বাগাতিপাড়ায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি ৬ কোটি টাকা
বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, পাট, ভুট্টা, আম, লীচু এবং কলাসহ বিভিন্ন ফসলে কৃষকদের প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠ জরিপ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটায় স্থানীয় কৃষি দপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত বুধবার বিকাল ছয়টার দিকে ওই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কৃষি দপ্তর সুত্রে জানা যায়, গত বুধবার উপজেলার বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়ন, ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়ন এবং পৌরসভা এলাকায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়। এতে কৃষকদের ৪০ হেক্টর জমির বোরো ধান, ২২১ হেক্টর পাট, ২৪ হেক্টর তিল, ১১২ হেক্টর আম, ২.৫ হেক্টর লীচু এবং ১.৩৫ হেক্টর জমির কলা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অংকে প্রায় ৬ কোটি ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, বুধবার বিকাল পাঁচটার দিকে মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। তারপর শুরু হয় বাতাস, তার কয়েক মিনিট পরে শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি। কিছুক্ষন পরেই পৌনে ছয়টার দিকে ঝড়ের সাথে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি, তা প্রায় আধাঘন্টা স্থায়ী হয়। আর এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠে থাকা কাটার উপযোগী ধান, ভুট্টা, কলা, আম ও শাকসবজির প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ফলজ ও বনজ গাছপালা ভেঙে গিয়েছে। কারো- কারো ঘরের টিন ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। যা পুনরায় লাগাতে হবে।
যোগী পাড়া এলাকার কৃষক আলাল উদ্দিন বলেন, গভীর নলকূপের আওতায় তাঁর আড়াই বিঘা জমিতে ধান ছিল। সেই ধানগুলো প্রায় কাটার উপযোগী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গত বুধবারের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সেই ধানের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধান মাটিতে ঝরে পড়ে গেছে। শুধু তাঁরই নয় ওই গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ১৫০ বিঘা জমির ধানের একই অবস্থা হয়েছে। এছাড়া তাঁদের মাঠে প্রায় ৪০ বিঘা জমির তিলের ৭০ ভাগ গাছ ভেঙে ও দুমড়ে- মুচড়ে গিয়েছে। এতে তাঁদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাঁর ঘরের টিনের চালা শিলাবৃষ্টিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। যে গুলো পরিবর্তন করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাগবে।
ক্ষিদ্রমালঞ্চি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, তাঁর দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ ছিল। ভুট্টার জমিতে সার-সেচসহ অধিক পরিচর্যা করায় গাছগুলো সুন্দর হয়ে ফলনের উপযোগী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এই ঝড়ে জমির সব ভুট্টা গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে তাঁর প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।
উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক আকতারুজ্জামান বলেন, তাঁর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বাগানের প্রায় ৫০ ভাগ আম পড়ে গেছে। এছাড়া যে আমগুলো এখনও গাছে আছে, সেগুলোর মধ্যে শিলের আঘাত লাগেছে যেগুলোতে, সেই আমগুলোও পচে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকদের বোরো ধান ও আমের বেশি ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা সামনে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সামনে প্রণোদনার আওতায় এনে তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য