logo
news image

আগামী ১৩ নভেম্বর বরগুনায় জোছনা উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরগুনা।  ।  
বরগুনা জেলায় আগামী ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ জোছনা উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসবে যোগ করা হয়েছে নানান আয়োজন।
গত বছরের মতো এবারেও বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী যেখানে সাগরে মিশেছে ঠিক সেখানে নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের স্নিগ্ধ বেলাভূমি ‘শুভ সন্ধ্যার’ বিস্তীর্ণ বালুচরে ‘পঞ্চম জোছনা উৎসব’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
একদিকে সাগরের সীমাহীন জলরাশি। আরেকদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। একদিকে দীর্ঘ ঝাউবন, আরেকদিকে তিন তিনটি বিশাল নদীর জলমোহনা। সবমিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার- শুভ সন্ধ্যার চর! ১৩ নভেম্বরের ভরা পূর্ণিমায় এখানেই জলজোছনায় একাকার হবে জোছনাবিলাসী হাজারো মানুষ। এ উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুভ সন্ধ্যা সৈকতে বাহারি পণ্যের পসরা সাজানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারের জোছনা উৎসবে বরগুনা থেকে চারটি দোতলা লঞ্চ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুপুর দেড়টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাবে। বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমীরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বনবনানীর কোল ঘেষে বিকেল পাঁচটার দিকে লঞ্চ পোঁছবে শুভসন্ধার চরে। এরপর সেই স্নিগ্ধ বালুচরে শেষ বিকেলের ঘোরাঘুরির পর রাতভর জোছনার গান, রাখাইন নৃত্য, বাউল সঙ্গীত, মোহনীয় বাঁশির সুর, যাদু প্রদর্শনী, পুঁথীপাঠ এবং কবিতা আবৃত্তির সাথে সাথে জলজোছনায় অবগাহণ হবে সবার। থাকবে লোভনীয় পুরস্কারের আকর্ষণীয় লটারী। গভীর রাত পর্যন্ত জোছনাস্নাত হয়ে রাত ৩ টায় পুনরায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়বে। সকাল ৬টা নাগাদ লঞ্চ ভিড়বে বরগুনার ঘাটে।
এবারের জোছনা উৎসবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ রাজধানী ঢাকা এবং দেশ বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন বলে ধারণা আয়োজক কমিটির। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময়, নদনদীর মোহনা এবং শীতের হিম হাওয়ার কথা ভবনায় রেখে এ উৎসবে ১০ বছরের কমবয়সী শিশুদের নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাছাড়া যেহেতু দীর্ঘ সময় বালুচরে ঘোরাঘুরি করতে হবে। সেহেতু বেলাভূমিতে নিজেদের মত করে আড্ডা জমাতে হলে ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় মাদুর, বিছানার চাদর, শীতের কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, গামছা বা তোয়ালে, টিস্যু পেপার এবং লাইট স্ন্যাক্স সাথে নিয়ে আসার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা ডাক্তারি পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন তাদের অনুরোধ করা হয়েছে দরকারি সব ওষুধ সাথে নিতে।
বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। মূল স্টেজের পেছনেই থাকছে নারীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। স্টেজ থেকে একটু দক্ষিণে ঝাউবন ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে নারী ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। থাকছে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চাঁদনী রাতে তিন নদীর জলমোহনায় ছোট ছোট ট্রলার ভাড়া করে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকছে ভাড়ায় চালিত ট্রলারের সুব্যবস্থাও।
জোছনা উৎসবের উদ্যোক্তারা জানান, ‘স্থানীয় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে যে উৎসবটি আমরা শুরু করেছিলাম তা আজ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে একটি প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ উৎসবটি ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশেও ব্যাপক পরিচিতি পাবে বলে আমরা আশাবাদী। ২০১৫ সাল থেকে বরগুনায় শুরু হয় জোছনা উৎসব। বিষখালীর মোহনায় প্রথমবারের সে জোছনা উৎসবকে ভালবেসে ফেলে স্থানীয় উৎসবপ্রিয় মানুষ। সেই থেকে প্রতিবছর ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বরগুনায় পালিত হয়ে আসছে জোছনা উৎসব। দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকল নেতৃবৃন্দ এ উৎসবে অংশ নেয়। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর পরিকল্পনায় এবারের উৎসবে বেশ কিছু নতুন ইভেন্ট সংযোজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বরগুনার এ উৎসবকে সারাদেশের উৎসবপ্রিয় মানুষের কাছে তুলে ধরতে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ। দলমত নির্বিশেষে এ উৎসব এখন সর্বজনীন একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বরগুনা জেলার সভাপতি অ্যাড. মো. শাহজাহান বলেন, বরগুনার মানুষ উৎসবপ্রিয়। এখানে বৈশাখী মেলা থেকে শুরু করে নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি সকল উৎসবগুলো নিয়মিত উদযাপিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সাল থেকে বরগুনায় শুরু হয় জোছনা উৎসব। সেই থেকে আজ অবধি এ উৎসবটি বরগুনায় নিয়মিত উদযাপিত হয়ে আসছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, বরগুনা জেলা থেকে নৌপথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। বরগুনায় রয়েছে নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ বনভূমী আশারচর, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটার বন, টেংড়াগিরির বনভূমি এবং শুভসন্ধ্যার বীচ পয়েন্টসহ অনেক আকর্ষণীয় বনবনানী ও নদনদীর মোহনা। এসব বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, শুকরসহ শতেক প্রজাতির প্রাণীবৈচিত্র। বরগুনার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা গেলে পর্যটন শিল্প বিকাশের সাথে সাথে এখানকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, বরগুনার মানুষ উৎসবপ্রিয়। জোছনা উৎসবের মত একটি উৎসবকে দেশ ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে প্রচার করা গেলে প্রতিবছর এ উৎসবকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। আর এভাবেই এগিয়ে যাবে বরগুনা। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top