logo
news image

১৭০-১৮০ রান তাসকিনের চাওয়া

বিশ ওভারের খেলায় ঠিক কত রান নিরাপদ এই প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারবেন না। কিছুদিন আগেই তো নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে প্রায় আড়াই শর কাছাকাছি রান তাড়া করে জিতল ডেভিড ওয়ার্নারের দল। ঢাকার মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি ইনিংস গড়ার পরও তো ম্যাচটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফির প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বোলাররা পাননি লড়াইয়ের পুঁজি। তাহলে স্কোরবোর্ডে ঠিক কত রান হলে বাংলাদেশ পারবে লড়াই জমিয়ে তুলতে? তাসকিন আহমেদ এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ‘আড়াই শ নয়, দুই শ নয়, ব্যাটসম্যানরা যদি ১৭০ থেকে ১৮০ রানের একটা পুঁজিও বোর্ডে জমা করে আসতে পারেন, তাহলেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবেন বোলাররা।’

৫৫টি ডট বল করেছেন ভারতের বোলাররা। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিষিক্ত শংকর যাদব জানিয়ে গেলেন, দলের পরিকল্পনাই ছিল অফস্টাম্পের বাইরে ক্রমাগত ইয়র্কার বল করা। তবে তারা কতটা সেই পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে অল্পতে আটকে ফেলেছিলেন আর কতটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যের অভাবে, সেটা খালি চোখেই দেখা গেছে ম্যাচে। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা শুধু চেষ্টা করে গেছেন বাউন্ডারি হাঁকাতে, মনোযোগ দেননি এক রান করে নিয়ে রানের চাকাটা সচল রাখতে। যার ফল হচ্ছে গোটা ইনিংসে ৫৫টি ডট বল।তাসকিন নিজে বোলার হয়েও বুঝতে পারছেন ভুলটা, ‘আমাদের ২৫-৩০টি রান কম হয়ে গেছে। এত কম রান নিয়ে লড়াই করা মুশকিল, কোনো না কোনো দিকে রানটা হয়েই যায়।’ নিয়মিত বিরতিতে যদি উইকেট না পড়ত, ব্যাটসম্যানরা যদি এতগুলো বলে রান করতে ব্যর্থ না হতেন, তাহলে হয়তো খেলার ফলটা অন্য রকমই হতে পারত বলে বিশ্বাস তাসকিনের। তাই আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সতীর্থদের কাছে আরেকটু বেশি রান চাইছেন এই ডানহাতি পেসার, ‘এই উইকেটে ১৭০ থেকে ১৮০ রান তাড়া করাটা খুব বেশি কঠিন নয়। আমাদের কালকের (পরশু) ম্যাচে আরো রান করা উচিত ছিল। ব্যাটসম্যানরা যদি ভালো করতে পারে আর আমরা যদি আঁটসাঁট বোলিং করতে পারি, তাহলে খেলার ফলটা হয়তো আমাদের দিকে আসতে পারে।’ তাসকিনই জানালেন, ব্যাটসম্যানরা রান করতে না পারাতেই ভারতের নতুন বোলাররাও বল করেছে আরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে, যেটা তাদের দিয়েছে বাড়তি সুবিধা, ‘টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী মানসিকতাটা অনেক বেশি থাকে। সেখানে একটা বলে কোনো রান দিতে না পারলে পরের বলটা করতে বোলিং মার্কে যেতে একটা স্বস্তি হয়। ছয় খাওয়ার পর যেমন উল্টোটা হয়, আবার একটা ছয় খাব কি না, এ রকম একটা দ্বিধা কাজ করে সেটাই প্রেরণা জুগিয়েছে জয়দেব উনাদকাট-শার্দুল ঠাকুরদের।

এখন নিজেরা কিভাবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের এভাবে আটকে রাখতে পারেন, সেই প্রচেষ্টার প্রস্তুতির কথা জানা গেল তাসকিনের কাছে, ‘আমরা খুব জোরালো প্রস্তুতিই নিয়েছি দেশে। কোর্টনি ওয়ালশের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ক্যাম্প হয়েছে, যেখানে স্পট বোলিং নিয়ে কাজ করা হয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা ভালো দল, দেশে দুটি ম্যাচে তারা আমাদের হারিয়েছে। তাদের সঙ্গে জিততে হলে আমাদের খুবই ভালো খেলতে হবে।’ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সাফল্য কম বলে খেলার দৈর্ঘ্য কমে এলেই মানটা কমে যাবে, এমনটা মনে করেন না তাসকিন। জোর দিয়েই বললেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা সবশেষ কয়েকটা সিরিজ ধরে ভালো খেলছি না, সেই তুলনায় ওয়ানডেতে পারফরম্যান্সটা ভালো হচ্ছে তবে টি-টোয়েন্টিতেও কিন্তু ২০১৬-র এশিয়া কাপ ও আরো কয়েকটি ম্যাচে ভালো করেছিলাম। আসলে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো করতে না পারায় প্রশ্নটা সামনে চলে এসেছে।’

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অজুহাত দিতেন টি-টোয়েন্টি খেলার অনভ্যস্ততা নিয়ে। দীর্ঘদিন পর পর খেলা হওয়াতেই নাকি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ম্যাচ হাত থেকে ফসকে যায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নিয়মিত মাঠে গড়ানোর পর সেই অজুহাত দেওয়ার উপায় নেই, তখন সামনে চলে এসেছে ক্রিস গেইল-ডেভিড ওয়ার্নারের মতো শারীরিক শক্তিসম্পন্ন ক্রিকেটারের অভাব। ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এমন অনুযোগ আর প্রত্যাশা না করে সোজাসাপটা বলে দিলেন, জেতানোর মতো রান বোর্ডে জমা করতে পারলেই তৈরি হবে জয়ের সম্ভাবনা। আর তেমনটা না হলে বল হাতে খুব বেশি কিছু করার নেই বোলারদের, ‘আমাদের ব্যাটিং আর বোলিংটা একসঙ্গে ভালো হচ্ছে না। আমাদের ধারাবাহিকভাবে দুটি জায়গাতেই ভালো করতে হবে। কাল (পরশু) রুবেল ভাই, মুস্তাফিজ চমৎকার বল করেছে। ১৪০ থেকে ১৫০ রান হলেও আমরা বোলাররা জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতাম। কিন্তু উইকেট এতটাই ফ্ল্যাট যে কোনো না কোনোভাবে রান হয়েই যায়।’

কিছুদিন আগেই অবশ্য ব্যাটসম্যানরা ১৭০ না আরো ২৩টা রান বেশি করে দিয়েছিলেন ঢাকার মাঠে। কিন্তু সেটাও আগলে রাখতে পারেননি রুবেল-মুস্তাফিজরা। তাসকিন তখন জাতীয় দলের বাইরে। এবার তো তিনি যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। ব্যাটসম্যানরা যদি লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়, সেটা আগলে রাখতে পারবেন কি তাসকিন? শ্রীলঙ্কার ফ্লাইটে ওঠার আগে ঘরোয়া লিগে তাসকিনের পারফরম্যান্স আর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের বোলিং তো বলছে, মিছে প্রতিশ্রুতি নয়, দৃঢ় সংকল্পই আছে তাঁর মনে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top