দেশের প্রেক্ষাগৃহে আজ থেকে মুক্তি পেয়েছে গুণী নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’। সাধারণ দর্শকেরা দেখার আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ছবিটির একটি প্রিমিয়ার শোর আয়োজন করা হয়।
ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দেখতে হাজির
হয়েছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি, গণমাধ্যমের কর্মী ও ছবির কলাকুশলীরা। ছবি দেখতে
আসা দর্শকদের প্রায় সবাই মুগ্ধতা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হয়েছেন।
তাঁদের বেশির ভাগের মন্তব্য, বহুদিন পর অসাধারণ একটা ছবি দেখলাম। পুরো
কৃতিত্ব নির্মাতার।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার
এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর পারে একটি বাড়িতে ‘স্বপ্নজাল’ ছবির শুটিং শুরু
হয়। প্রথমেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান পরীমনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইয়াশ
রোহান এবং আরও কয়েকজন শিল্পী।
ইয়াশ রোহান গিয়াস উদ্দিন সেলিমের
‘মনপুরা’ ছবিটি পরীমনি দেখেছেন নয়বার। প্রেক্ষাগৃহে বসে এমন একটি ছবিতে
অভিনয়ের স্বপ্নও দেখতেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন যে সত্যি হবে, তা তিনি ভাবতেও
পারেননি। আর গতকাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ছবিটি দেখার পরপর আবেগ ধরে
রাখতে না পেরে অনেকক্ষণ কেঁদেছেন। ছবি দেখা শেষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে
গিয়ে পরীমনি বলেছেন, ‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না, কেমন লাগছে। না না, আমি
বুঝতে পারছি কিন্তু বোঝাতে পারছি না।’ ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটিকে কীভাবে দেখছেন?
এমন প্রশ্নে পরীমনি বলেন, ‘এই ছবি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি কে, আমাকে
কী করতে হবে। আড়াইটা বছর “স্বপ্নজাল” নিয়ে আমার লম্বা একটা ভ্রমণ ছিল,
শুভ্রাকে নিয়ে, শুভ্রার জীবন নিয়ে। ভেবেছি, আজকে ছবিটি দেখার পর হয়তো এই
জীবনের শেষ হবে। কিন্তু তা হয়নি। আমি শুভ্রাতেই থাকব। এটা অনেক বেশি
আনন্দের।’
গিয়াস
উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটি দেখতে সস্ত্রীক এসেছিলেন অভিনেতা,
চিত্রশিল্পী, লেখক ও নির্দেশক আফজাল হোসেন। ছবি দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময়
তিনি তাঁর মুগ্ধতার কথা বললেন এভাবেই, ‘ছবিটি আমার ভালো লেগেছে। এই ছবির
অনেকগুলো ইতিবাচক দিক আছে। অভিনয়শিল্পীদের সবাই তো সবার জায়গা থেকে খুব
ভালো অভিনয় করেছে।’
নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামও ‘স্বপ্নজাল’-এ মুগ্ধ। অল্প
কথায় বললেন, ‘দারুণ একটা ছবি বানিয়েছে সেলিম। এই ছবি দেখে সবাই মুগ্ধ
হবেই। এমন ছবির কথা দর্শকের জানাতে হবে।’
নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ
‘স্বপ্নজাল’ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ছবিটি দেখার পর কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক
তাঁর ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘“মনপুরা”খ্যাত গিয়াস উদ্দিন সেলিমের
দ্বিতীয় ছবি “স্বপ্নজাল”। আমার খুব ভালো লেগেছে। শেষ হওয়ার পর অনেকক্ষণ
বসে ছিলাম আমি। এই ছবি “মনপুরা”র চেয়ে অনেক ভালো ছবি। আমার মনে হয়েছে,
একটা সম্পূর্ণ সুন্দর নিটোল ছবি দেখলাম। অভিনয়েও সবাই দারুণ। সবচেয়ে ভালো
ফজলুর রহমান বাবু। আশ্চর্য ভালো পরীমনি, ইয়াশ, মিশা সওদাগর, শহীদুল আলম
সাচ্চু, ইরেশ যাকের। এই ছবি লোকে বারবার দেখবে।’
প্রিমিয়ার শোতে
অভিনেত্রী সুইটি এসেছিলেন স্বামী রিপনকে সঙ্গে নিয়ে। ছবি দেখা শেষে তিনি
প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তো ভীষণ ভালো লেগেছে। নিজেদের জায়গা থেকে সবাই খুব
ভালো অভিনয় করেছেন।’ তবে তিনি ‘স্বপ্নজাল’ ছবিকে কোনোভাবেই এই পরিচালকের
প্রথম ছবি ‘মনপুরা’র সঙ্গে মেলাতে চান না। বললেন, ‘একেকটা ছবির ধরন একেক
রকম, “মনপুরা” তার মতোন। ছবিতে আমরা আসলে গল্প দেখি না, যা “স্বপ্নজাল”-এ
দারুণভাবে পেয়েছি। শেষ দৃশ্য পর্যন্ত গল্পটা আমাদের সব দর্শককে বসিয়ে
রেখেছে।’
গুলশান
থেকে ছবিটি দেখতে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ব্যাংকার ফিরোজ আহমেদ। তিনি
বলেন, ‘আমি চাইব বাংলাদেশে এ রকম ছবি হোক। এই ধরনের ছবি বাংলা ছবির
জয়ধ্বনি। খুবই চমৎকার একটা ছবি। পরীমনি নাম শুনেছি এত দিন, আজ তাঁর ছবি
দেখলাম, দারুণ অভিনয় করেছে। অপু চরিত্রে ইয়াশ রোহান একেবারেই নতুন, সেও তার
জাত চিনিয়েছে। ফজলুর রহমান বাবু তো দুর্দান্ত। সবকিছুর শেষে পরিচালক গিয়াস
উদ্দিন সেলিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা, এমন একটা ছবি দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।’
অভিনয়শিল্পী
শিল্পী সরকার অপু ও নরেশ ভূঁইয়ার সন্তান ইয়াশ রোহান ‘স্বপ্নজাল’ ছবিতে
নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রথম দর্শনে তিনি দর্শকের ভালোবাসা আদায় করে
নিয়েছেন। দর্শকের এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ অপু চরিত্রের ইয়াশ। সবার কাছে তাঁর
অনুরোধ, ছবিটি যেন প্রেক্ষাগৃহে এসে সবাই দেখেন। বললেন, ‘আমরা সবাই এই ছবির
জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। আপনারা এসে দেখলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
আমরা একটা ভালো কাজ, ভালো গল্প বলার চেষ্টা করেছি।’
বেঙ্গল ক্রিয়েশনস
প্রযোজিত ও অলটাইম নিবেদিত ‘স্বপ্নজাল’ ছবির প্রিমিয়ার শো শুরুর আগে একটি
আনুষ্ঠানিকতা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ক্রিয়েশনসের চেয়ারম্যান আবুল
খায়ের, পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম প্রমুখ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য