেই কলাপাতার ঘর দিন শেষ এ ভেংে ফেলে। মানুষ যখন নিজে কিছু অর্জন করে আর সেটা সে খরচ করতে পারে ঠিক তখনই আনন্দ আসে। আর যারা সম্পদ পুঞ্জীভূত করে নিজে খরচ করেনা যাদের সম্পদ অন্য কারো জন্য রেখে যায় তারাই অসুখী। অর্জন যেটাই হোক সেটার আনন্দ যেমন থাকে ঠিক তার চেয়ে বেশি আনন্দ থাকে সেই অর্জনে পথে আংশীদার সবাইকে সাথে নিয়ে যখন অর্জন হয় এবং সবার সার্থে সেটা শেষ হয়। যেটা চলে যায় সেটা হয়তো আর আসবে না তবে সেটা ভবিষ্যতে আসবে সেটা অবশ্যই আগের চেয়ে ভালো কিছু। আসলেই সুখ বিলাশ সেই কলাপাতার ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদি সেটা অবলোকন করতে পারো আর সে অনুযায়ী জীবন গড়তে পারো তবেই সুখবিলাশ সম্ভব। কলাপাতার সেই খেলাঘর ছোট্ট জীবন আর সুখবিলাশ.......................(সংক্ষিপ্ত)
* মাসুদ রানা: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
সাম্প্রতিক মন্তব্য