লালপুরে কৃতী মানুষের কথা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি।।
নাটোরের লালপুরের সাদ আহমেদ রচিত গবেষণাধর্মী ‘কৃতী মানুষের কথা’ নামক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন, ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুল।
বাগাতিপাড়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পালের সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল। আলোচক ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায়, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান সাজাহান এবং গ্রন্থের লেখক সাদ আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন, কবি শাহিন মোমিন, নবেসুমি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পিন্টু, কবি সেতু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আব্দুল আলিম।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি বলেন, লালপুর-বাগাতিপাড়া এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃতী ব্যক্তিদের জীবন ও কর্মের উপর গবেষণালব্ধ জীবনচরিত তুলে ধরেছেন, যা আমাদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে সমুজ্বল হয়ে থাকবে। লেখক দীর্ঘ নিরলস পরিশ্রম করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বইটি সকলকে সংগ্রহ করে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। পরিশেষে তিনি গ্রন্থকারকে এ দুর্লভ এ গ্রন্থ রচনায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বলেন, দেশের এই সংকট মূহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বইটি প্রকাশের জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানান। লেখক কখনও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বই লেখেন না। তিনি বইটি নিজে পড়ে এবং অন্যকে উপহার দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। বক্তব্যের সুচনাতে লেখক বইটির বিশেষত্ব তুলে ধরেন। তিনি জানান, গ্রন্থটি সাতটি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে। সেনযুগ, নবাবী যুগ এবং সাম্প্রতিক সময়ের পণ্ডিত, বিপ্লবী, ধর্মপ্রচারক, রাজনীতিক, লেখক-সাহিত্যিক এবং গবেষক ও প্রাবন্ধিকদের কীর্তিকর্ম ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এটি মূলত লালপুর-চারঘাট তথা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কীর্তিমান মানুষের জীবন ও কর্মভিত্তিক একটি মৌলিক গ্রন্থ। সাধারণত এ জাতীয় স্থানীয় বিষয়ের ওপর খুব কম লেখাই দেখা যায়। জীবনালেখ্য হলেও এতে প্রাচীন ইতিহাসের বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও দুর্লভ উপাদান রয়েছে, যা এ প্রজন্মের পাঠকদের সুদূর অতীতে অবগাহন করতে সাহায্য করবে। তারা জানতে পারবে অতীত কালের কীর্তিমানদের গৌরবগাঁথা, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং জনপদের সংস্কৃতি সম্পর্কে।
বইটি নতুন প্রজন্মসহ ইতিহাসমনস্ক যে কোনো পাঠকের কাছে এই গ্রন্থ বিশেষভাবে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন শিক্ষাতথ্য প্রকাশনী। ইতোপূর্বে লেখকের ‘লালপুরে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা’ নামে একটি ইতিহাস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ’বাঙ্গালির বংশ পদবি ও সম্প্রদায়ের পরিচয়’ এবং ‘নীলকর বিদ্রোহ’সহ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
সাদ আহমেদ ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ লালপুর উপজেলার বিলশলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল জলিল মোল্লা এবং মাতা সামছুন্নাহার খাতুন। পিতামহ ফয়েজ উদ্দিন মোল্লা বিলমাড়িয়া নীলবিদ্রোহের একজন অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি মনেপ্রাণে লালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সাদ আহমেদ পাকশী রেলওয়ে কলেজের প্রভাষক এবং নাটোরের লালপুর থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক শহীদ সাগর’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, কলাম লেখক এবং স্থানীয় ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষক।
সাম্প্রতিক মন্তব্য