logo
news image

বনলতা এক্সপ্রেস

মহিউদ্দিন।।
ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগন্জ যাবার সরাসরি কোন ইন্টারসিটি ট্রেন ছিলনা আগে। এই ট্রেন সেই সুযোগ করে দিয়েছে । ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে কোন স্টপেজ ছাড়াই রাজশাহী যায় ।রাজশাহীর মানুষের বহুদিনের দাবী ছিল এই বিরতিহীন ট্রেনের।”বনলতা” নামটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্ধারন করেছিলেন।জীবনান্দ দাশের কবিতার নাটোরের বনলতা সেনের নামে হয়তো এটার নামকরন করা হয়েছে।
আমরা অনেকেই জানিনা ঢাকার বনানী রেলস্টেশনে সকল ট্রেনের অগ্রীম টিকেট বিক্রি হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত।এখানে তেমন ভীড়ও থাকেনা, সহজেই টিকিট সংগ্রহ করা যায়।বনানীর কাছে হওয়াতে আমিও এখান থেকে সহজেই টিকিট সংগ্রহ করি।
এয়ারপোর্ট স্টেশনে দুপুর ১:৩০ মিনিটে পৌছানোর পর শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। ট্রেন এলো ১:৫০ মিনিটে...রাইট টাইমেই বলা চলে।ট্রেনের বগীগুলো ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানী করা...কষ্ট লাগে আমাদের সৈয়দপুরে এতবড় রেল কারখানা থাকতেও এখনও আমরা শুধু মেরামত কার্যকমের উপর সীমাবদ্ধ আছি।
ট্রেনে ওঠার পর সচারচর যেটা হয় সেটাই হলো। আমার সিটে এক বৃদ্ধ মহিলা বসা.....উনার হাসবেন্ড আমাকে উনার সিটে বসতে অনুরোধ করলেন ।মেজাজ একটু খারাপ হলো কারন আমি জানালার পাশের সিট দেখে ticket কিনেছিলাম। এবার আমার সিট হলো এক ইয়াং মেয়ের পাশে।
হালকা আলাপে জানতে পারলাম মেয়েটা বোনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছে..ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ওদের নিজেদের বাড়ী।ওর নাম রেহেনা ।মহাখালীতে একটা অনলাইন সপিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করে । ওদের কনটেন্ট গুলো লেখে এবং ফেসবুক লাইভে এসে প্রোডাক্ট ডিসপ্লে করে।মূলত মহিলাদের অরনামেন্টস এবং হাউসহোল্ড জিনিস গুলোই বিক্রি করে।ওদের মালিক একজন
কানাডিয়ান বাংলাদেশী মহিলা। কয়েক বছর থেকেই বিজনেসটা ভালোভাবে চলছে।
ট্রেনের ভেতরে চা,কফি,চিপস্, নাস্তা সবই বিক্রি হচ্ছে। মেয়েটা চা নিয়ে আমাকেও বললো নিতে....না ..করলাম না। ততক্ষনে ট্রেন উল্লাপাড়া...বড়ালব্রিজ..চাটমোহর....দিয়ে ছুটে চলেছে । এই জায়গাগুলো চলন বিলের অংশ...রেললাইনের দুধারে শুধু পানি আর পানি..মাঝে মাঝে গাছপালা ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপের মত গ্রাম।
চায়ের কাপ সিটের নিচে রাখার সময় খেয়াল করলাম মেয়েটার দু’পায়ের পাতা মোচড়ানো...ভালো ভাবে হয়তো হাঁটতে পারেনা। জানতে চাইলাম কিভাবে এমন হলো।
একটু মন খারাপ করে বললো ..জন্মের পর থেকেই এমন । ঢাকায় অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে লাভ হয়নি।
রাজশাহী স্টেশনে রেহেনার দুলাভাই আসবে ওকে নিতে...বার বার ফোনে বলছে আপনি না আসলে ব্যাগগুলো নামাতে ঝামেলা হবে। রাজশাহীর কাছাকাছি এসে তুমুল বৃষটি শুরু হলো ...ওর দুলাভাই জানালো সে বাসা থেকে বের হতে পারছে না। আমি আশ্বাস দিলাম চিন্তার কিছু নেই আমি হেল্প করবো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পার হবার সময় রেহেনা বললো চলেন আমরা ব্যাগগুলো নিয়ে দরজার দিকে যাই নামতে সুবিধা হবে। দরজার সামনে দু’জন মুখোমুখী দাড়িয়ে আছি ....ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম ওর চোখগুলো খুবই সুন্দর , নাকে নোসপিনটাও বেশ মানিয়েছে....।গানটা মনেপড়ে গেল ......
” পাখির নীড়ের মতো দুটি চোখ তোমার, ঠি ক যেন নাটোরের বনলতা সেন”।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top