মুসলিম উম্মাহর জেগে উঠার প্রতীক্ষায়: একটি প্রামাণিক বিশ্লেষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
একমাত্র ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যতসব অভিযোগ কেন? জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী এমন নানা অভিযোগ? অথচ ইসলামের কট্টর সমালোচক নিন্দুকেরাও বিশ্বসভ্যতায় ইসলাম ও মুসলমানদের অনবদ্য অবদান স্বীকার করেন। মুসলমানরা যে আধুনিক বিজ্ঞানের মূল কারিগর এ বিষয় এখন আর কেউ অস্বীকার করেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন আগ্রাসী যুদ্ধবিগ্রহের একটিরও জনকজননী মুসলিমরা নয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইংল্যান্ড-ফ্রান্স শতবর্ষী যুদ্ধ, কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ- এরকম শতশত যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ ও সম্পদ ধ্বংস হয়েছে কাদের দ্বারা? এসব একটিও মুসলমানদের সৃষ্টি নয়। মুসোলীনি, হিটলালের মতো কোনো নেতাও ইসলাম জন্ম দেয় নি। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ ও হানাহানি বাঁধিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে যার কারিগরও মুসলমানরা নয়। বরং কোটি কোটি মুসলমান এর ফলে সর্বহারায় পরিণত হয়েছেন। তাহলে? অর্থাৎ, এই যদি বাস্তবতা হয় তাহলে বিবেকের দাবী ও প্রশ্ন হলো- ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এতো হিংসা ও মিথ্যা অপবাদের কারণ ও রহস্য কী?
এটি কি এ কারণে যে পৃথিবীর সিংহভাগ সম্পদের মালিকানা মুসলমানদের, বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি সর্বাধিক? মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ অনুযায়ী- আগামী অর্ধ-শতাব্দীর মধ্যে খ্রিস্টধর্ম দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে আসবে, এবং ইসলাম হবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্ম যা বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কারণ খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর চেয়ে দ্বিগুণ হারে ইসলাম অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো- একমাত্র ইসলামই সেক্যুলার ও বস্তুবাদী সমাজবাদ, সুদী অর্থব্যবস্থা, রাজনীতি, শিক্ষা প্রভৃতি বাদ-মতবাদ প্রভৃতিকে সমর্থন করে না। ইসলাম মানুষের সম্মুখে এমন এক ওহিভিত্তিক বিধিব্যবস্থা তুলে ধরে যা কেবল সর্বসাধারণকে এসব ত্রুটিযুক্ত ইজমের শোষণ থেকেই রক্ষা করে না বরং মুষ্টিমেয় স্বার্থভোগীদেরও প্রতিহত করে ও সর্বসাধারণের কাতারে নামিয়ে নিয়ে আসে। এক কথায়, ইসলাম মানববিশ্বকে মানবের দাসত্ব থেকে এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে, জাগতিক সঙ্কীর্ণতা থেকে পরকালীন প্রশস্ততার দিকে এবং বিভিন্ন ধর্মের অনাচার থেকে ইসলামের সুবিচারের দিকে নিয়ে আসার অবিকৃত ও অভ্রান্ত বিধিব্যবস্থা পেশ করে থাকে। অন্য কোনো ধর্ম বা গোষ্ঠীর এই সক্ষমতা নেই। ইসলামের এই যে পরিচয় ও অগ্রযাত্রা তা সেক্যুলার ও বস্তুবাদী শোষণমূলক বিধিব্যবস্থা ও এর ধারক-বাহকদের জন্য সর্বকালেই সবচেয়ে বড় হুমকি। সুতরাং, এ অবস্থায় ইসলাম ও মুসলমানরাই যে একতরফাভাবে অন্যায় অপবাদ ও ষড়যন্ত্রের শিকার হবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে এটি সত্য ও মিথ্যার কিংবা ইসলাম ও অ-ইসলামের পুরনো সংঘাত। আর সত্য তথা ইসলামের অনুশীলনের ওপরই সমাজ ও সভ্যতার স্থিতি-অস্থিতি নির্ভর করছে। এ অবস্থায় আজ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো এই সত্য-মিথ্যার আপন আপন চরিত্র ও পরিণতি বিশ্ববাসীর সম্মুখে প্রমাণ করে দেওয়া। যাতে বস্তুবাদী ও ইসলামি দর্শনের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে মানববিশ্ব নিজের জন্য লাভ-ক্ষতির, গ্রহণ-বর্জনের চূড়ান্ত মীমাংসায় উপনীত হতে এবং বেঁচে যেতে পারে। মুসলমানরাও আজ পথভোলা মুসাফির। এর মাধ্যমে মুসলিম-অমুসলিম উভয়েই যেন নিজ নিজ দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে
জেনে নিতে পারেন।
মুসলিম উম্মাহর জেগে উঠার প্রতীক্ষায়- গ্রন্থে এই মহান কর্মটিই সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন একটি গ্রন্থ কেবল তথ্য-উপাত্ত ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণই পেশ করবে না বরং প্রায়োগিকভাবে ইসলাম ও অ-ইসলামকে প্রমাণ করে দেবে। এ গ্রন্থ ধারাবাহিকভাবে প্রথমত, দেখাবে কীভাবে ইসলাম ষষ্ঠ শতকের মুমূর্ষু মানববিশ্বকে অন্ধকারের দুনিয়া থেকে সভ্যতার আলোর পথে নিয়ে এসেছিল। দ্বিতীয়ত দেখাবে, কোন অবিনাশী ক্ষমতাবলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একনিষ্ট অনুসারীগণ এমন একটি ইসলামি সোনালী সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলেন যার দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত তো দূরের কথা বস্তুবাদী সভ্যতা সেই মানুষই তৈরি করতে পারে নি। তৃতীয়ত, প্রায় আটশত বৎসর সেই সোনালী সভ্যতার হাত ধরে মানবসভ্যতা জ্ঞানে-কর্মে পথ চলেছে- এটিও প্রমাণ করে দিতে হবে। চতুর্থত, দেখাবে যে- এরপর কী কারণে মুসলিম জাতি নেতৃত্বের সকল মঞ্চ থেকে হারিয়ে গিয়ে আজকের দূরবস্থায় পতিত হলেন। পঞ্চমত দেখাবে, নেতৃত্বের শূন্যমঞ্চে যে ইউরোপীয় তথা বস্তুবাদী সভ্যতার অভিষেক হলো তার চরিত্র ও পরিণতি কী? এটি তো দৃশ্যমান যে পৃথিবীর নেতৃত্বের রঙ্গমঞ্চে ইউরোপ তথা বস্তুবাদী সভ্যতা যত বাদ-মতবাদ এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে তার সবই বস্তুবাদ ও নাস্তিকতার অনিবার্য ফল হিসেবে গড়ে ওঠা এবং এ-সবই প্রকৃতিগত কারণে বিশ্বমানবতার স্থায়ী শান্তি ও মুক্তির পথে ইতোমধ্যে চরমভাবে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে এবং জমিনে বহু রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করেছে ও করছে। বস্তুবাদের এই ব্যর্থতা ও কুফল যে অনিবার্য তা এই অধ্যায়ে দলিলসহ প্রমাণ করে দিতে হবে। সর্বশেষ, এ অবস্থায় অনিবার্যরূপে যে চূড়ান্ত প্রশ্ন দেখা দেয় তা হল, বিশ্বমানবতার কাঙ্ক্ষিত শান্তি, নিরাপত্তা ও মুক্তি কাদের হাতে কবে ও কীভাবে পূর্ণ হবে- সর্বশেষ অধ্যায়ে এই মহৎ সমাধানটি দালিলিকভাবে প্রমাণ করে দিতে হবে। এই ধারাবাহিকতায় গ্রন্থের আলোচনাটি এমন আধুনিক দার্শনিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে যাতে ইসলামের সৌন্দর্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিকল্পহীনতা প্রমাণিত হয়ে যায়। ফলে যে কেউ এর সম্মুখে অবনত-মস্তক হতে প্রস্তুত হয়ে যায় ফলে একজন মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ উপকারটি সাধিত হয়।
মুসলিম উম্মাহর জেগে উঠার প্রতীক্ষায়- ড. মোহাম্মদ শামীম খান।
যারা ইসলামকে পছন্দ করেন- এই গ্রন্থ তাদের জন্য; যারা ইসলামকে পছন্দ করেন না- এই গ্রন্থ তাদের জন্য।
প্রাপ্তিস্থান: মাকতাবাতুল মাআরিফ, কুদরত উল্লাহ মার্কেট, সিলেট। ফোন: ০১৭৯১৯০৩৮০৬; মাকতাবাতুল জামিল, আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট, বন্দরবাজার জামে মসজিদ মার্কেট, সিলেট। ফোন: ০১৭১৯৩৫১৫৫৭।
সাম্প্রতিক মন্তব্য