logo
news image

বাংগালীর সচেতনতাবোধ এবং করোনাকালীন অভিজ্ঞতা

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল।।
বেশ কয়েক-মাস যাবৎ সারা পৃথিবীর বনি আদম করোনা ভাইরাসের কাছে আত্মসমর্পন করে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দিত্ব বরণ করে এ থেকে বাঁচার প্রানপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এত অল্পসময়ে সবকিছুকে থামিয়ে দেয়ার অদৃশ্য ক্ষমতা কোন ভাইরাসের বা মরণব্যাধির উপস্থিতি সাম্প্রতিক অতীতে এ ধরায় দৃশ্যমান হয়নি। যদিও নিকট অতীতে ইবোলা, সার্স,  মার্স ডেঙ্গু ও ইন্ফ্লুয়েঞ্জা প্রতিনিয়তই হানা দিচ্ছে পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে কিন্তু সারাবিশ্বে এর বিস্তার না ঘটায় এগুলোর সর্বত্র প্রভাব দেখা যায়নি। বিশেষত এ ভাইরাসসমুহের অঞ্চল ভিত্তিক প্রভাব থাকলেও বৈশ্বিক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
করোনা ভাইরাসের হামলায় ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী তিন লক্ষের ও অধিক মানুষ না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে। শুরুতে এ ভাইরাস চীনে আঘাত হানলেও পরবর্তীতে ইতালী, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সে এর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে। কালক্রমে অতি অল্পসময়ে সারা দুনিয়া এর আগ্রাসী থাবা দেখতে পায়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর বিস্তার ঘটতে থাকে, এ থেকে আমাদের উপমহাদেশও নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারেনি। এ ভাইরাসের কোন টীকা ও ঔষধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিশ্বব্যাপী লকডাউন, আইসোলেশন, হোমকোয়ারেন্টাইন, বার বার হাত ধোয়া এবং শারীরিক দূরত্বের মোড়কে সামাজিক দূরত্ব ইত্যকার প্রতিরোধমুলক ব্যব¯হার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় চীনের সীমান্তবর্তী দেশ হওয়া সত্তে¦ও ভিয়েতনাম আপাত এ ছোবল থেকে নিজেদের বাঁচাতে পেরেছে। স্বা¯হ্যবিধি ও সচেতনতা মেনে সারা বিশ্ব ধীরেধীরে স্বাভাবিক হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
যদিও বাংলাদেশ সরকার করোনার গুরুত্ব ও ভয়াবহতা অনুধাবন করে মার্চ মাস থেকেই সাধারন ছুটি, লকডাউন, বারবার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বা¯হ্যবিধি মেনে চলার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির প্রানান্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসক এমনকি সংবাদকর্মীরাও সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের জীবনবাজী রেখে বাংগালী জাতিকে বাঁচাতে প্রানপণ কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষত পুলিশ বাহিনীর মানবিক ও প্রণোদনামূলক পদক্ষেপসমুহ সামাজিক যোগাযোগের বদৌলতে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের দেশে করোনা প্রবেশের শুরুর দিকে সবাই যখন করোনায় আক্রান্তদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, ছেলে যখন মাকে ফেলে চলে যাচ্ছিল, রোগীর বাড়ীতে হামলা এমনকি দাফন-কাফনের ও সংকট এ সময় পুলিশ বাহিনী ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
প্রকারান্তরে দেখা যায়, সরকারী কর্মচারী লকডাউনের নিয়মনীতি না মেনে বরযাত্রী সমেত বিয়ে করতে যাওয়া, বিদেশ থেকে এসে আইসোলেশন না মেনে হাটবাজারে ঘুরাঘুরি করা, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে থুতনীতে মাস্ক লাগিয়ে সামনের মাড়ির সব দাঁত বের করে জনসমাগমের আয়োজন করে ত্রান বিতরণ ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘরের বাহিরে অবস্থান ইত্যকার বিষয়াদি নৈমত্তিক ঘটনায় রুপ নিয়েছে। এমনকি বড়কর্তারা ও অফিসে, গাড়ীতে শীতাতপ ব্যবহার করে সহকর্মী, পরিবার ও সমাজকে অসচেতন ভাবেই ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। যদিও বলা হয়ে থাকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় করোনার স্থায়িত্ব বেশী। গ্রাম এলাকার মানুষজন এমনকি শহুরে নাগরিকরাও সচেতনতাকে গুরুত্ব না দিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ইঁদুর বিড়াল খেলছে, অনেক মহিলা ও সন্তানসহ শপিংয়ে যাচ্ছে এমনকি পণ্যবাহী ট্রাকে লূকিয়ে আক্রান্ত এলাকা ত্যাগ করছে।
এমতাবস্থায় জীবন-জীবিকার তাগিদে সরকারী নিয়মনীতি মেনে আমাদেরকে স্ব স্ব কাজ শুরু করতে হবে কারন করোনা সহসাই পিছু হটবেনা। এক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতার ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া যেমন সমীচীন হবে না পাশাপাশি পরিবার ও সমাজ নানাভাবে এর প্রভাবে পর্যুদস্তু হবে। এজন্যে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরামর্শ এবং ম্যাসেজ প্রদান করে আমজনতাকে ত্রান প্রদানের নামে মানসিকভাবে দূর্বল করাও ঠিক হবে না। করোনায় আতংকিত না হয়ে একে জয় করতে হবে। আসুন সচেতন হই, নিজে বাঁচি এবং পরিবার ও সমাজকে বাঁচাই। সহসাই হয়ত বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সাথে অভিযোজন ঘটিয়ে সুদিন দেখতে পাব।
* ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল: সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top