নেক্সট ৭৫: ভবিষ্যৎ আমাদের প্রত্যেকের উপরই নির্ভর করছে
স্বপন কুমার কুন্ডু:
বিশ্বের ৫ টি মহাদেশের বরেণ্য বৈজ্ঞানকি, সুধীজন এবং যুবপ্রতিনিধিরা একত্র হয়ে নানা বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলার উপায় খোজার চেষ্টা করেছেন।
ভবিষ্যৎ বিশ্ব সভ্যতার জন্য প্রধানতম প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার উপায় প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর “নেক্সট ৭৫” শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলন ” এর আয়োজন করে সোচি (রাশিয়া)। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও স্বল্পতা, অতিরিক্ত জনসংখ্যার ঝুকি, নতুন নতুন মহামারি, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা প্রভৃতি ছিলো এ সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয়াবলী। সম্মেলনে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন যে, এসব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ কঠিণতর হওয়ার আগেই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এসবের সমাধান করা সম্ভব।
আজ বিশ্ব খুব দ্রুতই পরিবর্তিত হচ্ছে কিন্তু ইতিবাচক অগ্রগতি তুলনামূলক নিন্মমুখী বিশেষ করে বৈশ্বিক ইকো সিস্টেমের উপর মানুষের প্রভাব খুবই নেতিবাচক। মানবকি এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে গড়তে হলে বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং এগুলোর সমাধান খুজে বের করতে হবে। এটা আমাদের সব প্রজন্মের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব বিশেষ করে আজকের শিক্ষবর্থীরাও এর বাইরেনয়কারণ তারাই আগামী বিশ্বের নীতি নির্ধারক।
সম্মেলনে বিশ্ববরেণ্য পরিবেশবিদ, রোগতত্ববিদ, জীববিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, এবং জ্বালনী প্রকৌশলীরা এসব বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এসব সমস্যব মোকাবিলার কার্যকরী উপায়ের উপর আলোকপাত করেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তেজবির সিং রানা বলেন, “বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ কমাতে ক্ষুধা এবং দারিদ্র মোকাবিলা করা সম্ভব।”
বিশ্ববরেণ্য রোগতত্ত¡বিদ ওয়েইলি তেমোরি উল্লেখ করেন, “পরবর্তী বিশ্বমহামারি কখন আসবে তা কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়, তবে প্রতিটি দেশকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রস্তুত থাকতে হবে যেকোন ধরনের প্রতিকূল বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য।”
“পরিবেশগত হুমকি মোকাবিলায় শুধুমাত্র কার্বণমুক্ত জ্বালানী ব্যবহার করায় একমাত্র সমাধান নয় বরং সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে পারমানবিক জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় কয়লা, বায়ু এবং সৌর বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ভূস্থান করে নিতে পারে”, বলে মতামত থমাস বিøস’র।
নোবেল শান্তিু পুরস্কার বিজয়ী রোডনি জন আলম, বরেণ্য পরিবেশবিদ মিগুয়েল ব্রান্ডো, কার্ল সাফিনা, পরিবেশবিদ ও নৃবিজ্ঞানী জেন মরিস গোডাল প্রমুখ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অস্কার পুরস্কার বিজয়ী বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক অলিভার স্টোন, জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত বারট্রান্ড পিসকার্ড, অভিনেতা ও পরিচালক কোজলভস্কই তাদের আবেগঘন অনুভূতি প্রকাশ করেন।
বিশ্বব্যাপী ৫০০ মেধাবী এবং উদ্যোগী তরুণ-তরুণী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। তাদের সকলেই শুধুমাত্র তথ্যবহুল আলোচনা শুনেছে তা নয় বরং সুযোগ পেয়েছে নিজেদের মতামত প্রদান করার এবং বিশেষজ্ঞদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করার।
“নেক্সট ৭৫” সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্যালেন্ট এন্ড সাকসেস ফাউন্ডেশন এর প্রধান এলিনা সামেলেভা এবং রোসাটম’র মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ।অনুষ্ঠানের শেষে ফলাফল ফলাফল ঘোষনার সময় লিখাচেভ বলেন “পৃথিবীর অনেক দুরবর্তী প্রান্তে কোন সমস্যা হলে দেরিতে হলেও তার প্রভাব আমাদের উপরে পড়বে, যার অর্থ হচ্ছে যে আমাদের সামনের প্রতিকুলতা গুলোকে সম্মিলিত ভাবে সমাধান করতে হবে । পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে আমরা যত্নশীল । আমি নিশ্চিত আজকের সম্মেলন আমাদের আগামী ৭৫ বছরে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে সম্মিলিত ভাবে আমাদের করনীয় নির্ধারনে পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে । আমাদের সুন্দর আগামীর সুচনা হয়ে গেছে এ বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী , এবং ভবিষ্যত পৃথিবী কেমন হবে তা নির্ভর করবে শুধু আমার ও আপনাদের উপরে ।
“নেক্সট ৭৫” কোন কাকতালীয় নাম নয় । পারমানবিক শিল্পের ৭৫ বর্ষ পুর্তি উৎসবের শেষ ও সবচাইতে উজ্জ্বলতম আয়োজন ছিল এটি । এই অনুষ্ঠানের আয়োজক রোসাটম , একটি আন্তর্জাতিক কোম্পনী ও বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান , বিশ্বের আগামী প্রজন্মের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। পরমানু বিজ্ঞানীদের অনেক দূর ভবিষ্যত সম্পর্কে ভাবতে হয় , সমস্ত হুমকি ও প্রতিকুলতা মাথায় রেখে পরবর্তী কয়েক দশকের পরিকল্পনা করতে হয় ।
“নেক্সট ৭৫” সম্মেলনটি সমগ্র বিশ্বের প্রায় ৪০০,৭৭০ জন মানুষ লাইভ দেখেছে , এটিও পৃথিবীর মঙ্গলের জন্যে তাদের একটি অবদান । এই প্রোগ্রামের ধারণকৃত ভিডিও টি রোসাটমের ইউটিউব চ্যানেলে ও ফেসবুক পেইজে সবার জন্যে উন্মুক্ত আছে ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য