লন্ডনে শাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের বনভোজন
লন্ডনে শাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের বনভোজন
সাজু আহমেদ, লন্ডন।।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২২ আগস্ট ২০২১) লন্ডনের অদূরে ইলফোর্ডে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ভ্যালেনটাইন পার্কের মনোরম পরিবেশে সাস্টিয়ান ইউকের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী এই বার্ষিক বনভোজনে বিভিন্ন খেলাধূলার পাশাপাশি বাঙালির চিরাচরিত আড্ডা, শিশু কিশোরদের পদচারণা আর অতীত স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত ছিলেন সবাই। পোর্টসমাউথ, রিডিং, মিল্টন কিংস, লন্ডন শহরে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবারসহ প্রায় দেড় শতাধিক সদস্য অংশ নেন। বেলা ১১ টায় বনভোজন শুরু হয়। সকাল থেকেই লন্ডনসহ পার্শ্ববর্তী শহরগুলোর বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণকারীরা পার্কে জড়ো হতে থাকেন।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর প্রকোপ গত দু’বছরে গোটা বিশ্বকে যেমন তাক লাগিয়েছে, তেমনিভাবে অজানা এই শত্রুর আক্রমণে অনেকেই হারিয়েছেন তাদের প্রাণপ্রিয় স্বজনদের। লকডাউনে আবদ্ধ ঘরে থাকতে থাকতে মানুষ একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েও তা পারেনি। তবে যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনের ততপরতা আর যুক্তরাজ্য সরকারের আন্তরিকতা আর নাগরিকদের সহযোগিতায় রাজ্যের বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হওয়ায় দীর্ঘদিন পর একে অপরের সাথে সপরিবারে দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। ফলে গোটা অনুষ্ঠান এক আবেগঘন পরিবেশে রূপ নেয়।
বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সবার মাঝে সকালের নাস্তা বিতরণ করা হয়। এরপর শুরু হয় মূল পর্ব। এ পর্বে ছিল ছোট ও বড়দের খেলাধুলা, বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের দৌড় প্রতিযোগিতা, শারীরিক কসরত, মহিলাদের পিলোপাসসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতা। এতে সাবেক শিক্ষার্থীদের পরিবার ও সন্তানেরা অংশগ্রহণ করেন। ছোটদের অংশগ্রহণে খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্ট ছিল আনন্দমুখর। এতে বাড়তি আনন্দ এনে দেয় সিলেটি ধামাইল গানের সুরে সুরে মহিলাদের পিলোপাস। খেলাধুলা শেষে দেশীয়ভাবে পরিবেশন হয় দুপুরের খাবার।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর পার্কের মনোরম পরিবেশে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যায়য়ের বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ফটোসেশন ও পরিচয় পর্ব । বিকেলে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন কামরুল কাবেরী ও তৌহিদ চৌধুরী ।
পুরো অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন, সাজু আহমেদ, জাবেদ চৌধুরী, মুহম্মদ নুরুজ্জামান, শাফিন, শাহিন, আহসান সাদি, শরীফ উদ্দিন, রোজী, লাকি, মুশতাক, সোহান, রুমান, আখলাক, ফাহিম, অন্তু, আসিফ, আব্দুস সালাম, মাহবুব, আরিফ, জাবেদ, মইনুল, রাজ্জাক, বেলাল, ডালিয়া, রুমি, আজিম, সাজু, জুহেদ, শিপন, আশরাফ বাবলু, দারা, আবুল হুসেইন, ইকবাল মুক্তাদির, সুশান্ত, ফয়সাল আজম, রবি, ইশরাত, ইশতিয়াক, রাশেদ, জাহিদ, তালহা প্রমুখ।
বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রুযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২০ একরের একসময়ের রাজা, রানী ও তাদের পরিবারের দিনব্যাপী এক বিশাল মিলনমেলা ঘটেছিলো লন্ডনের ইলফোর্ডের ভ্যালেনটাইন পার্কের বিশাল প্রান্তরে গতকাল রবিবার. পার্কের লেক, ফুল আর পাখিদের কলকাকলির সাথে সাস্টিয়ানদের আড্ডা ছিল সারাদিন।
দুইবার তারিখ পিছানোর পর ও এত কম সময়ের নোটিশ এ প্রায় ১২০ জনের উপস্তিতি আমাকে বিস্মিত করেছে কিন্তূ আবার মনে করে দিয়েছে আমেরিকান সিজিপিস সিস্টেমে পড়ালেখা করা ছাত্রকালীন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার কথা। মাত্র ৪/ ৫ জনের কঠোর পরিশ্রমের ফসল এই অনুষ্ঠানে রোদ ও মেঘের লুকোচুরির বেশরম আবহাওয়ার মধ্যে ও কি ছিলো না অনুষ্টানে।
সিলেটি ধামাইল গানের সুরে সুরে মহিলাদের খেলা ছিল, ছেলেদের দৌড় ছিল আর ছিল বাচ্চাদের শারীরিক কসরতের প্রতিযোগিতা, পোর্টসমাউথ থেকে রিডিং, লন্ডন থেকে মিল্টন কিন্স বাদ পড়েনি কোন সাস্টিয়ান। তবুও আমরা মিস করেছি আমাদের প্রতিবারের যাত্রী বেলাল ভাই, মুর্শেদ ভাই, রাজ্জাক ভাই, খালেদ নূর ভাই, মুজিব ভাই, তারেক ভাই, বন্ধু বাবলু, রনি, বার্মিংহাম এর শাহীন ভাই, বেডফোর্ডের মতিন ভাই আর বন্ধু সঞ্জিতকে।
কাবেরী ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী, আমাদের ভাবির নিজ হাতে বানাবো ১২০ টি সমসা, সাফিন ভাই আর নুরুজ্জামান ভাইদের চিকেন নাগেট, সাফিন ভাই এর কয়েকশত সিদ্ধ ডিম (করোনা প্রতিরোধে কার্যকরী!), শিরিন তান্দুরীর বিরানি আর তারকা ডাল মুখে লেগে আছে এখনো। আহারে এভাবে যদি প্রতিদিন ভ্যালেনটাইন পার্কে ভ্যালেনটাইনদের মেলা বসত আর সাথে বেহেস্তি খাবার জোটত!
আমাদের ত্রি-রত্ন আমাদের অলটাইম ভিপি কাবেরী ভাই, সদা ইউকে সাস্টিয়ানদের একাউন্ট এর দায়িত্বে থাকা জাবেদ ভাই আর তৌহিদ ভাই ছাড়া অনুষ্ঠান শুধু আমাদের কল্পনাতেই থাকতো!
আরিফ ভাই এর গাড়ি দুর্ঘটনাতে দুমড়ে মুচড়ে গেলো, কিন্তূ সব ফেলে তিনি আমাদের প্রোগ্রামে হাজির ভাবি নিয়ে, এত প্রেম এত মায়া সাস্টিয়ান ভাই ব্রাদারদের একে অপরের প্রতি, এগুলো কোথায় রাখবো!
আমাদের সপ্তম ব্যাচের রুমি তার বোন আরেক সাস্টিয়ান রুজি আপাকে নিয়ে প্রতিবার হাজির হয়। আমাদের আরেক ব্যাচমেট মোস্তাক ও বরাবর হাজির, তবে সোসিওলজি আর সোশ্যাল ওয়ার্কারদের আধিপত্ত বরাবরের মতো বেশি! সবচেয়ে বড় পাওনা ছিল লাকির নামকরা স্বামী কবি ও চ্যানেল এস-এর সংবাদ পাঠক তৌহিদ শাকিল ভাইকে নিয়ে আসা ও আমাদের শাহীন ভাই এর প্রথম আসা সাস্টিয়ান ইউকের অনুষ্ঠানে।
চ্যানেল এস-এর আমার গাও এর উপস্থাপক সাফিন ভাই এর সাথে ছিলাম অনেকক্ষন, নুরুজ্জামান ভাই, জুবেদ ভাই, আশরাফ ভাই, চির তরুণ ফাহিম ও পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখা সুশান্ত দা, অন্তূ, আসিফ, সোহান আর ক্যামেরার কারসাজিতে অপরূপ ছবি তোলার কারিগর রুমান ভাই, আমাদের বাংলা স্কুল এর শিক্ষক বিলেতে পিএইচডি করতে আসা মাহবুব, আমি কাকে রেখে কার কথা বলবো, এ যে সবাই আত্মার আত্মীয়!!
শেষ হয়ে ও হইলো না শেষ, অনুষ্ঠান শেষে ও আড্ডা চললো গোধুলী বেলা পর্যন্ত! আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ, কোন কিছুই বাদ গেলো না, সমাজ, সংসার, ধর্ম, বিলেত ও বাংলাদেশের জীবনমান, সব কিছু উদ্ধার করা হলো, আড্ডার ফাঁকে দেখলাম কাবেরী ভাই উনার ছেলেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন, সকালে গতবার অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আখলাককে দেখলাম এবার তার বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।
সাস্টিয়ানদের পরিবারের প্রতি যে একাগ্রতা এর জন্যই শেষ আড্ডায় কথা হলো আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এদেশের বৈরী পরিবেশ যেমন প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ অথবা আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ও পেশাদারিত্ব-এর উন্নতিতে আমাদের নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করার কথা।
আমাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, গবেষক, শিক্ষক কিংবা প্রতিশ্রুতিশীল তরুনের তো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন সবাইকে একসাথে করে একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কারণ এই বিলেত-ই আমাদের বেশিরভাগেরই হবে শেষ ঠিকানা...
তাই আসুন যারা এখনো স্কটল্যান্ড থেকে কর্নওয়াল, পোর্টসমাউথ থেকে বোর্নমাউথ, আইল অফ ডগস থেকে আইল অফ ম্যান-এ বসবাস করেন, তারা সাস্টিয়ান ইউকের ছায়া তলে এক হই, বীণে সুতোয় মালা গাঁথি, বিলেতে গড়ে তুলি এক টুকরো শাবিপ্রবি, যা অন্য সবার চেয়ে ভিন্ন, সবার থেকে অনন্য!!
অনুষ্ঠানের শেষে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাবেক শিক্ষার্থী কামরুল কাবেরী ও তৌহিদ চৌধুরী বনভোজন অনুষ্ঠান সফল করায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের পুনর্মিলনী আয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য