logo
news image

সফল গুগলার হতে সাবিরের মন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, শাবি।।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে বেতন এবং নিরাপত্তা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক বেশি। প্রযুক্তি খাতে বিশ্বব্যাপী দাপট দেখাচ্ছে ‘গুগল’।
তবে আপনার স্বপ্ন যদি হয়ে থাকে ‘গুগলার’। তাহলে কিভাবে হবেন ‘গুগলার’। বলছেন ‘গুগলে’ বাংলাদেশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মো. সাবির ইসমাইল । তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
কেন আসবেন গুগলে
সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, অন্যান্য কর্পোরেট অফিসের মত ৯-৫টা অফিস নাই, সবাইকে নিজের মত করে কাজ করার সুবিধা দেয়া হয়। গুরুতপূর্ণ হচ্ছে যে কাজটা আমাকে দেয়া হয়েছে সেটা আমি সময় মত শেষ করতে পারছি কি না। এছাড়া, কখনো কোনো জটিল মনে হলে সহজেই অন্যদের থেকে সাহায্য পাওয়া যায়। এসব কোম্পানিতে বেতন ছাড়াও আর বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়। প্রথমে যোগদানের পরে সবকিছু গোছানোর জন্য ভালো বোনাস দেয়, এমনকি প্রথমে থাকার জন্য বাসা, গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। গুগোলের মাউন্টেন ভিউতে সাইকেল চালানো উৎসাহিত করার জন্য সাইকেলও দেয়া হয় আর ক্যাম্পাসের ভিতরে জো-বাইক (সাইকেল) সবার জন্য উন্মুক্ত সবসময় থাকে।  
স্বপ্ন পূরণে আপনাকে যা করতে হবে
প্রোগ্রামিং দক্ষতা বাড়াতে হবে। LeetCode, CodeForce, TopCoder এ নিয়মিত প্রোগ্রামিং করতে হবে। মোটামুটি ৬ মাস সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রস্তুতির জন্য মূলত ডাটা স্ট্রাকচার ও অ্যালগরিদম ভালো করে আয়ত্তে আনতে হবে। সিস্টেম ডিজাইন নিয়েও কিছু ধারণা রাখতে হবে। Time and Space Complexity নিয়েও ধারণা রাখা লাগবে। ইন্টারভিউতে সমস্যার থেকে আমি কিভাবে চিন্তা করেছি ওইটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার চিন্তাটাকে যাতে প্রকাশ করা যায়, সেটাও অনুশীলন করেত হবে।
যেভাবে যুক্ত হবেন স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে
LinkedIn. LinkedIn এ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।  সেখানে নিজের অর্জনগুলো প্রোফাইলে রাখতে হবে। যেমন বিভিন্ন প্রোগ্রামিং সাইটের প্রোফাইলের লিংক এবং বিভিন্ন অনসাইট প্রোগ্রামিং কন্টেস্টের ফলাফল রাখতে হবে। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করলে সেগুলো রাখা যেতে পারে। কোন প্রজেক্ট করলে সেটার কিছু বর্ণনা দিয়ে কোড GitHub এর লিংক দিয়ে দেয়া যেতে পারে। এছাড়া  LinkedIn এ বিভিন্ন কোম্পানির রিক্রোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। রিক্রোটারদেরকে মেসেজ দিয়ে নিজের আগ্রহের কথা বলতে হবে, তবে তার আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তারপরে এত করতে হবে, যখন মনে হবে, আমি প্রস্তুত তখন।
যেভাবে সাবিরের গুগলে আসা
গুগলে যোগদানের ব্যাপারে আসলে তেমন কোনো প্ল্যান ছিল না। মাস্টার্স এর শেষ সেমিস্টারে, (চলুতি বছরের জানুয়ারি মাসে) মনে হয়েছে আমার কাছে ৬ মাসের মত সময় আছে আমেরিকায় চাকরি খোঁজার জন্য। তখন এই সব কোম্পানিতে চাকরিরত বড় ভাই ও বন্ধুদের উৎসাহে প্রস্তুতি নেয়ার পরিকল্পনা করি। তখন মাথায় ছিল চেষ্টা করে দেখি, চাকরি হয়ে গেলে ভালো, না হলেও হারানোর কিছু নাই। আর যদি প্রস্তুতির কথা বলি, তাহলে যদিও এই ৬ মাসে প্রস্তুতি নিয়েছি, তবে প্রস্তুতির মুল অংশ মূলত অনার্স পড়ার সময় প্রথম ৩ বছরের করা প্রোগ্রামিং, ডাটা স্ট্রাকচার ও অ্যালগরিদম কোর্সের মাধ্যমেই হয়েছে। এখন প্রস্তুতিতে আগের করা বিষয়গুলো আবার ভালো করে ঝালাই দিতে হয়েছে।
আক্ষেপ আছে সাবিরের
কেন না, প্রযুক্তি কোম্পানির চাকরিতে একটা বড় অংশ ভারতীয় আর চাইনিজদের দখলে। ওদের জনসংখ্যা বেশি সেজন্য তাদের অনুপাত বেশি হলেও, সে অনুপাতে ওদের ১০জন থাকলে আমাদের ১ জন থাকার কথা, কিন্তু আমার কাছে আমাদের দেশের অনেক কম মনে হয়েছে। একটা কারণ, যেটা আমার মনে হয়, আমাদের প্রযুক্তি কোম্পানির চাকরির জন্য কি কি করা দরকার সে তথ্য হয়ত অনেকেরই জানা নেই। প্রযুক্তি কোম্পানির চাকরির প্রস্তুতির অন্যতম উৎস হল তাদের জন্য প্রস্তুতির প্লাটফর্ম।  https://leetcode.com/ Ges  https://www.geeksforgeeks.org/ প্রথমটা চাইনিজদের তৈরি, দ্বিতীয়টা ভারতীয়দের। অন্য যে উৎস আছে প্রস্তুতির প্রায় সবই ওদের। তাই কিভাবে প্রস্তুতির নিতে হবে সেটা ওদের জানা। আমাদের দেশেও কিভাবে প্রযুক্তি কোম্পানির চাকরিতে যোগদান করা যায়, সে তথ্য জানানো সম্ভব হলে হয়ত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও এধরনের চাকরির সুযোগগুলোতে নিতে পারবে।
তবে বিদেশ গিয়েও দেশকে নিয়ে সবসময় ভাবেন শাবির এ শিক্ষার্থী। দেশকে নিয়ে তার ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে বলেন, আমাদের দেশেও ভারতের মত সব বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির শাখা থাকবে অথবা চায়নার মত বাইদ্যু বা আলীবাবার মত নিজস্ব কোম্পানি হবে। এর জন্য যা করা দরকার তাহল বেশি বেশি প্রোগ্রামিংকে জনপ্রিয় করতে হবে।
উল্লেখ্য, গুগলে নিয়োগের পূর্বে তিনি একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৯ আগস্ট তিনি গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। তার জন্মস্থান কাজিটুলা, সদর, সিলেট ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top