logo
news image

ফুটবলের জয় অবশেষে

ক্রীড়া প্রতিবেদক : জাতীয় দলে হঠাৎ গোলের সুরভি! গত এক দশকেরও বেশি সময় কেটেছে গোলে গোলমালে,সুরভিত ফুটবলের নায়ক তৌহিদুল আলম, তাঁর হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ ৪-৩ গোলে হারিয়েছে থাই প্রিমিয়ার লিগের ব্যাংকক গ্লাস এফসিকে। আগের জয়টি দুই বছর আগে, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল ৪-২ গোলে। যদিও এটি প্র্যাকটিস ম্যাচ বলে সেটির সঙ্গে তুলনা হতে পারে না। তাতে কী, হারের মিছিল শেষে ফুটবল জয় পেয়েছে—এটাই তো বড় খবর। আগের প্র্যাকটিস ম্যাচে রাচাবুরি এফসির বিপক্ষে লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি, হেরে যায় শেষ মিনিটের গোলে। থাই লিগে ওই দলের তুলনায় পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকা ব্যাংকক গ্লাস স্বাভাবিকভাবে কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলা শুরু করে অন্য মেজাজে। ৬ মিনিটে লিড নেয় বাংলাদেশ সুফিলের গোলে। তবে বেশিক্ষণ টেকেনি এই লিড। থাইল্যান্ড ম্যাচে ফেরার পর সুফিল ইনজুরড হয়ে মাঠ ছেড়ে তৌহিদুল আলমকে নামার সুযোগ করে দেন। এর পরই বদলি ফরোয়ার্ড খেলেন ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ। ১৮ মিনিটে মামুন মিয়া কাউন্টারে ওঠেন ডান দিক ধরে, বলটা বক্সে ফেলতেই তৌহিদ আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জমা করে দিয়ে এগিয়ে নেন দলকে। ৪২ মিনিটে ব্যবধান ৩-১ করেন তিনি বাঁ-দিক থেকে পাঠানো জাফর ইকবালের নিচু ক্রসে পা ছুঁইয়ে। বিরতির পর প্রচণ্ড চাপের মুখে দুই গোল হজম করে বাংলাদেশ এবং ম্যাচে ফেরে ব্যাংকক গ্লাস। এতটা এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে! গতি-প্রকৃতি সেরকম মনে হলেও ঠিক ৮৭ মিনিটে আবার ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন তৌহিদ। আরেকবার গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল প্রতিপক্ষের জালে পৌঁছে দিয়ে অভাবনীয় এক জয় উপহার দিলেন। অনেক দিন পর বিদেশের মাঠে জয়ের সুখবর দিল দেশের ফুটবল। সঙ্গে একটি হ্যাটট্রিক! দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপুও বিস্মিত হয়েছেন তৌহিদের ফিনিশ করা দেখে, ‘সবুজ (তৌহিদ) নেমেছিল সুফিলের জায়গায়। তার বড় গুণ হলো সুযোগ কাজে লাগাতে পারা। কাউন্টারের জন্য সে সব সময় তৈরি থেকেছে এবং কোনো ভুল না করেই ফিনিশ করতে পেরেছে। এটাই একটা স্ট্রাইকারের বড় গুণ। এর আগে জাতীয় দলে সর্বশেষ হ্যাটট্রিক কবে কিংবা কে করেছে, সেটা আমি মনে করতে পারছি না।

গত দুই দশক ধরে গোলের আকাল চলছিল ফুটবলে। জাতীয় দল তো বটেই, এমনকি ক্লাব ফুটবলে দেশি স্ট্রাইকারদের পায়ে গোল সংকট চরমে। এমন সংকটের মধ্যেও একজনের পায়ে এত গোল দেখে বিষম খাওয়ার অবস্থা! বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার মনে করেন, সুযোগ কাজে লাগাতে পারার কারণে ম্যাচটি অনন্য হয়ে গেছে, ‘কোচ একটা ছকের মধ্যে খেলাচ্ছেন। সেখানে আক্রমণ থামানো এবং আক্রমণে ওঠার দুটি ভাগ থাকে। আগের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ভালোভাবে ঠেকালেও আমরা নিজেদের পাওয়া সুযোগগুলো ফিনিশ করতে পারিনি। এই ম্যাচে দুটির সমন্বয় হয়েছে খুব ভালো আর তাই ম্যাচটি আমরা জিতেছি।’ অর্থাৎ ডিফেন্স আর কাউন্টার অ্যাটাকের খেলায় জিতেছে বাংলাদেশ।এই জয়ে স্বাভাবিকভাবে অ্যান্ড্রু ওর্ড খুশি। দলে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগ হয়েছে, যা কিনা লাওসের বিপক্ষে অফিশিয়াল ম্যাচে খুব ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তিন গোল হজম করার অর্থ ডিফেন্স আবার আলোচনায়। রূপুর ব্যাখ্যায় গোল এড়ানো কঠিন ছিল, ‘দ্বিতীয়ার্ধে ওরা অনেক চাপ দিয়েছে। দুটি গোল ওরা আদায় করে নিয়েছে আর একটি হয়তো গোলরক্ষক সোহেল (শহীদুল আলম) সেভ করার মতো ছিল। তবে তার তিনটি ভালো সেভ আছে ম্যাচে।’ আগের ম্যাচে আশরাফুল রানা পোস্ট আগলালেও কাল ছিলেন শহীদুল। আসলে দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচে কোচ ২৩ জনের পুরো স্কোয়াডকে খেলিয়েছেন। দেখেছেন সামর্থ্য এবং দুর্বলতা। সুতরাং অ্যান্ড্রু ওর্ডের মনে নিশ্চিতভাবেই তৈরি হয়ে আছে একটি সেরা একাদশ। এটির চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে আগামী ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। ভুটান-লজ্জার ১৭ মাস পর ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top