logo
news image

প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল-সাধারণ সম্পাদক ফরিদা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।  ।  
জাতীয় প্রেসক্লাবের আগামী দুই বছরের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম (প্রাপ্ত ভোট ৬২১) সভাপতি এবং ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন (প্রাপ্ত ভোট ৫৬৯) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ১৭টি পদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাইফুল-ফরিদা প্যানেল ১৪ পদে জয়ী হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়। ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, সভাপতি পদে সাইফুল আলমের কাছে শওকত মাহমুদ (প্রাপ্ত ৪৩১) এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে ইলিয়াস খান (প্রাপ্ত ভোট ৪০৬) পরাজিত হন।
সাইফুল-ফরিদা প্যানেল থেকে নির্বাচিত অন্যদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদে বাসসের মো. ওমর ফারুক, সহসভাপতি পদে বাংলাদেশের খবরের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে সমকালের শাহেদ চৌধুরী ও ইত্তেফাকের মাঈনুল আলম এবং কোষাধ্যক্ষ পদে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত নির্বাচিত হয়েছেন।
১০টি কার্যনির্বাহী সদস্য পদের মধ্যে সাইফুল-ফরিদা প্যানেল ছয়টিতে জয়ী হয়। তাঁরা হলেন আনন্দবাজার পত্রিকার কুদ্দুস আফ্রাদ, চ্যানেল আইয়ের কল্যাণ সাহা, ইত্তেফাকের শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, অবজারভারের শাহনাজ বেগম, মাছরাঙা টিভির রেজোয়ানুল হক রাজা এবং দৈনিক বর্তমানের হাসান আরেফিন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে শওকত-ইলিয়াস প্যানেল থেকে নির্বাচিত তিনজন হলেন আমার দেশের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বাসসের বখতিয়ার রানা এবং নিউ এজের সানাউল হক। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান ফারুক।
এবারের নির্বাচনে মোট ১ হাজার ২১২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৬৭ জন।

সাইফুল আলম:
সাইফুল আলম (জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৬) একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক। তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাইফুল আলম ১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস চাঁদপুরের কচুয়ায়। তার পিতার নাম আলী আরশাদ মিয়া এবং মাতার নাম শামসুন নাহার। আলী আরশাদ মিয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।
সাইফুল আলম মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও ১৯৭৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪] ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্তায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সাইফুল আলম ১৯৭৯ সালে তিনি সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি দৈনিক জনতায় জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইনকিলাবের জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে গোলাম সারওয়ারের নেতৃত্বে শুরু হওয়া নতুন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি এ পত্রিকাটির উপসম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক ও ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাইফুল আলম ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের (পিআইবি) পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়ও তিনি বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের একজন সদস্য। তিনি ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দুই মেয়াদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক, ২০১৭-২০১৮ মেয়াদের কমিটির জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।[৪] তিনি ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
সাইফুল আলমের গ্রন্থসমূহ হল, ছেঁড়াপাতা (শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ - ১৯৮২), নিম ফুলের ঘ্রাণ (১৯৯৬), ছড়া-কবিতার গ্রন্থ হাত বাড়ালেই আকাশ, কিছু ভাবনা কিছু কথা (প্রবন্ধ সংলন ২০১৩), মাইনাস নয়, প্লাসের প্রজ্ঞাই গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের যাত্রা ও অন্যান্য (২০১৯)
সাইফুল আলম বাংলাদেশ মিউজিক জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আবদুর রহমান চিশতি স্মৃতি পুরস্কার (২০০৭), পদক্ষেপ পুরস্কার (২০১০), জাতীয় সমন্বিত উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সম্মাননা স্মারক (২০১৪), আলতাফ আলী হাসু স্মৃতি পদক (২০১৯) পুরস্কারে ভূষিত হন।  
ব্যক্তিগত জীবনে সাইফুল আলম ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাংকার ফেরদৌসী বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই মেয়ে রয়েছে।

ফরিদা ইয়াসমিন
ফরিদা ইয়াসমিন (জন্ম ১ জুন ১৯৬৩) একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রথম নির্বাচিত নারী সাধারণ সম্পাদক। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত ইয়াসমিন এর পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা। এছাড়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ফোরাম অ্যাগেনিস্ট ট্রাফিকিংয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মিডিয়াতে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করায় ২০১৭ সালের ৭ মে তারিখে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টটেটিভ থেকে তিনি বিশেষ কংগ্রেশনার রিকোগনিশন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিস থেকে পেয়েছেন ‘কংগ্রেসনাল স্পেশাল সার্টিফিকেট’।
ফরিদা ইয়াসমিনের জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার দৌলতকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম সাখাওয়াৎ হোসেন ভুঁইয়া এবং মায়ের নাম জাহানারা হোসেন। ৫ বোন এবং ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। নরসিংদী জেলার শিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন ফরিদা ইয়াসমিন।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগ থেকে ১৯৯০ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
ফরিদা ইয়াসমিন ১৯৮৯ সালে বাংলার বানী পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার চাকুরী শুরু করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সাপ্তাহিক ম্যগাজিনে নিয়মিত কাজ করতেন। বাংলার বাণী ছাড়াও তিনি মুক্তকন্ঠেও কাজ করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত আছেন। ২০০১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হন ফরিদা ইয়াসমিন। ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি সাউথ এশিয়ান ওমেনস মিডিয়া ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এবং এ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০১৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
প্রকাশিত বই সমুহ- ভাষা আন্দোলন ও নারী, ২০০৫; উজ্জ্বল নারীর মুখোমুখি, ২০০৫; ইতিহাসের আয়নায় বঙ্গবন্ধু, ২০১৭
পুরস্কার ও সম্মাননা- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পদক, উইমেন লিড দ্য নেশন পুরস্কার, জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।  
পারিবারিক জীবনে ফরিদা ইয়াসমিনের স্বামী প্রখ্যাত সাংবাদিক নঈম নিজাম। এ দম্পতির এক ছেলে মাহির আবরার এবং এক কণ্যা নুজহাত পূর্ণতা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top