পুলিশি সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন এএসপি আনিছুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পুলিশি সেবাকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে বিরামবিহীন কাজ করে যাচ্ছেন সরাইল সার্কেল-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিছুর রহমান। সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে সপ্তাহের প্রতিদিনই ঘরে বসে সেবা পান, এজন্য ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম বাড়িয়ে একজন পুলিশ অফিসার (এসআই বা এএসআই) প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বসছেন। তার উপস্থিতিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমান্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক বসে অনেক সমস্যার সমাধান করছেন। ফলে এলাকার ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সমস্যায় সাধারণ মানুষকে অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে হচ্ছে না। আর এ ইতিবাচক কাজকে গতিশীল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন এএসপি আনিছুর রহমান। স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের অনেকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, সরাইল উপজেলাকে ৯টি বিট পুলিশিংয়ে ভাগ করে চলছে এ কার্যক্রম। সপ্তাহে একদিন বিট অফিসারদের তদারকির (বিট অফিসে যাওয়া) নিয়ম থাকলেও এএসপি আনিছুর রহমান তার আওতাধীন থানার কর্মকর্তাদের প্রতিদিন এ কর্মকাণ্ডে হাজির হওয়ার নিয়ম করেছেন। এতে মাদক, জুয়া, সন্ত্রাস বন্ধসহ বিভিন্ন অপরাধ কমছে। পাশাপাশি পুলিশের প্রতি বাড়ছে মানুষের আস্থা।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান জানান, পুলিশ বাহিনীর চাকরির সুবাদে তার নানা অভিজ্ঞতাকে এখন সরাইলসহ জেলার আশুগঞ্জ ও নাসিরনগরে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। বিট পুলিশিং-এর সেবা কার্যক্রম এখন পুরোদমে চলছে।
এই কার্যক্রমে নাগরিকরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে জানতে চাইলে সরাইল থানা সূত্র জানায়, ‘ছোটখাটো সমস্যায় নাগরিকদের থানায় আসতে হবে না। বিশেষ করে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বসেই মীমাংসা করে দেওয়া যায়, অযথা পুলিশি সেবার জন্য থানায় আসার প্রয়োজন পড়ে না। আবার অনেককে প্রত্যন্ত এলাকা কিংবা দূর থেকে থানায় আসতে হয়; তাই থানার অফিসাররা এখন প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বসছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন বসার কথা। সরাইল উপজেলায় এই সেবা প্রতিদিন চলছে।
সূত্র আরও জানায়, অনেক সময় ছোটখাটো পারিবারিক দ্বন্দ্ব, স্থানীয় ঝামেলা, ছোটখাটো নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা থাকে। এএসপি আনিছুর রহমানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ও পরামর্শে এসব সমস্যা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বসলে সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকের ভোগান্তিও কমছে। যেগুলো সমাধান হচ্ছে না, সেগুলো থানায় এনে সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ঘরে সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিট পুলিশিং জোরদারের পর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে বলে জানান সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আহমেদ। তিনি বলেন, কোথাও বড় ধরনের সমস্যা নেই। গতানুগতিক যেসব অপরাধ, যেমন- জমিজমা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ছোটখাটো বিরোধ-মারামারি, এসব কিছু আছে। তবে কোনো ঘটনার আগে যদি সেখানে পুলিশের হস্তক্ষেপ হয়ে যায়, তাহলে অপরাধ করার আগে মানুষ দুবার ভাবে।
তবে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষ যদি বিট পুলিশিং সেবাটা পায়, তাহলে এসব মারামারি হয় না বা প্রতিরোধ করা যায়। এ কারণে নাগরিকদের সব সময় আমরা বলছি, কোনো ছোটখাটো ঘটনা হলে আগে আমাদের জানান; যাতে আমরা একটা মীমাংসা করে দিতে পারি; বলেন ওসি নাজমুল আহমেদ।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, এলাকায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম সক্রিয় থাকলে সমাজে ছোটখাটো অপরাধের পাশাপাশি জুয়া ও মাদকের আসর এসব অবাধে চলতে পারবে না। কারণ, বিট পুলিশকে মানুষ সহজে তথ্য জানিয়ে দিতে পারবে। বিট প্রতি অফিসারদের জন্য একটি করে নির্দিষ্ট ফোন নম্বর চালু করেছে পুলিশ। অফিসার বদলি হলেও নম্বর ঠিক থাকবে। যখন যে অফিসার বিটের দায়িত্বে থাকবেন, তিনি এই নম্বর ব্যবহার করবেন। আর ছোটখাটো যেকোনো প্রয়োজনে থানার ওসিকে কল করার দরকার নেই। ওই নম্বরে কল করলেই সেবা পাওয়া যাবে। বিট পুলিশিং-এর মতো ইতিবাচক এই কর্মকাণ্ড সরাইলে আরো গতিশীল করার আহবান জানিয়ে এসব জনপ্রতিনিধিরা জানান, এখানকার থানার ওসিসহ সরাইল সার্কেলের এএসপি আনিছুর রহমান এক্ষেত্রে এখানে যে ভূমিকা রাখছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কাজেই এলাকায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে বিট পুলিশিংয়ের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
সরাইল থানা এলাকার একাধিক বিট অফিসারের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, বিট পুলিশিংয়ে বিটের কর্মকর্তাদের মনিটরিং করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিট অফিসারদের জবাবদিহির বিষয়ে তারা জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যখন কোনো ভুক্তভোগী ফোন করে, তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি বিট অফিসারকে ফোন করেছিলেন কি না। এতে সহজে সেবা পাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষ জানতে পারে। পুনরায় যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ আসে, তাহলে বিট অফিসার দায়বদ্ধ হবেন। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পুনরায় ফোন আসা মানে বিট অফিসার ঠিকমতো কাজ করছেন না।’
সরাইল থানা এলাকায় কর্মরত এসব বিট অফিসাররা জানান, এখানকার বিট পুলিশিং কার্যক্রম গতিশীল করতে ওসি স্যারের পাশাপাশি এএসপি আনিছুর রহমান স্যার দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি সবসময়ই প্রতিটি বিটের কার্যক্রমের খোঁজখবর রাখছেন। এ-সংক্রান্ত ব্যানার গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছেন। আবার যারা বিট অফিসে বা ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসছে তাদের মোবাইল ফোনে নম্বর দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।
বিট অফিসাররা বলেন, কোনো অপরাধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটনের আগেই আমরা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাব এবং তাদের জান-মাল রক্ষার পাশাপাশি পুলিশি সেবা দেব। কোনো ঘটনা ঘটার পর কী ব্যবস্থা নেব এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি না। ঘরে ঘরে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়া, সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশভীতি দূর করা এবং জনগণ ও পুলিশের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছি। এতে দুর্নীতির সুযোগ কমার পাশাপাশি পুলিশি সেবাটা সহজেই মানুষের কাছে চলে যাবে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য