logo
news image

লালপুরে আখচাষীদের আর্তনাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
‘আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ, কোন মতে জমিতে খেটে খুটে যা ফসল তৈরী করি তা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালাই। জমিতে ফলানো আখ নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কাছে বিক্রি করেছি প্রায় তিন মাস হয়ে গেল। এদিকে মিল বন্ধ হয়েছে ১৬ দিন হলো, কিন্তু আমাদের আখ বিক্রির পাওনা টাকা এ পর্যন্ত পেলাম না। তার উপর করোনা এসেছে গোদের উপর বিষ ফোড়া হয়ে, কোন কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, কার কাছে যাবো? আর কার কাছে আমাদের দু:খ দুর্দশার কথা বলবো ভেবে পাচ্ছি না। তাই আপনার (সাংবাদিক) মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আপনি আমাদের বাাঁচান। আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাবো।’ এমনি ভাবেই আর্মনাদ করছিলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডের একজন আখ সরবরাহকারী আখচাষী সাইদুর রহমান। শুধু সাইদুর রহমানই নয় এমন আর্তনাদ এখন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে আখ সরবরাহকারী ১৭ হাজার আখচাষীদের। আখ চাষীরা তাদের বিক্রি করা আখের টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড উত্তরাঞ্চলের বড় চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিল্পের উপর নির্ভর করে এখানকার প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে আখ। আখ বিক্রি করেই আখচাষীরা তাদের সকল প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। আজ এই আখ কৃষকের গলার কাটা হয়ে বিধেছে। আড়াই মাস আগে কৃষকরা মিলে তাদের উৎপাদিত আখ সরবরাহ করেছেন এবং গত ১১ এপ্রিল মিলটি কৃষকের পাওনা পরিশোধ না করেই আখ মাড়াই শেষ করেছে। ফলে একদিকে যেমন আখ চাষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে অপর দিকে পাওনা টাকা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। ব
ড়বড়িয়া গ্রামের আখচাষী জমশেদ আলী জানান, মিলে আথ সরবরাহকারীদের বেশির ভাগই আমরা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক, জমিতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেই চলে আমাদের সংসার, কিন্তু আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে আমরা দিনহীন হয়ে পড়েছি। আমাদের কষ্টের আর সীমা নেই, করোনার এই মহামারি না হলে টাকা আদায়ে কৃষকরা আন্দেলনে যেত, এখন সেটাও পারছে না। কলসনগর গ্রামের রবি, আব্দুলপুর গ্রামের আইয়ুব হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, এক গাড়ি আখ মিলে সরবরাহ করতে খরচ (আখ কাটা ও পরিবহনে) হয় এক হাজার টাকা, যা আখের টাকা পেলে তাদের পরিশোধ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আখের টাকা না পাওয়ায় অধিক সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সে টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে, অথচ আমার নিজের পাওনা টাকা পাচ্ছি না।
লালপুরের আখচাষী ইনছার আলী, গৌরীপুরের সাবের আলীসহ একাধিক আখচাষীরা জানান, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংক শিওর ক্যাশের মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করায় টাকা উত্তলোন সহজতর হলেও কর্তৃপক্ষের টাকা পরিশোধে বিলম্বের কারনে আখচাষীরা মহাবিপদে পড়ছে। তারা আরো জানান, আখের টাকা প্রতিদিন পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমানের পদ্ধতি ভালো, কিন্তু পরিশোধে দেরী হলে বর্তমান পদ্ধতিটি খুব কাজে আসে না। আগে মিলে আখের মূল্য পরিশোধে দেরী হলে প্রয়োজনে কমিশনে দিয়ে বিল ভাঙ্গানো যেত কিন্তু এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। তারা আরো জানান, করোনা মহামারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষনা করছেন এর মধ্যে থেকে মাত্র ৪১ কোটি টাকা আখচাষিদের দিলেই তো পাওনা পরিশোধ হয়, আর তাতে বেঁচে যায় ১৭ হাজার আখচাষীসহ আরো কয়েক হাজার মানুষ।
কৃষকের আখের দাম পরিশোধের ব্যাপারে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আখচাষীদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত আখচাষিদের পাওনা হয়েছে ৪১ কোটি টাকা। তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিশেষ তহবিল থেকেও অর্থ চাওনা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত সে অর্থ পাওয়া যায়নি। অর্থ পেলেই চাষীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। কবে নাগাদ কৃষকরা তাদের পাওনা টাকা পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
২০১৯-২০২০ আখ মাড়াই মৌসুমে মিলটি ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮৮১ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১৫ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top