logo
news image

১৮তম ওভারে মোস্তাফিজের ওপরই ভরসা রাখলেন অধিনায়ক

ত্রিদেশীয় সিরিজে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু রান খরচায় ছিলেন সবার ওপরে! তারপরও ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজের ওপরই ভরসা রাখলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ভারত তখন ১৮ বলে ৩৫ রানের দূরত্বে। মোস্তাফিজ কী দারুণভাবেই না অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন! ১৮তম ওভার শেষ হওয়ার পর ধারাভাষ্যকক্ষে সুনীল গাভাস্কারও বললেন, দ্য ফিজ ইজ ব্যাক! ১৮তম ওভারে বল করতে এসে উইকেট মেডেন! একটা রান এসেছিল বটে, তা লেগবাইয়ে। বোলারের খাতায় যা যোগ হয় না।

১৮ বলে ৩৫ লাগে, সেটাকে ১২ বলে ৩৪-এ এনে দিলেন মোস্তাফিজ। বল রুবেলের হাতে। সুযোগ নায়ক হওয়ার। কিন্তু রুবেল নায়ক বানিয়ে দিলেন দিনেশ কার্তিককে! প্রথম তিন বলে দুই ছক্কা এক চার! ডট, দুই, শেষ বলে আবার চার। ওই ওভারেই এল ২২ রান। বৃথা গেল মোস্তাফিজের আগের ছয়-ছয়টি বলের সব শ্রম আর চেষ্টা। বৃথা হয়েছিল রুবেলের আগের ৩ ওভারের পরিশ্রমও, মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়ে বাংলাদেশের আশা তো বাঁচিয়ে রেখেছিলেন রুবেলই।  শেষ ওভারে ১২ রান দরকার, এমন অবস্থায় অনিয়মিত বোলার সৌম্য তবু চেষ্টা করেছিলেন। শেষ বলে ৫ রান দরকার। চার হলেও ম্যাচ টাই। তখন আরেক নাটক হয়তো হতো। সৌম্য বলটা যে খারাপ করেছিলেন তা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ যে ফাইনালে অভিশাপগ্রস্ত হয়েই থাকবে!

অভিষেক সিরিজে রুবেল হতাশ করেছিলেন। তাঁর ওপর চড়াও হয়ে মুরালিধরন অবিশ্বাস্যভাবে শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়েছিলেন। বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট ফাইনালের দুঃখ সেই ২০০৯ সাল থেকেই শুরু। রুবেল এরপর সেই যন্ত্রণা মুছেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নাটকীয় জয় এনে দিয়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ গিয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা রুবেলের এক ওভারে! কিন্তু আজ রুবেল কার্তিকের পাশে ব্র্যাকেটবন্দী হতে চাইলেন।

যেভাবে ম্যাচের মোড় ঘুরেছিল শেষ দিকে, আসুন দেখে নিই। ম্যাচ? একে নাটক বলাই ভালো!

১৭.১ ওভার—০ রান। অফ স্টাম্পের বাইরে খাটো লেংথে বল করলেন মোস্তাফিজ। বিজয় শঙ্কর মিড উইকেট বরাবর ব্যাট চালালেন সজোরে। বল তাঁর ব্যাট ফাঁকি দিয়ে জমা পড়ল উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে।

১৭.২ ওভার—০ রান। এবার অফ স্টাম্পের বাইরে মোস্তাফিজের নিখুঁত লেংথের অফ কাটার। কভার অঞ্চলে সপাটে হাঁকালেন শঙ্কর। কিন্তু মোস্তাফিজের অফ কাটার বুঝতেই পারেননি। বল আবারও তাঁর ব্যাট ফাঁকি দিয়ে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী।

১৭.৩ ওভার—০ রান। এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে তবে ফুল লেংথের ডেলিভারি মোস্তাফিজের। বল উইকেটে ধরে কিছুটা বাঁক খেয়ে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী। ওয়াইডের ব্যর্থ আবেদন শঙ্করের।

১৭.৪ ওভার—০ রান। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের ডেলিভারি মোস্তাফিজের। পয়েন্ট অঞ্চলে স্লাইস করার চেষ্টা করলেন শঙ্কর। কিন্তু আবারও বোকা বনে গেলেন। বল ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না!

১৭.৫ ওভার—১ রান (লেগ বাই)। অফ স্টাম্প বরাবর কিছুটা লাফিয়ে উঠেছিল মোস্তাফিজের লেংথ ডেলিভারি। কিছুটা সরে এসে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টা করলেন শঙ্কর। এবারও বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি। তবে প্রান্ত বদল করতে পারলেন।

১৭.৬ ওভার—আউট! অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ ডেলিভারি মোস্তাফিজের। লং অন অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা করলেন মনীষ পাণ্ডে। বল টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলায় লং অনে সাব্বির রহমানের তালুবন্দী। ভীষণ চাপের মধ্যেও মোস্তাফিজের উইকেট–মেডেন ওভার!

মোস্তাফিজের এই ওভার শেষে ১২ বলে ৩৪ রানের দূরত্বে পিছিয়ে ছিল ভারত। ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে এলেন রুবেল হোসেন। তাঁর এই ওভারে ২২ রান নিয়েছেন দিনেশ কার্তিক। এর মধ্যে ছক্কা দুটি। শেষ ওভারের শেষ বলেও ছক্কা মেরে জিতিয়েছেন দলকে। আসুন জেনে নেই কার্তিক ছক্কা মারলেন যেভাবে—

১৮.১ ওভার— ৬ রান। রুবেলের নিচু ফুল টস ডেলিভারি। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে কার্তিক বল পাঠালেন সীমানার বাইরে। এমন চাপের মুহূর্তে বাজে ডেলিভারি রুবেলের।
১৮.৩ ওভার—৬ রান। স্টাম্প বরাবর কিছুটা ফুল লেংথের ডেলিভারি রুবেলের। কার্তিক স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে আবারও ছক্কা মারলেন! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঠিক এই শট খেলেই বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
১৯.৬ ওভার— ৬ রান। কার্তিকের অবিশ্বাস্য শট! শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান দরকার ছিল ভারতের। সৌম্য সরকার প্রথম পাঁচ বলে দিয়েছেন মাত্র ৭ রান। শেষ বলে ৫ রান দরকার ছিল ভারতের। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের ডেলিভারি ছিল সৌম্যর। কার্তিক অবিশ্বাস্য শক্তি আর নিখুঁত টাইমিংয়ে বল কভার অঞ্চল দিয়ে পাঠালেন সীমানার বাইরে, ফ্ল্যাট সিক্স!

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top