logo
news image

স্মরণ: প্রফেসর হাবিবুর রহমান

আব্দুস সামাদ।।
ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করে নিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে ফিরে আসলেন প্রফেসর হাবিবুর রহমান। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের একটি কোর্স পড়ানোর দায়িত্ব নিলেন স্যার। মহাউৎসাহে আমি ক্লাসে উপস্থিত হই। সমসাময়িক সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে স্যার ঢোকার আগেই হাজির হই আর পূরোটা সময় ক্লাসে বসে থাকি। চার-পাঁচদিন ক্লাস করে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়ি আমি। পরক্ষণেই ভাবি, নিশ্চয় আমি কোথাও ধরতে পারছি না, না হলে এই লিজেন্ডারি প্রফেসরের ক্লাস করে কেনো হতাশ হবো?
পরের ক্লাসগুলোতে আরও মনোযোগী হয়ে উঠলাম। আমার ভুল ভাঙলো সহসাই। স্যার ক্লাসের পূরোটা সময় তার অভিজ্ঞতা থেকে নানান গল্পের অবতারণা করতেন। শেষের কয়েক মিনিটে সবগুলো গল্পের সাথে কোর্সের বিষয়বস্তুর সংযোগ ঘটাতেন। বুঝতে পারলাম, আমি শেষের দিকটায় মনোযোগী না হওয়াতে আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলাম। স্যার আমাদেরকে পড়িয়েছিলেন, "সোস্যাল লাইফ থ্রো লিটারেচার" নামের একটা কোর্স। এই কোর্সটিতে আমি এতই উপভোগ করেছিলাম যে, স্যারের এই কোর্সের আলোচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমি একটা বিশাল লেখা লিখে ফেলেছি গত তিন বছরে। যেটার একটা অংশ বই হিসেবে আসবে আগামী বইমেলায়। এরকম একজন শিক্ষক পাওয়া একজীবনের সৌভাগ্য।
স্যার যখন প্রয়াত হন, তখন আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোস্যাল ওয়ার্ক এসোসিয়েশনের জিএস ছিলাম। স্যারের মৃত্যুতে আমরা দিনব্যাপী তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমাদের বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষক স্যারের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তাদের কাছ থেকে স্যারের নানান অমর কীর্তি সম্পর্কে জেনেছিলাম।
প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ ২০০৬ সালের ২৭ জুলাই সিলেটে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রফেসর হাবিবুর রহমান ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যান বিষয়ে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রথম শ্রেনীতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে স্কটল্যান্ড এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও ইয়ুথ স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৬৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রফেসর হাবিবুর রহমান ১৯৯২ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডীন এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর হাবিবুর রহমান। তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সমাজকর্ম শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমির অজীবন সদস্য ছিলেন।
প্রফেসর হাবিবুর রহমান ১৯৯৭ সালের ২০ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান। একটানা ২০০২ সালের পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০২ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহন করেন। তিনি বেসরকারী সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রফেসর হাবিবুর রহমান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, লন্ডন থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক কমিনিটি ডেভেলপমেন্ট এর বাংলাদেশ করেসপন্ডেন্ট, ভারত থেকে প্রকাশিত সোসিওলজিক্যাল প্রসপেক্টিভ, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল সোস্যাল ওয়ার্ক জার্নালের বুক রিভিউ এডিটর ছিলেন। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সাস্ট স্টাডিজ এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন।
স্যারের প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top