logo
news image

এক আশা জাগানিয়া গল্প

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম :
আজ অন্য ধরনের এক আশা জাগানিয়া গল্প বলতে চাই। যে গল্প আমাদের মনে আশার আলো দেখিয়ে অনেক উৎসাহ জোগাবে। একজন আর একজনের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা বাড়াবে। সর্বোপরি সমাজে এর ভালো প্রভাব ও প্রতিফলন ঘটিয়ে উদাহরণ হয়ে থাকবে। অনেককে বাবা-মায়ের  সেবা করতে উৎসাহিত করবে।
রায়হান সাহেব একজন ভালো ও সফল ব্যবসায়ী। বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। থাকেন শহরতলীতে অবস্থিত  নিজ বাড়িতে। স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে এবং রহিম নামের এক পালিত ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। ছেলে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেয়ে ২ টি স্হানীয় কলেজে পড়াশোনা করে। রহিম যদিও পালিত পুত্র তথাপি এ বাড়িতে সে ছেলের মর্যাদা নিয়ে বসবাস করে। কেউ কখনও তাকে আলাদা মনে করেনি এবং করবেও না।
অনেকদিন আগে রায়হান সাহেব রহিমকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন।  তখন তার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। ছেলেটিকে কে বা কাহারা রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ছেলেটিকে দেখে রায়হান সাহেবের মনে খুব মায়া লাগে। ইতোমধ্যে খবর শুনে স্হানীয় থানা থেকে পুলিশ এলে রায়হান সাহেব তাদের কাছে লিখিত দিয়ে রহিমকে বাড়িতে এনে অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সাথে লালনপালন করতে থাকেন। রহিম নামটি তারই দেয়া। কখনও তাকে নিজের ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা দেখেননি বা ভাবেননি। বরং অনাথ বলে রহিমকে একটু বেশি আদর করেছেন এবং এখনও  করেন। রহিমও কখনও নিজেকে আলাদা না ভেবে , বরং নিজেকে রায়হান সাহেবের ছেলে হিসেবে ভেবেছে। রায়হান সাহেব অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে রহিমকেও লেখাপড়া শিখিয়েছেন। রহিম মাধ্যমিক পাশ করার পর এখন কলেজে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায়।
এভাবেই রায়হান সাহেবের দিনগুলো সুখ শান্তির মধ্যেই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ রায়হান সাহেব করোনায় আক্রান্ত হলে ছেলেমেয়েসহ রহিম বিচলিত হয়ে পড়ে। রহিমসহ সব ছেলেমেয়ে বাবার পাশে দাঁড়ায়। সবাই তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু রহিম কোনো ভাইবোনকে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে সে একাই রায়হান সাহেবকে হাসপাতালে নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করে সেখানেই থেকে যায়।
রায়হান সাহেবের সুযোগ্য ছেলেমেয়েরা পর্যায়ক্রমে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বাবাকে দেখতে গেলেও রহিম তাদেরকে সেখানে বেশিক্ষন থাকতে দেয়না। কারন এতে যদি তারা করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। রায়হান সাহেবের ছেলেমেয়েরাও রহিমকে একনাগাড়ে সেখানে না থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু রহিম নাছোড়বান্দা। সে বাবাকে ছেড়ে কিছুতেই হাসপাতাল থেকে যাবেনা। এধরণের কর্মকাণ্ডের ভুয়সী প্রশংসা করে ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের লোকজন বলেন যে, সত্যি রহিম সাহেব ভাগ্যবান ব্যক্তি। এযুগে এধরনের ছেলেমেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যেখানে অনেক ছেলেমেয়েরা রোগাক্রান্ত বাবাকে ফেলে পালিয়ে যায় কিংবা দেখতে আসেনা সেখানে রায়হান সাহেবের ছেলেমেয়েরা এর ব্যতিক্রম।
১৪ দিন চিকিৎসার পর রায়হান সাহেব সুস্থ হলে রহিম হাসিমুখে তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরে। রহিমের মুখের এ হাসি করোনাকে জয় করার হাসি। এ হাসির নেই কোনো সীমানা। বাড়িতে বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ। কিন্তু  সচেতন রহিম রায়হান সাহেবকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার কথা পুনরায় স্মরন করিয়ে দেয়। রহিম এবং ছেলেমেয়েদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় রায়হান সাহেবের দু' চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। মনে মনে ভাবে সত্যি তিনি একজন ভাগ্যবান পিতা, যার কি-না ৫ জন সুযোগ্য সুসন্তান রয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top