logo
news image

বেসরকারি শিক্ষকদের পুরো বোনাসই দেওয়া উচিত

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া এক সিদ্ধান্তের ফলে সারাদেশের বেসরকারি প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী এক দশক আগে থেকে নামমাত্র উৎসব ভাতা পেয়ে আসছেন। তার আগে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো উৎসব ভাতা পেতেন না।
২০০৩ সালে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের দেওয়া হবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। দুই ঈদে (অথবা পূজায়) ২৫ শতাংশ করে ভাগ করে তা দেওয়া হবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পান। আর কর্মচারীদের জন্য ওই সভায় শতভাগ বোনাস দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। দুই ঈদে ৫০ শতাংশ করে তা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।
তবে এ নিয়ে সন্তুষ্ট নন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা জানান, এই সিদ্ধান্ত যখন হয়েছিল তখন সরকার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৯৫ শতাংশ বেতন দেওয়া হতো। পরে ২০০৫ সালে সরকার ৫ শতাংশ বাড়িয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতভাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও উৎসব ভাতা আর বাড়ানো হয়নি। সেই থেকে অর্থাৎ ১৬ বছর ধরে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এই খণ্ডিত উৎসব ভাতা পেয়ে আসছেন।
শিক্ষকরা জানান, '৯৬ সাল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের ৮০ ভাগ সরকার থেকে দেওয়া হতো। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকার তা শতভাগে উন্নীতের ঘোষণা দিলেও প্রথম বাজেটে তা ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করে। পরবর্তী বাজেটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা ১০০ ভাগে নিয়ে যায়। দেখা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেল ধাপে ধাপে শতভাগে উন্নীত হলেও উৎসব ভাতা আর বাড়েনি।
এদিকে, বরাবরের মতোই এবারও ঈদুল আজহায় খণ্ডিত উৎসব ভাতা পেতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এরই মধ্যে এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। এবার ঈদের আগেই তা হাতে পাবেন তারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রুহুল মমিন জানান, এবারের ঈদুল আজহায় সারাদেশের ২৬ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলে ২২০ কোটি টাকার উৎসব ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু স্কুল ও কলেজ ১৮ হাজার ৫৬৭টি। এগুলোতে কর্মরত ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৭ শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ঈদ বোনাস বাবদ দেওয়া হচ্ছে ১৯১ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৭৮ টাকা। এর সঙ্গে জুলাই মাসের বেতন হিসেবে তারা পাবেন আরও ৬৮৩ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারও আগের মতোই শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ আর কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২৫ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন স্কেল ৫০ হাজার টাকা, উপাধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপক ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, টাইম স্কেলপ্রাপ্ত প্রভাষক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৯ হাজার টাকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৩ হাজার, প্রভাষক/গ্রন্থাগারিক, সহকারী শিক্ষক (টাইম স্কেলপ্রাপ্ত) ২২ হাজার, প্রদর্শক/সহকারী গ্রন্থাগারিক/শরীর চর্চা শিক্ষক/ সহকারী শিক্ষক (টাইম স্কেল ব্যতীত) ১৬ হাজার এবং সহকারী শিক্ষক (বিএড ব্যতীত) ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেলে বেতন পান। অন্যদিকে, ৫০ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে টাইম স্কেল পাওয়া তৃতীয় শ্রেণির বেতন স্কেল ৯ হাজার ৭০০ টাকা, টাইম স্কেল ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ৯ হাজার ৩০০ টাকা, ল্যাব সহকারীদের ৮ হাজার ৮০০ টাকা, টাইম স্কেল পাওয়া চতুর্থ শ্রেণির বেতন স্কেল ৮ হাজার ৫০০ টাকা, আর টাইম স্কেল ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন স্কেল ৮ হাজার ৩৫০ টাকা।
শিক্ষকদের নগণ্য এই ঈদ বোনাস প্রাপ্তি সম্পর্কে প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক চাইলে সরকারকে অবশ্যই শতভাগ উৎসব ভাতা দিতেই হবে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিক্ষকদের বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা বলা আছে। সরকারি শিক্ষকরা প্রতি তিন বছরে একটি শান্তি বিনোদন ভাতা পান। বেসরকারি শিক্ষকদের তা দেওয়া হয় না। সব শিক্ষককেই এই ভাতা দেওয়া প্রয়োজন এবং শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা চালু করা উচিত। তিনি বলেন, যোগ্য লোকদের শিক্ষকতায় এনে যোগ্যতর বেতন-ভাতা দিতে হবে।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলী সাজু বলেন, শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস দেওয়া হয় এটা শুনতেও খারাপ লাগে! এটা শতভাগই তাদের দিতে হবে। টাকাও বেশি নয়, বছরে মাত্র দুটি বোনাস।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, 'বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব-ভাতা সরকারের দেবার কথা নয়। এটা সরকার থেকে অনেকটা জোর-জবরদস্তি করে নিয়ে আমরা শিক্ষকদের দিই।' তবে দিলে পুরো বোনাসই দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন জ্যেষ্ঠ এই সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার বিষয়ে এখনই সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান বের করা যেতে পারে। সরকারের সক্ষমতা বেড়েছে। নানা বিষয়ে ইতিবাচক দিকে আমরা এগোচ্ছি। এ বিষয়টিও আমরা দেখব।'

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top