লজ্জা
ড. মির্জা গোলাপ সারোয়ার পিপিএম
ঢাকার আজিমপুর থেকে শান্তিবাগে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে দ্রুত ওঠার সময় ধাক্কা লেগে আসিফ দাঁড়িয়ে থাকা একজন মহিলা যাত্রীর গায়ে পড়ে। তাল সামলাতে না পেরে নীচে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেয়েটিকে অনিচ্ছাকৃতভাবে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। পরিস্থিতি সামলে ওঠে মেয়েটির সে কী রাগ। কোনো কথা না বলে সজোরে আসিফের গালে চড় মারে। ঘটনার আকস্মিকতায় এবং আচমকা চড় খেয়ে আসিফ হতভম্ব হয়ে কিছু বলার অাগেই মেয়েটি অগ্নিমূর্তি ধারন করে বলে, এসব অসভ্য লোকের জন্য বাসে যাওয়াই মুশকিল। এরা যে কোনো অজুহাতে মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার জন্য সূযোগের অপেক্ষায় থাকে। মনে হয় গালে আরেকটি চড় মারি। ছোটলোক কোথাকার। বাসায় মা বোন নেই?
হঠাৎ এধরণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নম্রস্বভাবের আসিফ যতই মেয়েটিকে বোঝাতে চায় ধাক্কায় পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্য এ কাজটি হয়েছে। মেয়েটি ততই ক্ষিপ্ত হয়ে আফিফকে অনর্গল বকাবকি এবং অপমান করতে থাকে। আশে পাশের মহিলা এবং পুরুষ যাত্রীরাও মেয়েটির প্রতি অকুন্ঠ সমথর্ন জানিয়ে আসিফকে দু'কথা শুনিয়ে দেয়।একজন তো বলেই বসে , মেয়ে মানুষ দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা না কী? আসিফ অসহায়ভাবে উত্তপ্ত বাক্যবান হজম করে অপমানে জর্জরিত হতে থাকে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যায়। অনেকেই টিপ্পনী কাটে। কেউবা শিশ বাজিয়ে টিটকারি এবং উপহাস করে।
অপমানের জ্বালায় বাসের মধ্যে আসিফ সারাটা রাস্তায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেই পারেনা। কী জানি আবার যদি তাকে নিয়ে অপমানজনক কথাবার্তা শুরু হয়। মনে মনে ভাবে বাস থেকে নেমে যেতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু রাস্তা যেন ফুরাইতেই চায়না। অজান্তেই মাঝে মাঝে মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হয়। চেহারা দেখে মনে হয় তখনও রাগ থামেনি। চোখে চোখ পড়তেই কটমট করে আসিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখাবয়ব দেখে মনে হয় এখনও তিনি রেগে আছেন। আসিফ দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।
আজকের এই ঘটনার জন্য আসিফের মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায় যা এর আগে তার জীবনে কখনও ঘটেনি। ঘটনার বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র দোষ নেই। মেয়েটি কোনো কিছু না বুঝে অযথা আসিফকে নাস্তানাবুদ করে। হঠাৎ কন্ডাকটর শান্তিবাগ,শান্তিবাগ বলে ডাকতেই আসিফ হাফ ছেড়ে বাঁচে। বাস থামতেই সে দ্রুত নেমে যাত্রী ও মহিলাটির শোন দৃষ্টি হতে নিজেকে রক্ষা করে। বাসটি স্টপেজে তখনও থেমে আছে। আসিফ ভাবে, মনে হয় মেয়েটিসহ বাসের যাত্রীরা তখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে। আসিফ রাস্তা পার হয়ে দ্রুত অাড়ালে গিয়ে পুনরায় অপমানের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে।
আসিফ একটি সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক। ভদ্র এবং নম্র হিসেবে বেশ পরিচিত। কিছুদিন পর পারিবারিকভাবে বিয়ের জন্য বাবা-মা’কে নিয়ে একটি মেয়ে দেখতে যায়। মেয়েটি সেজেগুজে ঘরে প্রবেশ করতেই তাকে দেখে আসিফ চমকে ওঠে।আরে এতো বাসের সেই মেয়েটি। পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্য যাকে সে অনিচ্ছাকৃতভাবে দু'হাতে জড়িয়ে ধরেছিলো। যার কারনে মেয়েটি তার গালে সজোরে চপেটাঘাত করে যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান করেছিলো। মেয়েটিও আসিফের দিকে অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে। চোখে শঙ্কা, তীব্র লজ্জা আর ক্ষমা পাওয়ার সকরুণ ইচ্ছা।
২০ জুলাই ২০২০।
সাম্প্রতিক মন্তব্য