logo
news image

ঈশ্বরদীর মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রণাঙ্গনে ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস পালিত

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
প্রতিবারের মতো এবারেও দিনটিকে স্মরণ করে ঈশ্বরদীর মুক্তিযদ্ধের প্রথম রণাঙ্গণ ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস শুক্রবার পালিত হয়েছে। সম্মুখ যুদ্ধে নিহত শহীদদের সম্মান জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পতাকা উত্তোলন , আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাধপুরের রণাঙ্গনের নেতৃত্বদানকারী যোদ্ধা, ভাষা সৈনিক ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এম.পি. এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদুল্লাহ, আব্দুর রহিম, আব্দুল ওয়াহাব, জামাত আলী, শহীদুল হক মজনু, হুজুর আলী, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রাজ্জাক, মিলন ও শহীদ রাজুর ছোট ভাই মিলকী।
 প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি শরীফ আরো বলেন, মাধপুরের বটতলায় শহীদের পবিত্র রক্তে ভেজা মাটি পাবনা জেলার অহংকার। রাজু, রাজ্জাকের পবিত্র রক্ত এ মাটিতে মিশে আছে। ৭ই মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ সরাসরি শুনে পাবনা ফিরে সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেশীয় ৪২টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলি। মাধপুর দিবসের এই সভায় শহীদ সহযোদ্ধাদের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এমপি শরীফ আরো  বলেন, ১৭জন সহযোদ্ধাসহ ৭০ জন মানুষের শহীদ হওয়ার দিনটি ছিল আমাদের কাছে এখন স্বপ্নের মতো।
   উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ পাবনা ও ঈশ^রদীর মধ্যবর্তী স্থান পাবনা জেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুর নামক স্থানে বটতলায় পাকিস্তানের সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করতে এসে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলায় ১৭ জন যোদ্ধা শহীদ হয়। এসময় মাধপুর বটতলায় আরও ৫০ জন সাধারণ নিরীহ বাঙ্গালি প্রাণ হারায়। প্রতিবারের মতো এবারেও দিনটিকে স্মরণ করে গতকাল ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস পালিত হয়েছে। প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২৮শে মার্চ ১৯৭১ সালে পাবনা পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে পরাজিত ও  হতাহত পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে তাদের ১৩টি ট্রাকের বহর পাবনা থেকে রাজশাহীর দিকে ফিরছে। এই সংবাদ পেয়ে ডিলু বাহিনীর (এমপি শরীফ স্থানয়ি ভাবে ডিলু ভাই) দলটি তাৎক্ষণিক পাকিস্তানি সেনাবহরটিকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৪২টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও সাধারণ নির্মিত হাতবোমাসহ পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুর নামক স্থানের বটতলায় প্রতিরোধের জন্য বাঙ্কার করে অবস্থান নেয়। তৎকালীন ঈশ^রদী কলেজের ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান রাজু, আবদুর রাজ্জাক, ওহিদুর রহমান, আবদুল গফুর, আলী আহম্মেদ, নবাব আলীসহ ১৭ জন সহযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলায় নিহত হয়। পাকিস্তানি সেনাবহরের আনুমানিক ৩-৪ জন সৈন্যকে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি, বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে রাজশাহী ফেরার পূর্বেই নানা স্থানের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ বাহিনীদের আক্রমণে পুরো সেনাবহরটি বিধ্বস্ত ও নিহত হয়।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top