logo
news image

ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য এখন তুঙ্গে

নাসিম উদ্দিন নাসিম।।
নাটোরে তথাকথিত আইপিটিভি (ইউটিউব), অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক পেইজ এবং প্রেস লেখা স্টিকার, বুম এবং আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে চলাচল করছে চিহ্নিত অপরাধীরা। অনেকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে সাংবাদিকের বেশ ধারণ করছেন। এইসব ভুয়া সাংবাদিকরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলছে। তার ফলে মূলধারার সাংবাদিকদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এ সব ভুয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেল খুলে বাইকে স্টিকার মেরে পুরো জেলাজুড়ে ধান্ধাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া তারা কার্ড বিক্রি করছেন ২ থেকে ৫ হাজার টাকায়। কার্ড বানিজ্য করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি। এই সব কার্ড পাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ী, ছিচকে সন্ত্রাসী, অশিক্ষিত, হকার, মুদি দোকানদার, মুচি, কাঁচা তরকারি বিক্রেতা, ঔষধ বিক্রেতা, দোকানের কর্মচারি, অটো চালক, ভ্যান চালক, বাসের হেলপার, হোটেলের কর্মচারিসহ অনেকেই। এমনও আছে যারা নিজেদের নামও লিখতে পারেন না। তারাও এসব কার্ড গলায় ঝুলিয়ে পুরো জেলা চষে বেড়াচ্ছেন। সাংবাদিকের নুন্যতম নিয়ম-কানুন না জানা এই অর্ধশিক্ষিত/অশিক্ষিত কথিত সাংবাদিকদের কারণে অনেক নারী সাইবারবুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। আর এসব কথিত ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের মদদ দিচ্ছে মুলধারার হাতে গোনা দুই-একজন সাংবাদিক। জেলায় পুলিশের খাতায় থাকা চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজরা রীতিমত নিজেদের প্রকাশক ও সম্পাদক বলে পরিচয় দিয়ে মিডিয়া হাউস খুলে বসছেন। যা এই মহান পেশার জন্য সত্যিই লজ্জাজনক।  
এ ছাড়া এরা শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সংবাদ লিখতে না জানলেও নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকার কার্ড নিয়ে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, এই সব কার্ড ব্যবহার হচ্ছে মাদক বিক্রি, দেহ ব্যবসা  চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ ও  অপকর্ম ঢাকতে। এসব ভুয়া আইপিটিভি (ইউটিউব), অনলাইন নিউজ পোর্টালের নেই কোনো অনুমোদন। নাটোরে  সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, অস্ত্রবাজ, ওষুধ বিক্রেতা, সুদের ব্যবসায়ী, মটর শ্রমিকের সদস্যরা  রাতারাতি সাংবাদিক হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নাটোরের অলিগলি। কোনো সংবাদ লিখতে না পারলেও গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে, হাতে বুম নিয়ে আর মোটরসাইকেল নিয়ে পুরো জেলা চষে বেড়াচ্ছেন কথিত সাংবাদিকরা।
গ্রাম-গঞ্জে তাদের ভিজিটিং কার্ডে সয়লাব। নামধারী এই সব ভুঁইফোড় সাংবাদিক অনলাইনের পোর্টালের নাম লিখে ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে গ্রামের সাধারণ  মানুষদের ব্লাকমেইল করে যাচ্ছেন তারা। মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট খুলে ইউটিউব ও ফেসবুক পেজ তৈরি করে সেটিকে টিভি চ্যানেল অথবা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ভুয়া প্রেস কার্ড বেচাকেনা শুরু করেছেন। এ ধরনের কার্ড নিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সঙ্গে জড়িতরাও সর্বত্র সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে।
এ ভুয়া কার্ডের দৌলতে তারা রাতারাতি সাংবাদিক বনে যাচ্ছেন। তিন বছর ধরে যেখানে-সেখানে এ রকম ভুয়া সাংবাদিক অবাধে বিচরণ করছেন। তারা নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। এমন নীতিহীন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও অপপ্রচার বাড়ছে।
 প্রথমত আইপিটিভি (ইউটিউব) অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন থাকতে হবে। এসব অনলাইন পোর্টালের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মুল ধারার সাংবাদিকরা। কোন ঘটনায় উপস্থিত হয়ে ঘটনার পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে প্রশ্ন করতে গেলে আমাদের মূল ধারার সাংবাদিকদের আগেই এইসব অনলাইন পোর্টালে যারা আছেন তারা অপ্রয়োজনে প্রশ্ন করে, তার ফলে সঠিক তথ্য সংগ্রহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই বিষয়ে ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সুফি সান্টু  বলেন, নাটোরে  ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে ভুয়া সাংবাদিক ও ভুয়া অনলাইন পোর্টাল। মূলধারার সাংবাদিকরা মূল্যায়িত হচ্ছে না। ভুয়া অনলাইন পোর্টাল ও ভুয়া টিভি চ্যানেলের লোগো ব্যবহার করে বুম তৈরী করে গাড়িতে প্রেস লিখে অশিক্ষিত আলু-পটল ব্যবসায়ারী এই সব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। যারা বিভিন্ন অপরাধের জড়িত রয়েছেন। অতি দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেস কাউন্সিলের অনুরোধ জানান তিনি।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top