এতিম খানায় সম্পত্তি দান মুক্তিযোদ্ধার
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে এতিম খানায় নিজের সব সম্পত্তি দান করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি মো. আকিয়াব হোসেন। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১) মৃত্যুপূর্ব এক দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষনা দেন।
আকিয়াব হোসেন বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। হার্টের সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসক তাঁকে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই মৃত্যুর আগে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। নিজের সমস্ত সম্পত্তি এতিম খানায় দান করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। নিজ বাসভবনে এতিমখানা ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। একটি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করে যেতে চান তিনি। স্ত্রী সেলিনা হোসেন ও একমাত্র মেয়ে লুবনা সুলতানাকে অংশ মোতাবেক সম্পত্তি অনেক আগেই রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
নাটোরের লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ১৯৪৯ সালের ৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মো. আকিয়াব হোসেন। পিতা মরহুম দেলোয়ার হোসেন, লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মাতা মরহুম আনোয়ারা বেগম। স্ত্রী সেলিনা হোসেন। তাঁদের সন্তান লুবনা সুলতানা।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লালপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাকালে ১২ বছর বিনা বেতনে চাকরী করেন। ১৯৮৪ সালে সুগার কর্পোরেশনে ইক্ষু পরিদর্শক হিসেবে চাকরী শুরু করে ১৯৯৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক (১৯৬৪), ঈশ্বরদী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস (১৯৬৭-১৯৬৯), লালপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৯-১৯৭২), নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি (১৯৭২-১৯৭৩) ও সভাপতি (১৯৭৪-১৯৭৭), নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য (১৯৮৩-১৯৮৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক। তিনি ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুড়দুড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প গঠন করে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬ দফা, ১১ দফা, ১৯৬৯ আন্দোলন, ১৯৭০ সালের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মুক্তি সংঘ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি। লালপুর পাবলিক লাইব্রেরির উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা আদম আলী বৃত্তি কমিটির সভাপতি। তাঁর লেখা লালপুরের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও গল্প তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন নাটোরের লালপুরের পিস কমিটির রেজুলেশন বই খুলনাস্থ গণহত্যা-নির্যাতন সংগ্রহশালা ও যাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের (মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন) নিকট নিজ বাড়িতে হস্তান্তর করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি মো. আকিয়াব হোসেন।
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শে মসজিদ সংলগ্ন পিস কমিটির ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা করেন। সে সময় পিস কমিটির রেজুলেশন বহি ও নির্যাতনে জন্য পাকবাহিনীর ইনচার্জ লে. সালাহ উদ্দিনের চাবুক উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ৩০ পৃষ্ঠার রেজুলেশ বহি ও চাবুক দীর্ঘ ৫০ বছর সংরক্ষণ করেন মুক্তিযোদ্ধা আকিয়াব হোসেন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য