লালপুরে ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যথার্থতা
লালপুরে ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যথার্থতা
॥ তাহাজ উদ্দিন ॥
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুলতঃ সকল হারিয়ে এদেশ এবং জনগনকে নিজের পরিবার করে দীর্ঘ ক্লান্তিহীন, বিরামহীন পথে দাঁড়িয়ে আছেন এখন পর্যন্ত। জনগনের সকল কল্যাণের ব্রত আর প্রতিজ্ঞা পালনের তাগিদই তাঁর এই পথ চলার প্রধান অবলম্বন। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষা এবং গবেষণার বিস্তারে সকল পরিকল্পনা তাঁর শাসনকালে দৃশ্যমান। গৃহীত বহুমুখী সব পরিকল্পনার ফলেই বিষয় ভিত্তিক এবং সাধারণ উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষা এবং গবেষণার ক্রমবিস্তারের নানা স্তর পেরিয়ে লক্ষণীয় ভাবে বিশেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যেই।
এদেশে সন্দেহাতিত ভাবে কৃষি বিপ্লবেরও শুভ সূচনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র হাত দিয়েই। সেই ধারাবাহিকতায় যুগান্তকারী এবং ঈর্ষনীয় কৃষি বিপ্লব সম্পন্ন প্রায় এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এক অনন্য দৃষ্টান্ত এদেশের জন্য। বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার এক বিস্ময়কর মডেল।
কৃষি খাতে উদ্ভাবনী সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি পন্যের সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত এবং চলমান রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অব্যাহত আছে। অন্য কোন সরকারের শাসনামলে এমনটি ঘটেনি। প্রাগ্রসরমান বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যতা এবং সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে কৃষি বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির সমন্বিত পরিমন্ডল এবং পরিপূর্ণ ক্ষেত্র বাংলাদেশের জন্য একান্ত অপরিহার্য। এ বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করেই ২০১৯ - ২০২১ স্বল্প এ-ই সময়ের মধ্যে দেশে ৫ টি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার একটি আমাদের নাটোর জেলায় বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র নামে। নাটোর জেলায় ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর হতেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্ব স্ব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠার আবেদন, দাবি জানানো হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় তা বিষয়ভিত্তিক অথবা সাধারণ উভয় ক্ষেত্রেই বৃহৎ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সর্বাধিক গুরুত্ব এবং বিবেচনার বিষয় স্থান নির্বাচন। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থায়ী এবং সুদুর প্রসারি প্রয়োজনীয় উপাদান যথা- যোগাযোগ, ভূমি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, গবেষণার ক্ষেত্র, সামাজিক পরিমন্ডল সহ অনেক কিছু বিবেচনায় রাখা একান্ত অপরিহার্য।
আমরা লালপুরবাসী জেলার অঞ্চল ভিত্তিক আবেদন এবং দাবীর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উপযুক্ততার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করেছি। তাতে সন্দেহাতীত ভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, লালপুর উপজেলায় নরেন্দ্রপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উপযুক্ততার প্রশ্নে সকল উপাদান বিদ্যমান আছে। বিদ্যমান সুবিধা এবং উপাদানের সংক্ষিপ্ত সার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় বিবেচনার জন্য ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হ’ল।
১। উঁচু সমতল ভূমি পরিবেষ্টিত লালপুর উপজেলা মুলতঃ কৃষি নির্ভর এবং বিস্তৃত এই সমতল ভূমিতে আবহমানকাল থেকে সকল কৃষি পণ্য পর্যাপ্ত ফলনশীল উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে।
২। এক সাথে ৮০০ (আট শত) একর উঁচু সমতল সরকারি ভূমি এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিদ্যমান সুবিধাসহ নানাবিধ উপাদান জেলার অন্য কোন অঞ্চলে নাই।
৩। লালপুরের নরেন্দ্রপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন ভূমি ক্রয়, অধিগ্রহণ, কোন বাড়ি ঘর বা বসতি উচ্ছেদের মত নুন্যতম কোন কারণের উপস্থিতি নাই। সেই সাথে প্রস্তাবিত এলাকা উঁচু এবং সমতল হওয়ায় প্রাথমিক ভূমি উন্নয়নেরও কোন প্রয়োজন নাই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে প্রাথমিক নানা পদ্ধতিগত জটিলতা এবং উল্লেখযোগ্য পরিমান সময় ও রাষ্ট্রীয় ব্যয় পরিহার নিশ্চিত হবে।
৪। ভৌগোলিক ভাবে লালপুর উপজেলা আদিকাল থেকেই বন্যা জলোচ্ছ্বাস সহ অন্য সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগমুক্ত হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন জনজীবন চলমান।
৫। উপজেলা ঘেঁষে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় জনজীবনে নদী সংশ্লিষ্ট সকল সুবিধাদী বিদ্যমান। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সহ আনুষঙ্গিক সকল কাজে বালু ভরাট সহ সকল উপকরণের পর্যাপ্ততা এবং সহজলভ্যতা।
৬। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হিসেবে লালপুর উপজেলার সাথে আকাশ পথ, রেলপথ, নদীপথ, সড়কপথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বহুমুখী যোগাযোগ সুবিধা বিদ্যমান।
যথা- ২ টি জংসন স্টেশন সহ লালপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে ৪ টি রেলওয়ে স্টেশন (আব্দুলপুর, আজিমনগর, ঈশ্বরদী বাইপাস এবং মাঝগ্রাম) চলমান। আজিমনগর স্টেশনটি লালপুর সদর তথা গোপালপুরে অবস্থিত।
* বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবিত স্থান নরেন্দ্রপুর হতে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের দুরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।
* পাশে পদ্মা নদী প্রবাহিত হওয়ায় অতি সহজে এবং স্বল্প পরিকল্পনায় জলপথে পণ্য পরিবহন সহ প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো সম্ভব।
* সড়ক পথে ঢাকা - রাজশাহী ভায়া বনপাড়া, পাবনা- রাজশাহী ভায়া লালপুর সহ দেশের সকল অঞ্চলের সাথে পর্যাপ্ত সংযোগ সড়ক সুবিধা স্থায়ীভাবে চলমান আছে।
৭। প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে লালপুর উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকল অফিস এবং পুলিশ স্টেশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবিত স্থানের সন্নিকটে অবস্থিত।
৮। প্রাতিষ্ঠানিক এবং অবকাঠামোগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবিত স্থান নরেন্দ্রপুর হতে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্টের অবস্থান। একেবারেই সন্নিকটে জেলা যুব উন্নয়ন কমপ্লেক্স এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। মাত্র ৬ কিলোমিটারের মধ্যে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডাল ও তৈল বীজ গবেষণা কেন্দ্র, আরো সন্নিকটে ইক্ষু বীজ বর্ধন খামার, সরকারি হাসপাতাল সহ পশু হাসপাতাল, লালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোন অবস্থিত। সেই সাথে মানান সাইজের ৪২ টি সরকারি পুকুর আছে। সামগ্রিক ভাবে এসবের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত গবেষণা সহ প্রায়োগিক কার্যক্রম তরান্বিত করবে।
৯। খেলাধূলা এবং বিনোদন হিসেবে প্রস্তাবিত স্থান নরেন্দ্রপুরেই আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পূর্নাঙ্গ স্টেডিয়াম অবস্থিত। মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অত্যন্ত আকর্ষণীয় নয়নাভিরাম প্রায় ৪০ একর আয়তন বিশিষ্ট বিনোদন কেন্দ্র গ্রীনভ্যালী পার্ক। যেখানে প্রায় সারা বছর দেশের সকল এলাকা হতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ চিত্ত বিনোদনে একত্রিত হয়। নরেন্দ্রপুরের উভয় পাশে পণ্য সামগ্রীর পর্যাপ্ততা এবং সহজলভ্য সকল সুবিধা সম্বলিত গোপালপুর এবং লালপুর বাজার অবস্থিত।
১০। শিল্প প্রতিষ্ঠান - প্রায় শতবর্ষ ধরে এ জনপদকে সমৃদ্ধ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে আমাদের প্রানের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিঃ। ভারী, বৃহৎ এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবিত স্থানের মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এই শিল্প প্রতিষ্ঠান ঘিরে এটিকে আধুনিকীকরণ, সম্প্রসারণ সহ নানামুখী প্রকল্প প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ন বর্তমান সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। যা নিকটস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যান্ত ইতিবাচক এবং শিক্ষা সহায়ক হিসেবে নিসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
১১। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবিত স্থান আমাদের লালপুর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ৪টি জেলা যথা- নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া এবং রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এবং মাঝখানে অবস্থিত।
১২। লালপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর চরে ৬ টি মৌজায় প্রায় ৪০০ একর খাস জমি সহ মোট ৩ হাজার ৪ শত ১৮ একর জমি রয়েছে। চরের বিস্তৃত এই জমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
নাটোর জেলায় ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার স্থান নির্বাচন প্রশ্নে লালপুর উপজেলার নরেন্দ্রপুরই একমাত্র উপযুক্ত স্থান। যেখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সকল সুযোগ সুবিধাই বিদ্যমান। এখানে কম সময়ে স্বল্প ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ সহ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। লালপুরবাসীর প্রাণের দাবি ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ লালপুরের নরেন্দ্রপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠা হউক।
* তাহাজ উদ্দিন: সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা।
সাম্প্রতিক মন্তব্য