logo
news image

গেজেটের আগে ফলাফল মুখে মুখে

‘এটা খুবই দুঃখের, কষ্টের। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে আমরা কাজ করেছি। কিন্তু তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আগে সবাই জেনে গেল! আমি ভীষণ অপমান বোধ করছি।’ বললেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ আসরের জুরিবোর্ডের অন্যতম সদস্য সুজেয় শ্যাম। আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ বিজয়ীদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশের আগেই সবার মুখে মুখে ফিরছে। এমনটা প্রায়ই ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ আসরের প্রস্তাবিত বিজয়ীদের নাম দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করেও প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি কাঙ্ক্ষিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন এই আসরের জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান। এখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (সচিবালয়) অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এই কর্মকর্তা তখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র বিভাগ) ছিলেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গুণী সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকবারই দেখি, গেজেট প্রকাশের আগেই ফলাফল সবাই জেনে যায়। এসব শুনে আমার লজ্জা লাগে। কতটুকু কষ্ট পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর জুরিবোর্ডের সদস্য হিসেবে থাকব কি না, তা নিয়ে ভাবছি।’

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ আসরের জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ও সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মিলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদের কাছে ফলাফল হস্তান্তর করে দিই। আমি যেহেতু এই মন্ত্রণালয়ে এখন নেই, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়।’

জানা গেছে, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ আসরে ৩০টি ছবি দেখেছে জুরিবোর্ড। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে জুরিবোর্ডের সদস্যরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সেরাদের নির্বাচিত করা হয়। ছবি দেখার পর বিচারকদের রায়ের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয় এ বছর জানুয়ারি মাসে।

মনজুরুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি যতক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি, তখন পর্যন্ত কোথাও এ বিষয়ে কোনো কিছু জানাজানি হয়নি। এ জন্য আমি বলব, আমার পুরো দল নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর সততার সঙ্গে কাজটি করেছে। সম্মানিত বিচারকদের সবাই ওয়াদা করেছিলেন, পুরস্কারের বিষয়ে তাঁরা একটি শব্দ কোথাও বলবেন না। সবাই তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। পরে কোথায়, কী হয়েছে, তা অনুসন্ধানের ব্যাপার। বিচারকদের রায় আমরা সিলগালা করে জানুয়ারিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের কাছে হস্তান্তর করি। আমাদের সামনেই তিনি সিলগালা করা সেই ফলাফল লকারে রেখে দেন। তবে এভাবে জনসমক্ষে ফলাফল চলে আসা বড় অপরাধ। সরকারপ্রধান অনুমোদনের পর এই ফলাফল সবার জানার কথা; যা একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কারের ক্ষেত্রে হয়।’

ফলাফল ফাঁসের ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, প্রজ্ঞাপন (গেজেট) জারি হওয়ার আগেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের নাম সংবাদমাধ্যমে চলে আসার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এটা কারও কাম্য নয়।

মনজুরুর রহমান ও সুজেয় শ্যাম ছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এবারের জুরিবোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন আলমগীর, সুবর্ণা মুস্তাফা, খুরশিদ আলম, মতিন রহমান, অধ্যাপক সফিউল আলম, মঈনুদ্দিন খালেদ, পঙ্কজ পালিত ও আবু মুসা দেবু।

দেশীয় চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে শিগগিরই ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ প্রদান করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ২০১৬ সালে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিভাগে সেরাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’-এর এই বৈঠকের সংক্ষিপ্ত রূপ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে এটা কোনোভাবেই হওয়ার কথা নয়। হয়তো মন্ত্রণালয়ের কেউ প্রকাশ করেছেন, নয়তো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ বৈঠক থেকে কেউ তথ্য ফাঁস করেছেন। এটা অবশ্যই অন্যায়।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আয়োজনে একাধিকবার জুরিবোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন বরেণ্য সংগীতশিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিচারকেরা তাঁদের রায় দেওয়ার পর দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ে গেলে ফলাফল পর্যন্ত বদলে যায়; যা খুবই দুঃখজনক।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top