logo
news image

আহারে জীবন

মুক্তার হোসেন।।
ছবি গুলি দেখে নিজস্ব ভাবনায় যা এসেছে, তাই লিখেছি। আহারে জীবন!
ছোটবেলায় দেখতাম মাদ্রাসার ছোট বাচ্চারা বাড়িতে এসে চাল চেয়ে বেড়াত। ছোট ছিলাম, অবাক হয়ে ভাবতাম ছোট বাচ্চারা কেন এভাবে নিয়ম করে চাল চাইতো। পরে অবশ্য জেনেছি, গ্রামে গ্রামে এভাবে চাল তুলেই তাদের আহারের ব্যবস্থা হতো। খুব মায়া লাগতো বাচ্চাগুলোর জন্য।
আমার নিজ গ্রামে একটা মাদ্রাসা  আছে। গ্রামের সকলে মিলে সুন্দর এইসব শিশুদের যত্ন করে। আমিও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করি। অন্তত তারা যেন ভালো সুবিধা পায়, ভালো মানুষ হয়ে উঠে সেদিকটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।  
আমরা আমাদের আত্মীয়দের বাচ্চারা কে কোন স্কুলে পড়ে তার খোঁজ তো নিয়মিতই নেই। বছর শেষে কেমন রেজাল্ট করল তা জানতে চাই। কার বাচ্চা লেখাপড়ায় এগিয়ে আর কার বাচ্চা একটু পিছিয়ে তা নিয়ে আলাপও করি। মাদ্রাসা কিন্তু  আমার, আপনার বাড়ির  পাশেই আছে। কিন্তু কখনো কি মাদ্রাসার এতিম বাচ্চাগুলার কথা আমরা ভাবি? কখনো গিয়ে দেখিও না যে কী করছে বাচ্চাগুলো। কী শিখছে তারা। তাদের জীবনমান কেমন।
সাধারণত আমাদের দেশের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের বাচ্চাদেরই আবাসিক মাদ্রাসাগুলাতে পাঠানো হয়। শহরে হয়তো চাল তুলার প্রথা নাই, তবে মাদ্রাসার জন্য টাকা তুলতে তো দেখা যায়। বাচ্চাগুলাকে জীবনের শুরুতেই ভিক্ষাবৃত্তি শেখানো হয়। এই বাচ্চাগুলো বড় হয়ে কী করবে? শুরুতেই তারা অন্যের কাছে হাত পাতা শেখে বড় হচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে এই বাচ্চাগুলাকে অন্য কোনো শিক্ষা সঠিকভাবে দেওয়া হয় কিনা সেই খোঁজ আমরা কতজন নেই? ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী হওয়া দরকার আছে তবে শুধু এতটুকুতে হবে না।
তারা এই সমাজে খাপ খাইয়ে চলতে হলে তাদের অন্য সাধারণ শিক্ষায়ও শিক্ষিত হতে হবে।
ছোটবেলায় যদি তাদের বেজমেন্ট গড়ে দেওয়া না হয় তবে সে সুযোগ আর থাকে না। এরা যখন পড়ালেখা করে অথচ দেখে এই পড়ালেখা দিয়ে সমাজের মূলধারায় তারা চলতে পারছে না তখনই তারা সমাজকে তাদের মতো তৈরি করার তাগিদ অনুভব করে। তারা জানে এই শিক্ষা দিয়ে সমাজে কোনো চাকরি-বাকরি পাবে না। তাই সমাজই তাদের মতো পরিবর্তন করে দিতে চায়।
বলাইবাহুল্য তাদের এ পরিবর্তন চিন্তা অগ্রসরগামীতা নয় বরং পশ্চাতপদতা। এ থেকেই আসে উগ্রবাদীতা।
আমরা প্রায়ই মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের খবর পাই। সেইসব শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ, প্রতিকার করতে আমরা কতটা সোচ্চার? নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। এই সমাজের একটা অংশ এমন অবহেলা অযত্নে বেড়ে উঠছে- অথচ আমাদের কোনো বিকার নেই।  
আমাদের মাঝে যদি এই বাচ্চাগুলার জন্য কিছু করার মনমানসিকতা থাকতো, তাহলে হয়তো আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টিই হতো না। শুধু নিজের পরিবারের কথা না ভেবে এলাকার মানুষের কথাও যদি প্রত্যেকে একটু করেও ভাবতাম তাহলে আজ মাদ্রাসাগুলার পরিবেশ, শিক্ষা ব্যবস্থা সবই উন্নত করতে পারতাম। তাহলে হয়তো আজ এই পরিস্থিতিতেও দেশ পড়তো না।
মানুষ এগিয়ে আসলে, সমাজ আগাবে, সমাজ এগিয়ে আসলে রাষ্ট্র  তথা সরকারের পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।

* মুক্তার হোসেন: আইনজীবী ও সাংবাদিক।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top