logo
news image

করোনাযুদ্ধে ব্যক্তি-পরিবার-গোষ্ঠীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

মো. নাছির উদ্দিন।।
নৃবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সাধারণ কথায় আচরণ বলতে যা জানতে পেরেছি তা হল একজন মানুষ সামাজিক নিয়মে আরেক জন মানুষের সাথে যে ভাবে কথপকথন করে বা কোন নিদিষ্ট বিষয়ের প্রতি সাড়া প্রদান করে তাকে আচরণ বলা হয়। আর আচরণ পরিবর্তন বলতে কোন নিদিষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষ নিজেকে মানিয়ে নেওয়া বা খাপ খাওয়ানোর জন্য যে ধরনের সাড়া প্রদান করে তাকে বুঝানো হয়। মানুষের আচরণ পরিবর্তন একটি কঠিন ও দুরুহ কাজ। যেকোন নিদিষ্ট পরিস্থিতিতে আচরণ পরিবর্তনের জন্য সামাজিক নিয়ম বা রীতি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। বিদ্যমান ও পারিপার্শ্বিক জ্ঞানকান্ডের উপর ভিত্তি করে সামাজিক নিয়ম বা রীতি গড়ে ওঠে। করোনা -বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে এক মহামারী রোগের নাম। করোনা তথা সকল মহামারী রোগ থেকে বাচাঁর জন্য আমাদের মহানবী (সাঃ) সর্বপ্রথম আচরণ পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন ‘ মহামারী এমন একটি শাস্তি যা আল্লাহ বণী ঈসরাইলের উপর পাঠিয়েছিলেন, সুতরাং যখন তোমরা শুনবে যে, কোথাও তা বিদ্যমান তোমরা সেখানে যেও না। আর যদি মহামারি এলাকায় তোমরা থাক, তবে সেখান থেকে পালানোর জন্য বের হয়ো না’ (বুখারী ৬৯৭৪, মুসলিম ২২১৮)। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে যারা এ মহামারি রোগ থেকে প্রতিকারের উপায় খুজঁছেন তারা সবাই আচরণ পরিবর্তনের জন্য বারবার তাগাদ দিচ্ছেন (যেভাবে করোনা ঠেকাল চীন কোরিয়া সিঙ্গাপুর, দৈনিক যুগান্তর, ২৫ মার্চ, ২০২০)
ইতিমধ্যে আচরণ পরিবর্তনের জন্য সরকার কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিয়েছে। সমগ্রদেশে সিভিল প্রশাসনকে বাংলাদেশ সেনাবহিনী সহযোগীতা করছে (করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশের সকল জেলায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, আই এস পি আর, ২৪ মার্চ, ২০২০)। আচরণ পরিবর্তনের জন্য আমাদের যে বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
ক. ব্যক্তি ও পারিবারিক আচরণ পরিবর্তনঃ আচরণ পরিবর্তনের সর্বপ্রধান ও প্রথম ধাপ এটি। ব্যক্তি আচারণ পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তির ইচ্ছাই যথেষ্ট। তথাপিও সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক রীতিনীতি অনুস্মরন করা অত্যাবশ্যক। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কথা আমাদের ইসলাম ধর্মে বলাই আছে। তা হলো ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তি ও পারিবারিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই প্রধান হাতিয়ার। করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে জীবাণু। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, সর্দি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ ভাইরাসটি ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে অর্থাৎ ৩-৫ ফুটের মধ্যে কোন সুস্থ মানুষ এলেই তার আত্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আক্রান্ত ব্যক্তি কোন কিছু যেমন দরজার হাতল বা নব, তালা, পানির বোতল/ গ্লাস, লিফটের বোতাম, সিঁড়ির হাতল, এটিএম বুথের বাটন, পানির কল, কমোডের ফ্লাস/সিটার, কাগজ, কলম, পেন্সিল, ব্যাগ, থলে, টাকা, মৃদ্রা ইত্যাদি ধরলে এবং তা পরে কোন সুস্থ ব্যক্তি স্পর্শ করলেই ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সকল বস্তু কোন সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলেই ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন (নরুল ইসলাম মনি, আমাদের যা জানা জরুরী, দৈনিক যুগান্তর, ২৫ মার্চ, ২০২০)।
এজন্য সর্বপ্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ পরিবর্তন অতীব জরুরী। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিবারের অন্যন্যা সদস্যেদের নিকট থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তার পূর্বের সকল অভ্যাস/আচরণ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। এ অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আইসোলেসন/আলাদাকরণ বলা হয়।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংর্স্পশে যারা ছিল বা থাকবে তাদের ১৪ দিন আলাদা রাখতে হবে। সর্বদাই একজন থেকে আরেক জনের দুরত্ব ৩ ফুট হবে। কেউ কাউকে স্পর্শ করতে পারবে না বা কারো ব্যবহার করা বস্তু ব্যবহার করতে পারবে না ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। এ অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কোয়ারেন্টিন বলে (যঃঃঢ়ং://িি.িধষলধুববৎধ.পড়স/হবংি/২০২০/০৩/পড়ৎড়হধারৎঁং-ঃবৎসরহড়ষড়মু-বীঢ়ষধরদহবফ-পড়ারফ-১৯-মষড়ংংধৎু-২০০৩২৩০৬৪৪৩২৮২০.যঃসষ)। কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে ব্যক্তির কিছু অধিকার নিশ্চিত করা জরুরী। ১৯৮৪ সালের জাতিসংঘ স্বীকৃত সিরাকুসা নীতিমালা অনুসারে কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতাগুলো হলো (অধ্যাপক খাজা নাজিমুদ্দিন, জানেন কি, কোয়ারেন্টিনে কী করবেন, কী করবেন না, দৈনিক প্রথম আলো, ১৯ মার্চ, ২০২০):
১.    যারা থাকবে, তাদের মৌলিক চাহিদা সহ রোগ প্রতিরোধের সকল ব্যবস্থা করতে হবে।
২.    প্রিয়জন ও পরিচর্যাকারীর সাথে যোগাযোগের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে।
৩.    কর্মস্থল, চাকরী, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে, ক্ষতিপুরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪.    সামাজিক মর্যাদা যাই হোক সকল ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ থাকতে হবে।
৫.     কোয়ারেন্টিন সমাজ ও জনগনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে প্রতীয়মান হতে হবে।
৬.     রোগের সংক্রমন প্রতিরোধে এটা করতে হবে।
ব্যক্তি ও পারিবারিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য পরিবারের বয়োজোষ্ঠ্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। তারা তাদের পরিবারের সকল সদস্যদের দৈনন্দিন আচরণ পরিবীক্ষণ করবেন। মনে রাখতে হবে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারটির সবাই আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় থাকবে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনিদিষ্ট নীতিমালা (অধ্যাপক খাজা নাজিমুদ্দিন, জানেন কি, কোয়ারেন্টিনে কী করবেন, কী করবেন না, দৈনিক প্রথম আলো, ১৯ মার্চ, ২০২০) অনুস্মরন করা জরুরী।
১.    বাড়ির অন্য সদস্যদের নিকট থেকে আলাদা থাকুন।
২.    আলো-বাতাসের সুব্যবস্থাসম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন। সম্ভব না হলে অন্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দুরে থাকুন। রাতে পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন।
৩.    আলাদা গোসলখানা, টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয়- এমন স্থানের সংখ্যা কমান এবং ওই স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
৪.    স্তন্যদায়ী মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে শিশুর কাছে যাওয়ার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন ও মাস্ক ব্যবহার করুন।
৫.    বাড়ির অন্য সদস্যদের সাথে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে ১ মিটার/৩ ফুট এর মধ্যে আসার প্রয়োজন হলে বা অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
৬.    সর্দ্দি, কাশি, বমি, ইত্যাদির সংর্স্পশে এলে সাথে সাথে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৭.    সাবান-পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে এবং প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
৮.    সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলুন। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নিদিষ্ট তোয়ালে/গামছা ব্যবহার করুন এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।
৯.    অপরিস্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
১০.     কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার/মেডিকেল মাস্ক/কাপড়ের মাস্ক/বাহুর ভাঁজে
মুখ ও নাক ঢেকে রাখুর ও উপরের নিয়মানুসারে হাত পরিস্কার করুন।
১১. ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন উভয় অবস্থায় মহান আল্লাহর তথা সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনায় মগ্ন থাকা অতি উত্তম। এ কারনে সরকার ঘোষিত ছুটির দিনগুলো পরিবাবের সবাইকে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করতে হবে। সামাজিক দুরুত্ব হল সকল প্রকার জনসমাগম থেকে নিজেকে দুরে রেখে বাড়িতে অবস্থান করা।
খ. গোষ্ঠীগত (ঈড়সসঁহরঃু) আচরণ পরিবর্তনঃ গোষ্ঠীগত আচরণ পরিবর্তন বলতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার ভিন্ন সংশ্লিষ্ট পাড়া/মহল্লার অন্যান্য মানুষদের আচরণকে বুঝায়। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি মহল্লার প্রধান/মাতব্বর/কাউন্সিলরকে তার মহল্লার সকল মানুষের আচরণ পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে। বিশেষ করে যে সকল এলাকায় বিদেশ থেকে বাংলাদেশীরা এসেছেন ঐ সকল এলাকার প্রতিটি মহল্লার প্রধান/মাতব্বর/কাউন্সিলরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার হাত থেকে বাচাঁর উপায় সর্ম্পকে জানাতে হবে ও রাষ্টীয় বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের খুঁজ বের করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেচ্ছাসেবী দল গঠন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সেচ্ছাসেবী দল এর সকল সদস্যকে পিপিই সহ প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যাবশ্যক। যে পাড়া / মহল্লাকে লকডাউন করা হবে বা হয়েছে তাদের মৌলিক চাহিদা পুরনের সকল ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসনকে করতে হবে। প্রতিটি মহল্লার হতদরিদ্র পরিবারকে চিহ্নিত করে তাদের মৌলিক চাহিদা সহ প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত  করতে হবে। সরকারী সহায়তার পাশাপাশি প্রত্যেক এলাকার সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিত্তবান ব্যক্তিদের মাধ্যমে একটি জরুরী সহায়তা তহবিল  গঠন করে অসহায়দের সাহায্য করতে হবে।  
গ. পরিচর্যাকারী ও স্বাস্থ্যসেবীদের আচরণ পরিবর্তনঃ সেনাবহিনীর নিয়ন্ত্রনে দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল, ফার্মাসিউটিক্যালস জাতীয়করনের মাধ্যমে একত্রিত করতে হবে (বখতিয়ার আহম্মেদ, ফেববুক পোষ্ট, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮ মার্চ, ২০২০)। কোয়ারিন্টেনে ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে/হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবী/ পরিচর্যাকারীদের আচরণ সহনশীল হতে হবে। তাদেরকে অতি মানবীয় আচরণের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান কল্পে সীমিত সম্পদের সব্বোর্চ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরী। পিপিইর মাধ্যমে সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যসেবী ও পরিচর্যাকারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবী ও পরিচর্যাকারীদের বার বার স্বাস্থ্য টেস্ট কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে একজন আক্রান্ত/সন্দেহজনক ব্যক্তিকে ছাড়পত্র দিতে হবে। পরীক্ষাগুলো নিম্নরুপ হতে পারে (যেভাবে করোনা ঠেকাল চীন কোরিয়া সিঙ্গাপুর, দৈনিক যুগান্তর, ২৫ মার্চ, ২০২০) :  
১.    জ¦র পরীক্ষা
২.    ফ্লু পরীক্ষা
৩.    ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষা।
৪.    ফুসফুসের সিটি স্ক্যান পরীক্ষা।
সরকারকে স্বাস্থ্যসেবী ও পরিচর্যাকারীদের জাতীয় বীর হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে উচ্চ সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অতিদ্রুত নিম্নের পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করতে হবে।
১.    অতি দ্রুত একটি করোনা প্রতিরোধ এ্যাপস তৈরী করে সাধারণ জনগনকে বিনা খরচে ব্যবহার করতে দিতে হবে। এপসটিতে করোনা সংক্রান্ত সকল তথ্য (কোয়ারিন্টন, আইসোলেসস সহ) থাকবে। এখানে করোনার উপসর্গ সম্বলিত একটি পেজ রাখতে হবে। কোথায় কোথায় করোনা ভাইরাসের টেষ্ট করা হবে তা এখানে বলা থাকবে। যেন করোনায় আক্রান্ত সন্দেহজনক কোন ব্যক্তি বা তার পরিবার সহজেই পুরন করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট ডেস্ককে জানাতে পারে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ পূর্বক সংশ্লিষ্ট ডেস্ক ঐ সন্দেহভাজন ব্যক্তি সর্ম্পকে আশু সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এপ্সটিতে প্রতিনিয়ত করোনা সর্ম্পকিত আপডেট তথ্য প্রচার করতে হবে এবং সুস্থ হওয়া মানুষদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলে জনসাধারনের মনে লড়াই করার সাহস বৃদ্ধি পাবে।
২.    দ্রুত কমিউনিটি রেডিও, টেলিভিশন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সুস্থ হওয়া মানুষদের অভিজ্ঞতা প্রচার করতে হবে।  সেই সাথে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম বেগবান করতে হবে।
৩.    দ্রুত কমিউনিটি সহয়তা দল গঠন করা অত্যাবশ্যক। দলটিতে একজন ডিপ্লোমা ডাক্তার, দুজন নার্স (একজন পুরুষ ও একজন মহিলা), একজন কাউন্সিলর ও তিন জন সহযোগী থাকবে। প্রত্যেক জেলায় বিদ্যমান কমিউনিটি ক্লিনিক ও কমিউনিটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সকল স্টার্ফ দিয়ে এ দলটি গঠন করতে হবে। দলটি যে কাজগুলো করবে তা নিম্নরুপ (মোছা: মাকছুদা খাতুন, করোনাকালে বগুড়া জেলা ও আমাদের করনীয়, বিজয় বাংলা, ১৬ এপ্রিল, ২০২০) :
-    করোনা উপসর্গ সম্বলিত ব্যক্তিদের খুজেঁ বের করা
-    করোনা উপসর্গ সম্বলিত ব্যক্তিদের  কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশনে যেতে বাধ্য করা
-    করোনা রোগী সনাক্ত করা ও তাদের দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ
-    কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশন ও সুস্থ হওয়া রোগীদের পুনরায় সর্তক থাকার পরামর্শ দেওয়া
-    আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে কাউন্সিলিং করা
-    সমাজের গরীব/অসহায় লোকদের খুজেঁ বের করা
-    কমিউনিটির সকলের জন্য স্থানীয় সরকার প্রদত্ত সকল সুবিধাদী নিশ্চিত করার্থে সহযোগীতা করা
-    সাধারণ রোগীদের সাধারণ চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রেফার করা
-    কমিউনিটির মধ্যে আচরণ পরিবর্তন উপকরণ বিতরন করা
৪.    দেশের সকল জেলা হাসপাতাল গুলোতে করোনা ভাইরাস এর পিসিআর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নিতে হবে।
৫.    করোনা সম্বলিত সরকার বিরোধী সকল প্রকার গুজব/স্বপ্রচারণার তাৎক্ষনিক জবাব দেওয়ার জন্য গুজব প্রতিরোধ সেল এর কার্যকারিতা বাড়াতে হবে।
৬.    দেশের সকল সরকারী, বেসরকারী, ব্যক্তি মালিকানাধীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল, ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, ফার্মাসিউটিক্যালস, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি জাতীয়করণ করে সমগ্র স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত মৌলিক প্রশিক্ষণের আশু ব্যবস্থা করতে হবে। এদের মধ্যে থেকে মাস্টার ট্রেইনার তৈরী করে দ্রুত প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পাঠাতে হবে। মাস্টার ট্রেইনারদের মাধ্যমে প্রতিটি কমিউনিটিতে কমপক্ষে ০৫ জনের মোট ০৩ টি সেচ্ছাসেবী দল গঠন করে তাদেরও প্রশিক্ষন দিতে হবে, এক্ষেত্রে প্রত্যেক এলাকায় সরকারী নিবন্ধিত সেচ্ছাসেবী সংগঠন/কøাবগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। যেন তারা র‌্যাপিড কমিউনিটি রেসপন্স টিম এর ভূমিকা পালন করতে পারে। সেচ্ছাসেবী টিমের মাধ্যমে প্রতিটি পাড়া/মহল্লায় করোনার উপসর্গ সম্বলিত তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ উপকরণ দ্রুত  বিতরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ দলের প্রধান কাজ হবে করোনা প্রতিরোধে গন সচেতনতা বাড়ানো। মানুষের অযাচিত চলাচল রোধকল্পে এ দলটি প্রধান ভুমিকা পালন করবে। সেচ্ছাসেবী টিমে অবশ্যই মহিলা সদস্যও থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মোতাবেক পারসোনাল প্রটেকশ্যান ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃর্তে¡ ইউনিয়ন/পৌরসভার কাউন্সিলররা সেচ্ছাসেবী দলগুলোর পরিবীক্ষক হিসেবে কাজ করবে।  
৭.    বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড অনুসারে পারসোনাল প্রটেকশ্যান ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) এর উপর র‌্যাপিড কমিউনিটি রেসপন্স টিম, স্বাস্থ্যকর্মী, কিøনার, দর্শনার্থী, রোগী, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচর্যাকারী ও ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।    
৮.     পরিচর্যাকারী ও সেবাদানকারীদের অতি মানবীয় ও ধোর্যশীল হতে হবে। করোনা প্রতিরোধ এপ্স এর প্রত্যেক কেস গুরুত্বসহকারে বিশ্লেষণ করতে হবে।  
৯.    প্রতিটি পাড়া/মহল্লায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহয়তার জন্য কমিউনিটির বিত্তাবান লোকদের দ্বারা স্থানীয় সরকারের সহযোগীতায় একটি দুস্থ সহায়তা তহবিল গঠন করতে হবে। তহবিলটি স্থানীয় সরকারের তত্তাবধানে পরিচালিত হবে।  
১০.    খাবার ও ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভোটার তালিকা ধরে প্রত্যেক পাড়া/মহল্লার দুস্থ, গরীব, স¦চ্ছল ও ধনী পরিবার সনাক্ত করতে হবে। এরপর চাহিদা মোতাবেক তাদের নিকট এক সপ্তাহ পরপর খাবার ও ত্রান সামগ্রী পৌছে দিতে হবে।

* মোঃ নাছির উদ্দিন, পিএইচডি: অ্যালামনাস, ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top