আধখানা স্বাধীনতার মোড়ক উন্মোচন
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে তরুণ কবি ফয়সাল আহমেদ শুভর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আধখানা স্বাধীনতা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সন্ধ্যায় ঢাকার অমর একুশে বইমেলায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংবাদিক, কবি, লেখক ও গবেষক আবু সাঈদ খান। উপস্থিত ছিলেন প্রকাশক, কবি, লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে।
কবি ফয়সাল আহমেদ শুভ বলেন, ‘একেকটি কবিতা সৃষ্টিকর্তার একেকটি উপহার। আর আমার কাছে কবিতা হলো সুন্দরতম উপহার। এই উপহারগুলো স্বর্গীয় রূপে আসে। স্বর্গীয় রূপেই থাকে আমার কাছে। এদের উপস্থিতিতে আমার চারপাশ স্বর্গময় হয়ে উঠে। আমি এক পরম সুখ
লাভ করি। এক সময় এদের প্রকাশ করতে ইচ্ছে হয়, তখন এদের পার্থিব রূপ দিতে চেষ্টা করি। ভালো কবিরা খুব সুন্দরভাবে কবিতার পার্থিব রূপ দেন। আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করি। অনেক সময় সুন্দরতম কবিতাটির পার্থিব রূপ দিতে ব্যর্থ হই বলে আমার কাছে আসা সুন্দরতম কবিতাটি অপ্রকাশিতই থেকে যায়। অনেক সময় সুন্দরতম কবিতার সর্বাঙ্গ প্রকাশে ব্যর্থ হই বলে তা আর অতোটা সুন্দর থাকে না। খুব অল্প সংখ্যক কবিতাকে আমি স্বর্গীয় রূপ থেকে পার্থিব রূপ দিয়ে তৃপ্ত হয়েছি। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কবিতা লেখার পরেও আমি পরিতৃপ্ত হতে পারিনি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে এই অমূল্য উপহার দেন। আমি এর যোগ্য না হলেও দেন। কবিতা, আমিও একদিন পার্থিব রূপ হারিয়ে তোমার রূপে রূপান্তরিত হব। সেদিন নিশ্চয় তোমার সাথে আরও বেশি মিলেমিশে একাকার হতে পারব।’
প্রকাশক মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশ বিভাগ অপছন্দ হলেও বাস্তবতা মেনে নিতে হয়েছে। আধখানা বাংলা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বিজয়ের দীর্ঘদিন পরেও স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়নি। স্বাধীনতার পূর্ণতা চাই। জাতি অপেক্ষা করে আছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার জন্যে। স্বৈরাচার, পুঁজিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, পরাশক্তির আগ্রাসনসহ নানা কারণে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ অস্তিত্বের সংকটে। এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে; যুদ্ধ করতে হবে; বিপ্লব করতে হবে। পরাশক্তিদের এক চুলও এগোতে দেওয়া হবে না আমার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দিকে।
এই গ্রন্থে সৃষ্টিকর্তার বড়ত্ব ও অসীমত্বের স্বীকার করা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে ইমান দান চাওয়া হয়েছে। একজন ইমান দান পাওয়া মানুষ তো সৃষ্টিকর্তাওয়ালা হয়ে যান। তখন সব কিছুই তো তার হয়ে যায় কারণ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তায় তার। এক তুচ্ছ নগণ্য মানুষও অসীমের অংশ
অনুভব করে। নিজের মধ্যেও অসীমত্ব খুঁজে পায়। পরম স্পর্ধায় নিজেকে প্রকাশ করে; নিজেকে উদযাপন করে। এরপর পার্থিব জীবনের বিষয়বস্তু যেমন: জীবন, প্রেম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, দেশপ্রেম, মৃত্যু ও অনন্ত জীবন এ গ্রন্থের অন্যান্য বিষয়বস্তু ।
কবির কল্পনায় মানুষ ও নক্ষত্র তথা সৃষ্টি জগতের মধ্যে মিল খোঁজা হয়েছে এবং একদিন সবকিছু মিলিত হয়ে একাকার হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘১৪০০
সাল’ কবিতার প্রত্যুত্তরে তাকে উৎসর্গ করে ‘১৫০০ সাল’ রচিত হয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় তার মতোই মুক্তির পথে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কবি পরিচিতি:
নাটোরের লালপুরের বুধপাড়া গ্রামে ১৯৮৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ফয়সাল আহমেদ শুভ। পিতা কাজীপাড়া গ্রামের মো. সাহাবুদ্দীন কামাল ও মাতা মোছা. ফরিদা খাতুন। স্ত্রী মাহবুবা খন্দকার। তাঁদের সন্তান নূসাইবা ফাতিমা।
তিনি লালপুর শিশু বিদ্যা নিকেতন/মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, লালপুর কলেজ থেকে এইচএসসি, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ২০১১ সালে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স), ২০১২ সালে এমএ, ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ বিভাগ থেকে এমজেএস পাশ করেন এবং ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে এমএ ইন ইএলটি অধ্যয়ন করেন।
তিনি ২০১২-২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজে ইংরেজী বিভাগে এবং পরবর্তীতে ২০১৬ সাল থেকে লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ-এ ইংরেজী বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
তাঁর প্রথম প্রকাশনা ‘আধখানা স্বাধীনতা’ কাব্যগ্রন্থ ২০২৩ সালে একুশে বইমেলায় আত্মপ্রকাশ করে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য