logo
news image

বাউয়েটের গর্ব অহনা আরেফিন

মো. মঞ্জুরুল আলম মাসুম।  ।  
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মেয়েরা প্রকৌশল বিদ্যায় সফলতার সাক্ষর রাখছেন। তেমনই একজন প্রকৌশলী অহনা আরেফিন।
একজন ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার আগে একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠা দরকার। আমরা যা দেখি, যা শুনি তাই ছোটবেলা থেকেই আত্মস্থ করি। এক্ষেত্রে বাবা-মা, শিক্ষক, প্রতিবেশী সবার আচরণই একজন শিশুর মনে প্রভাব ফেলে।
যে শিশু সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠবে সে সুস্থ চিন্তা করবে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়বদ্ধতা থাকবে। এ দায়বদ্ধতা আমার মধ্যে শৈশবেই গড়ে উঠেছে পরিবার থেকে। সেভাবেই আমি নিজেকে তৈরি করেছি, বললেন প্রকৌশলী অহনা আরেফিন।
বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) থেকে পুরাকৌশলে প্রথম হয়েছেন অহনা আরেফিন। ২০১৫ সালে প্রথম ব্যাচে পুরাকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চাও করেন তিনি। নাটক মঞ্চস্থ করা, গল্প-কবিতা লেখা ও আবৃত্তি করা। এর পাশাপাশি উপস্থাপনাও করেন।
অহনা আরেফিন শিক্ষা-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠেন। বাবা ড. সাদেকুল আরেফিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক। এর আগে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মা ড. ইসরাত জাহান রূপা কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
এ প্রসঙ্গে অহনা আরেফিন বলেন, বাড়িতে সব সময়ই লেখাপড়া, সাংস্কৃতিক চর্চার একটি পরিবেশ রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বাবা-মা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। নিজেদের মতামত আমাদের মধ্যে চাপিয়ে দেন না।
আমাদের মতামতকেও গুরুত্ব দেন। যা আমাদের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে তা সুন্দর করে সহজভাবে বুঝিয়ে দিতেন। এভাবেই ছোটবেলা থেকে নিজেকে তৈরি করার শিক্ষা পেয়েছি। এও শিখেছি শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে কীভাবে নিজেকে ঢালতে হয়। আমার জীবনে বাবা-মাই আমার আদর্শ। তাদের পথ অনুসরণ করেই ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা করেছি।
নানা-নানির স্নেহ-আদর-ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা অহনার লেখাপড়ার হাতেখড়ি কুষ্টিয়াতে। বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কারণে অহনার শিক্ষা জীবনের বাকিটা সময় রাজশাহীতেই কাটে।
২০১২ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী কলেজ থেকে গোল্ডেন-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডকর্তৃক বৃত্তি পাওয়া অহনা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তার সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চাও করেন।
মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারকারিনী অহনা আরেফিনকে চাকরি পেতেও বেগ পেতে হয়নি। শিক্ষকতাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন।
তার মতে, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক শ্রদ্ধা, স্নেহ ও বন্ধুত্বের। ছাত্রজীবনে শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি অনেক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পেয়েছেন। যার ফলে তার চলার পথ মসৃণ ছিল।
শিক্ষক জীবনে তিনিও তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ রকমই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। এ প্রজন্মের মেয়েরাও দৃঢ়চিত্ত, অসম সাহস আর উদ্দীপ্ত চেতনায় নিজেকে তৈরি করবে। সমাজ সংস্কারের আঙিনায় যুগান্তকারী অবদান রাখবে। এমন প্রত্যাশা অহনার।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top