logo
news image

প্রসংগ র‍্যাগিং ও আমাদের সাস্ট

জি এম হারুন অর রশিদ।  ।  
শাবিপ্রবি এর ১ম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে আমাদের নিজেদের কোনো সিনিয়র ছিলোনা। আমাদের নবীন বরন করেছিলো আমাদের শিক্ষকরা আর আমরা নিজেরা নিজেরা। তাই হয়তো আমাদের কেউ র‍্যাগিং করতে পারেনাই। আসলে এই শব্দের সাথে পরিচয় হয় অনেক পরে।
প্রতি বছরে নতুন নতুন আশা নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আর এর সঙ্গে সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে র‌্যাগিং নামক অপসংস্কৃতি। র‌্যাগিং শব্দের অর্থ নাকি ‘পরিচয়পর্ব’। কিন্তু বাস্তবে পরিচয়পর্বের নামে চলে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন।
বর্তমানে প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। কাউকে কাউকে ডাক্তারের শরণাপন্নও হতে হয়। বাস্তবে, ক্যাম্পাসে আসা নবীনরা সর্বদাই র‌্যাগিংয়ের ভয়ে ভীত থাকে।
বর্তমানে কিছু কিছু সিনিয়ররা র‌্যাগিংকে মজা হিসেবেই মনে করেন।আসলে তারা হয়তো বোকা বা মানসিক ভাবে অসুস্হ। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে জুনিয়রদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। সখ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা হলে ভয়ে সালাম দিয়ে সম্মান দেখানো আর আড়ালে হলে বকা দেয়া কখনও সম্মান হতে পারে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটাকেই অনেকে সম্মান ও শ্রদ্ধা বলে মনে করেন! আজ যে ছেলেটি মেয়েটি র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে, সে নিশ্চয়ই আগামীতে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় র‌্যাগিং করার পরিকল্পনা করবে। ফলে এ অপসংস্কৃতি বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
আমাদের সময় যে সকল নতুন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়েছিলো তাদের সাথে আমাদের পরিচয়ের প্রথমদিনই তাদের আস্বস্ত করার চেষ্টা করেছি এই বলে যে,
“আমরা আছি তোমাদের সাথে , তোমরা তোমাদের যে কোন ঝামেলা, বিপদ আপদ, সমস্যায় আমাদের বলবে, আমরা আমাদের সাধ্যমত সহোযোগিতার চেষ্টা করবো।
তারাও অনুভব করেছে যে, “পরিবার ছেড়ে আসলেও এখানে নতুন পরিবার পেয়েছি”।
আমার নিজেরটা যদি বলি,
নতুনদের জন্য আমি আর আমার রুমমেট কামরুল, লিংকন , মানস দিনকে দিন আমাদের হোষ্টেলের বিছানা ছেড়ে ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়েছি, শুধু নতুনরা যেনো নিজেকে একা বা ভালোবাসাহীন মানুষ না ভাবে। তখন সবাই তাই করেছে।
আমাদের সময় যখন র‌্যাগিং ছিলোনা তখন কিন্তু নতুন পুরাতন সকল ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা ,আর বিশ্বাসে ঘাটতি ছিলোনা।
গত বছর কিছু সাস্টিয়ান এই র‌্যাগিং নামক এই কর্মকান্ড করে যেমন, নতুন কিছু ছাত্র ছাত্রীদের জীবন বিষিয়ে তুলেছিলো, অন্যদিকে নিজেদের ছাত্র জীবন হূমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলো। একই সাথে নিজেদের পরিবার আর সাস্টের সম্মানে প্রশ্নবোধক চিন্হ একে দিয়েছিলো।
এবার যারা নতুন আমাদের সাস্টে ভর্তি হবে তারা যেনো কোন ভাবেই এই র‌্যাগিং।  শব্দের সাথে পরিচিত না হয় সেই ব্যাপারে বর্তমানে যারা সাস্টে ছাত্র ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবাইকে সম্মলিত উদ্দ্যোগ নিতে হবে সময় থাকতেই।  ঘটনা ঘটে যাবার আগেই  সবাই অন্তরিক ভাবে এর প্রতিরোধ শপথ নেই।
‘সাস্ট হবে র‌্যাগিং মুক্ত
আমরা সবাই সবার সাথে
ভালোবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আর আন্তরিকতায় থাকবো যুক্ত”
যারা বর্তমান ছাত্র ছাত্রী তাদের বলছি,
“নতুনদের যতো ভালোবাসা আর সম্মান দিয়ে আগলে রাখবে, তোমরা তার দ্বিগুন
ফেরত পাবে, আমরাও পেয়েছি।
আর এবার যদি তোমাদের কারো এই র‌্যাগিং এর কারনে সাস্টের সুনাম নষ্ট হয়, আমরা যারা পুরাতন সাস্টিয়ান – সবাই তার বিরুদ্ধে দাড়াবো।
ভালো থাকুক আমার সাস্ট
ভালো থাকুক সকল সাস্টিয়ান
* জি এম হারুন অর রশিদ: ১ম ব্যাচ- অর্থনীতি, ১ম ব্যাচ – সাস্ট, ১ম নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক (শাকসু)

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top