অস্তিত্ব সংকটে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রম
ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, নাটোর (লালপুর)
অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শিক্ষাক্রম। সমন্বিত উপবৃত্তির আওয়তায় শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। সেইসাথে এর বিরূপ প্রভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) ২০২১ সালে ভর্তিকৃত ৬ষ্ঠ শ্রেণি এবং ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ১১শ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত উপবৃত্তিযোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তথ্য অনলাইনে এন্ট্রি এবং প্রেরণ ২৩ এপ্রিল ২০২১ শেষ হচ্ছে।
অপর দিকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি সেল জানায়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহের (ডিপ্লোমা ও ভোকেশনাল) শিক্ষাক্রমের কারিগরি উপবৃত্তি সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের ডাটা এন্ট্রির সময় ৩০ এপ্রিল ২০২১ তারিখ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আকরাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এই শিক্ষাক্রম কারিগরি বিষয় সংশ্লিষ্ট নয় বলে বন্ধ দিতে চাচ্ছে। আবার নাম পরিবর্তন করে কারিগরি সংশ্লিষ্ট নামকরণ করতে চাচ্ছে। কখনোবা এমপিও নীতিমালা থেকে শিক্ষাক্রমকে বাদ দিচ্ছে। প্রতিটি ধাপে আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায়ে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। একই শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্বৈতনীতি কাম্য নয়। উপবৃত্তি কার্যক্রম থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখা বাদ পড়ায় প্রতিষ্ঠানের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। সেইসাথে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেবে। বিষটি দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তিনি।
নাটোর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কলিম উদ্দিন জানান, এখন বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের অধীন ডিপ্লোমা এবং ভোকেশনাল শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যক্রম চলছে। ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রম কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন হলেও ‘কম্পিউটার অপারেশন’ স্পেশালাইজেশন ছাড়া বাকি চারটিতে (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, হিসাব রক্ষণ, ব্যাংকিং ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন) টেকনিক্যালের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি আরো বলেন, এই শিক্ষাক্রমে ‘সেক্রেটারিয়াল সায়েন্স’ স্পেশালাইজেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা’ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ‘শিক্ষাক্রম’ ও ‘স্পেশালাইজেশন’-এর নাম পরিবর্তন করে কারিগরি বিষয়সমুহ সম্পৃক্ত করা হবে। শিঘ্রই শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দুর হবে বলে আশ্বাস দেন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (বিএম) মো. আব্দুল হান্নান বলেন, বিএম শিক্ষাক্রমকে আমরা ভালবাসি। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শিক্ষাক্রমের সিলেবাস সাধারণ শিক্ষার আলোকে প্রণয়ন করায় একটা মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। বর্তমানে কারিগরি বিষয়সমুহের আলোকে পাঠ্যক্রমকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিয়য়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটির সভায় উপস্থাপন এবং অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিবর্তিত সিলেবাসের কার্যকারিতা বাস্তবায়িত হলে কেউ আর ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রমকে কারিগরি নয় বলতে পারবে না। আমরা খুব শিঘ্রই এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি সেল এ ব্যাপারে জানেন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য