গ্রাহকদের ব্যাপক ছাড় দেওয়ায় গত বছরের সেপ্টম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ কমেছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। বার্ষিক হিসেবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মূলধন ঘাটতি বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। যেসব ব্যাংকে এই ঋণ বেশি, সেসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। গত বছর ডিসেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বছরের পর বছর ধরে ঘুরেফিরে সরকারি ব্যাংকগুলোয় মূলধন ঘাটতি থাকছে। এসব ব্যাংকে জনগণের করের টাকা থেকে মূলধনের জোগানও দেওয়া হচ্ছে। এর পরও মূলধন ঘাটতি বেড়েই চলেছে। গত বছরের জুনে ঘাটতিতে ছিল ৭ ব্যাংকের। সেপ্টেম্বরের হিসেবে ৯ ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়ায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী তিন মাস শেষে ডিসেম্বর ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা না বাড়লেও ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা।
হলমার্কসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির সঙ্গে ঘটনার অকুস্থল সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ৫ হাজার ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণের নামে অর্থ লুটে নেওয়া বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। রূপালীর ৬৩৭ কোটি, জনতা ব্যাংকের ১৬১ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৮১৩ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৮ ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ও বিডিবিএলের কোনো ঘাটতি নেই। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ব্যাংকের ১ হাজার ৪৯৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। এদিকে কার্যক্রম শুরুর মাত্র চার বছরের মাথায় সংকটে পড়া ফারমার্স ব্যাংক সেপ্টেম্বরে সর্বপ্রথম মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৭৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৩ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার বা মালিকদের জোগান দেওয়া অর্থই মূলধন হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন রাখায় সামগ্রিক খাতে মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর ৯০ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা মূলধন রাখার প্রয়োজন ছিল। ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ৯৪ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সামগ্রিকভাবে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এই হিসাবে ব্যাংকিং খাতে মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করেছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। আগের বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক মন্তব্য