logo
news image

ছাত্রছাত্রী ধারনা সৃজনশীল মানে বই না পড়া

অনেক ছাত্রছাত্রী মনে করে সৃজনশীল মানে বই না পড়া। পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে নিজের ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই লেখা। যে যা লিখবে সেটাই সঠিক। বই না পড়েও পাস করা যায়। সৃজনশীলের কারণে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ যেমন কমেছে তেমনি কমেছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির সংখ্যা। ক্লাস করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করে না অনেকে। কথাগুলো বললেন সাতক্ষীরা জেলার সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক।সৃজনশীল বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজের যত শিক্ষকের সাথে আলোচনা করা হয়েছে তাদের সবার বক্তব্য প্রায় একই ধরনের। তাদের অভিমত- শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হয়েছে। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করলেন, সৃজনশীল ট্রেনিংয়ে এবং পরীক্ষায় খাতা দেখা বিষয়ে বোর্ডের বৈঠকে শিক্ষকদের যেসব নির্দেশনা দেয়া হয় তা খুবই দুঃখজনক। ট্রেনিংয়ে ও খাতা দেখা বিষয়ে বোর্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়- খাতায় যা-ই লিখুক নম্বর দিতে হবে। খাতায় কিছু লিখেছে কি না দেখবেন। ভেতরে কী আছে তা দেখা যাবে না। মূল কথা হলো একটা কিছু লিখলেই নম্বর দিতে হবে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।

একজন শিক্ষক বিস্ময় প্রকাশ করে জানালেন, এমনকি খাতায় ভুল-শুদ্ধ যা লিখুক নম্বর দিতে হবে বলেও সৃজনশীল ট্রেনিংয়ের সময় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাদের। কেউ যদি বাংলাদেশ বানান ‘বংলাদেশ’ লেখে তবু নম্বর কাটা যাবে না বলে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, যে শুদ্ধ লিখেছে তাকেও যে নম্বর দিতে হবে আর যে অশুদ্ধ বানান লিখেছে তাকেও যদি সেই একই নম্বর দিতে হয় তাহলে ভালো আর মন্দের পার্থক্য থাকল কিভাবে।শিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলেন, সৃজনশীলের নামে একটি অথর্ব অন্তঃসারশূন্য প্রজন্ম তৈরি করা হচ্ছে।কোনো কোনো পরীক্ষার প্রশ্ন বিশেষ করে সমাপনীতে এমনভাবে করা হয় যে, সারা বছর কেউ বই না পড়লেও ৭০-এর ওপরেও নম্বর পাওয়া যায়। উদ্দীপক থেকেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে পরীক্ষার্থীরা।

আর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেহেতু নির্দেশনা রয়েছে খাতায় কিছু একটা লিখলেই নম্বর দিতে হবে তাই এইচএসসি শিক্ষার্থীরা প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রশ্নের উত্তরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উদ্দীপকটি তুলে দেয়। অনেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে যা মনে চায় তাই লিখে পাতা ভরে। কারণ আসলে সৃজনশীল কী তা বোঝে না তারা অনেকে।শিক্ষকদের সাথে আলোচনাকালে একজন শিক্ষক অভিযোগ করে বললেন, যারা সৃজনশীল ট্রেনিং দেয় তাদেরও অনেকে ঠিকমতো বোঝে না। তাদের এক কথা, যে যা লিখবে সেটাই সৃজনশীল। আর নম্বর দিতে হবে।বগুড়া শেরপুর সীমাবাড়ি মহিলা কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা বুঝে গেছে বই পড়া লাগবে না। অনেকের ধারণা সৃজনশীল মানে যে যা লিখবে সেটাই সঠিক। তারা বইও পড়তে চায় না আর ক্লাসেও আসতে চায় না। এটা খুব ভয়ানক প্রবণতা তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একজন পরীক্ষক বলেন, খাতা দেখলে বোঝা যায় আসলে সৃজনশীলের নামে কী হচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে যা হচ্ছে তাতে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা গবেষণাগারে পরিণত করা হয়েছে। এভাবে শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে জাতিটাকেই শেষ পর্যন্ত শেষ করে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা বলতে আসলে আর কিছু নেই।শিক্ষকেরা বলেন, সৃজনশীলের কারণে লেখাপড়ার প্রবণতা এবং ধাঁচ নষ্ট হয়ে গেছে। যার মনে যা চাইবে সেটা সে লিখবে এবং এটাকেই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক বলে কিছু নেই। যে যা লিখবে সেটাই সঠিক এমন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে শিক্ষকদের।প্রাইমারি ও হাইস্কুল পর্যায়ের অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে তারাও অভিযোগ করেছেন, তাদের সন্তানদের অনেকে মূল বই পড়তে চায় না। তাদের অভিযোগ বই থেকে প্রশ্ন আসে না। বই পড়ে লাভ কী? তাই তারা গাইড পড়ে। অনেক স্কুলে শিক্ষকেরাও ক্লাসে গাইড পড়ান।

কিশোরগঞ্জ সদরে অবস্থিত আলহাজ শামসুদ্দীন ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুমাইয়া আক্তার ঝর্ণা বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গণিতের সৃজনশীল। একটি গণিতের সমাধান করতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু সেখানে এক মিনিটে তার উত্তর কিভাবে লিখবে শিক্ষার্থীরা?অনেক শিক্ষক বলেন, প্রতি বছর প্রশ্ন ফাঁসের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন সারা বছর বই না পড়ে আর ক্লাসে না এসে ধান্ধায় থাকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিভাবে সংগ্রহ করা যায়। শুধু শিক্ষার্থীরা নয় অনেক অভিভাবকও একই চেষ্টায় থাকেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top