logo
news image

সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবে

জমিন আহমেদ।।
তিনি আমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘বাবা মাকে কষ্ট দিওনা আর সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল ২০২১) হঠাৎ করেই ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে যাই। তেমন কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। ভাবলাম আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব সিরাজুল ইসলাম মুরাদ স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে আসি। স্যার অফিসে নিয়ে গিয়ে বসালেন। চা নাস্তা করালেন। বেশ জ্ঞানগর্ভ কিছু উপদেশমূলক কথা বললেন। আবার বন্ধুসুলভ অনেক সময় দিলেন। মুরাদ স্যার কতোটা বড় মনের একজন মানুষ তা বলে বুঝানো যাবে না। শুধু একটা উদাহরণ দেই, স্যার আমার সামনে বসেই কাকে যেন ফোন করে উনার দুজন গরীব মেধাবী ছাত্রের জন্য কাজের সুপারিশ/অনুরোধ করলেন। একজন শিক্ষক কতোটা আন্তরিক হলে ছাত্রদের নিয়ে এভাবে ভাবতে পারেন সেটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এবার আসি আসল কথায়। প্রিয় মুরাদ স্যার আমাকে কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দিলেন। আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হলাম। স্যারের নাম ড. জাকিরুল হক। মুরাদ স্যার অধ্যক্ষ মহোদয়কে বললেন, স্যার জমিন খুব কষ্ট করে এখানে এসেছে, চা বিক্রি, মানুষের দোকানে ঝাড়ুদারের কাজ ইত্যাদি। অধ্যক্ষ মহোদয় খুব খুশি হলেন। গল্প করতে করতেই হঠাৎ করেই তিনি আমাকে বললেন, ‘জমিন কাছে এসো, তোমাকে একটু আদর করতে ইচ্ছে করছে।’ আমি কাছে গেলাম। স্যার হঠাৎ-ই আমাকে উনার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন। স্যার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললেন। স্যার কোনো কথা বলতে পারছেন না। আর আমি তো পুরোটাই হতবাক। তারপর স্যার উচ্চ স্বরে কেঁদে ফেললেন। আমাকে বললেন, ‘পৃথিবীর নিয়ম একদিকে ভাঙবে একদিকে গড়বে। আজ তোমার জীবনে গড়ার সময় এসেছে। তুমি একদিন অনেক বড় কিছু করবে। তিনি আরো বললেন, ‘বাবা মা কে কখনো কষ্ট দিও না। তাদের খুব যত্নে রেখো। আর সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবে।’
আমি শুধু বাকরুদ্ধ হইনি, চিন্তা শক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলাম। একজন মানুষ একজন অধ্যক্ষ হয়। কিন্তু একজন অধ্যক্ষ মহোদয় এতো বড় মাপের একজন মানুষ হয়! একজন অধ্যক্ষ এতো বড় হৃদয়ের অধিকারী হয়! একজন অধ্যক্ষ এতো সাধারণে এতো অসাধারণ হয়! আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, কি করবো। হঠাৎ করেই দেখি আমার মনের অজান্তেই আমার মাথা নত হয়ে গিয়েছে। দু’চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়াচ্ছে। আমার হাত দুটো কখন যে অধ্যক্ষ মহোদয়ের সোনার পা দু’টোর সোনালী ধূলো নিতে পড়ে আছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কেবলই মনে হচ্ছিল এই মহান ব্যাক্তির পায়ের প্রতিটি ধূলিকনা আমার জীবনের এক অনন্য আশীর্বাদ।
আমি চোখ দুটো মুছে নিলাম। মুখে কোনো কথা বলতে পারছি না। স্যারকে বললাম, একটি ছবি উঠাতে পারি আপনার সাথে? স্যার সাথে সাথে পিয়নকে ডাকলেন। তারপর এভাবেই জড়িয়ে ধরে ছবি তুললেন এই ক্ষুদ্র একজন নবীন কর্মকর্তার সাথে। কেবল গর্ববোধই হচ্ছে না, নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
স্যারের লেখা দুটি বই উপহার হিসেবে পেলাম। সেই সাথে আগামীর পথচলার সুন্দর এক রাস্তা দেখতে পেলাম স্যারের মধ্যে।
আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। সুস্থ্য, সুন্দর ও কল্যানকর হোক আপনার জীবন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top