logo
news image

যৌবন যার সৎ সুন্দর ও কর্মময় তার বার্ধক্যকে বলা যায় স্বর্ণ যুগ

প্রফেসর ড. মোঃ ফখরুল ইসলাম।  ।  
মানুষের জীবন ক্ষনস্থায়ী, এটা সাধারণত: চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। শিশু, কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধ এ চারটি কালে মানুষের বিকাশ, ব্যপ্তি, কর্ম এবং হিসাব মেলানোর স্পৃহা লক্ষ্যনীয়। যে শিশুটি সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় সে কৈশোরে প্রস্ফুটিত হয়। যৌবন কালে সে যদি ইতিবাচকভাবে নিজের শক্তি, মেধা-মননশীলতার সুবাস ছড়াতে পারে তাহলে সে কৃতকার্য় হয় ও অমরত্ব লাভ করে।  যুগে যুগে কৃতি মানুষের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে তাই পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে। তাই বার্ধ্যক্যের পুঁজি যৌবনের সৎ, সুন্দর ও কর্মময় দিনগুলোকে কেন্দ্র করে সঞ্চিত হয়। বিভিন্ন গবেষনা থেকে জানা যায়,বার্ধ্যক্যে জীবন বড় কঠিন, যা মানব জীবনের প্রথম তিনটি অবস্খায় কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশে সকল জায়গাতেই সরকারগুলো বার্ধ্যক্যে সমস্যা মোকাবেলা করা নিয়ে বিচলিত হচ্ছেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে বার্ধ্যক্য কল্যাণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। প্রতিটি ব্যক্তি যদি নিজের অনাগত সামনের এই দিনগুলো কেমন হবে সে সম্পর্কে আগেভাগে একটু ভাবেন তাহলে তার বার্ধক্যের কঠিন দিকগুলোকে এড়িয়ে একটি সুখী ও স্বর্ণ যুগ রচনা করতে পারেন। এই লেখাটিতে বাংলাদেশের এই উদীয়মান সামাজিক সমস্যাটির ওপর আলোকপাত করে তা সমাধানের জন্য বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।  
একুশ শতকের যে কটি মারাত্মক ও জটিল সমস্যা মানব সভ্যতাকে অস্থির করে তুলবে তার মধ্যে বার্ধক্যজনিত সমস্যা অন্যতম। বিশ শতকে বিজ্ঞানের অন্যান্য সাফল্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভাবনীয় উন্নতি, মৃত্যু হার হ্রাস, গড় আয়ুস্কাল বৃদ্ধি, জন্ম হার নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক স্থানান্তর ইত্যাদির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যা কাঠামোতে এক পরিবর্তন সাধিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞানের এই আশির্বাদ জন্ম দিয়েছে নতুন এক নেতিবাচক অবস্থার, যাকে বলা হচ্ছে বার্ধক্য। বর্তমানে বার্ধক্যকালীন অবস্থা মূলতঃ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট এবং মূল্যবোধ সম্পর্কিত জটিল সামাজিক সমস্যা। কেননা ক্রমবর্ধমান শহরায়ন ও শিল্পায়ন, একক পরিবারের উদ্ভব, যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন আমাদের পরিবারিক আদর্শ ও মূল্যবোদে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এই পরিবর্তন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নানামুখি সমস্যার সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে। প্রসংগত বলা যায়, শিল্প বিপ্লব পূর্ব সমাজে প্রবীণরা শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে জীবন যাপন করতেন। ব্যক্তি কিংবা পরিবারের প্রতি তার ভূমিকা তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো কিন্তু শিল্প বিপ্লোবত্তর যুগে প্রবীণরা আর সেই শ্রদ্ধার জায়গাতে অবস্থান করতে পারছেন না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই তাদেরকে মনে করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় এবং তাৎপর্যহীন।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষ এবং বিষ্ময়কর আবিষ্কার পৃথিবীকে অভিনব উন্নতির সাথে সাথে অনেক সমস্যারও জন্ম দিয়েছে। অসংখ্য সমস্যার মধ্যে বর্তমানে জনসংখ্যা সমস্যা অন্যতম। আর এই সমস্যারই ধারাবাহিক ফল বার্ধক্যজনিত সমস্যা। মূলতঃ গড় আয়ুস্কাল বৃদ্ধি বার্ধক্য জীবনেক সমস্যার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ১৯৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪০ বছরের নিচে। ১৯৯৬ সালে গড় আয়ুস্কাল ৬১ বছর হয়। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৬০ এবং মহিলাদের গড় আয়ু ৫৯ বছর। ২০১১ সালে গড় আয়ুস্কাল ৬৭ বছর হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০৫০ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু হবে ৮০ বছরের মত। অন্যদিকে আমেরিকার জনগণের ১৯০০ সালে গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর, বর্তমানে ২০১২ সালে তা হয়েছে ৮০ বছরের মত। জাপানে ১৯৩৪ সালে পুরুষ মানুষের গড় আয়ু ৩৫ বছর এবং মহিলাদের গড় আয়ু ৪৩ বছর ছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে এই গড় আয়ু পুরুষের ৭৬ বছর এবং মহিলাদের ৮৩ বছর হয়। বর্তমানে সেটা ৮৬ বছর। বার্ধক্যকালীন অবস্থার স্থায়ীত্ব বেড়ে যাওয়ায় এবং তাঁদের দেখভাল করার লোক কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে এটা একটা উদীয়মান ও জটিল সামাজিক সমস্যা হিসেবে রূপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রবীণদের সম্পর্কে বলা যায়, সমসময়ে উন্নত বিশ্বের প্রবীণদের বৃদ্ধির হার ১৩.২% এর তুলনায় আমাদের দেশের প্রবীণ বৃদ্ধির হার কম এবং সমস্যাগুলোও প্রাথমিক পর্যায়ে। তবুও বাংলাদেশের জনসংখ্যার ক্রম বুদ্ধির কথা চিন্তা করে এখনও এই সমস্যাগুলো সমাধানে সুপরিকল্পিত ধাপে অগ্রসর না হলে আরও জটিলতর রূপ ধারণ করবে। কেননা বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ। আর্থ-সামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের জনসংখ্যার আকৃতি, প্রকৃতি ও সংমিশ্রনের গতিধারা বেশ উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে উদ্ভুত প্রবীণ বা বয়স্ক জনসংখ্যা সম্পর্কে জনবিজ্ঞানী, জরা বিজ্ঞানী এবং সমাজ চিন্তাবিদরা যথেষ্ট চিন্তিত। দেশের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের গতি ক্রমনাঃ হ্রাস পাবার পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। ভবিষ্যতে অবস্থার আরও মারাত্মক অবনতি ঘটবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।
আমাদের দেশে ১৯৫১ সালে প্রবীণদের মোট সংখ্যা ছিল ১৮৫৭০০০ জন, ১৯৯১ সালে তা বেড়ে হয় ২৭৪৮৮০০ জন এবং মোট জনসংখ্যায় প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার করে প্রবীণ ব্যক্তি যুক্ত হচ্ছে। ৬০ বছর এবং উর্দ্ধে বয়সের মানুষের পরিমাণ ১৯৯১ সালে পুরুষ ৫.৯% এবং মহিলা ৪.৮% ছিল এবং ১৯৯৮ সালে ৭.৯৫% পুরুষ এবং মহিলা ৭.১০% এ উপনীত হয়।
আবার অন্য এক উৎস থেকে দেখা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১২ কোটি ৯১ লক্ষ ৫৫ হাজার। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৭%। বাৎসরিক জন্মহার প্রতি হাজারে ৯.১%। গড় আয়ু পুরুষ ৫৯ বছর এবং মহিলা ৬০ বছর। আবার জনসংখ্যার অভিক্ষেপ অনুযায়ী ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে প্রায় ১৭ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫১ হাজার।
আমাদের দেশের প্রবীণদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলবে। ১৯৯০ সালে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ ভাগ প্রবীণ ছিল। এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে এবং তা ২০২৫ সালে গিয়ে দ্বিগুনকেও ছাড়িয়ে যাবে অর্থাৎ এদের হার হবে ১০.০৯%। এই তথ্য সহজেই বার্ধক্যজনিত সমস্যার ব্যাপকতা ও গভীরতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
আমাদের দেশে প্রবীণদের অন্যতম নিরাপত্তা হলো পরিবারে ছেলে সন্তান। যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় ছেলে, ছেলে বউ আর নাতি নাতনিদের নিয়ে প্রবীণ ব্যক্তিরা মর্যাদা ও স্বস্থিতে দিন অতিবাহিত করেন। কিন্তু চরম দারিদ্র, একক পরিবারের প্রাধান্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বাস্তবতাকে ভিন্নতর করে প্রবীণ সমাজকে আর্থ-সামাজিক ভাবে করেছে নিরাপত্তাহীন। অবশ্য দেশে প্রবীণদের জন্য পেনশন ব্যবস্থায় প্রথম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা, যা সরকারী পর্যায়ে সীমিতভাবে রয়েছে। তবে জাতিসংঘ প্রবীণদের সামাজিক ও অর্থনেতিক নিরাপতত্তার জন্য সকল রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের বয়স্ক মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ দুঃস্থ বয়স্কদের কল্যাণে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ জন প্রবীণকে মাসিক ১০০ টাকা করে বয়স্ক কল্যাণ ভাতা দিয়েছে। পরবর্তীতে তা শহর পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে এবং পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে বয়স্কদের কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ৪০ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমানে ২০১৮-২০১৯ সালে মাসিক ৫০০ টাকা করে বয়স্ক কল্যাণ ভাতা দিচ্ছে যা প্রয়েজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।
বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ হওয়ায় প্রবীণদের প্রায় ৮০% গ্রামে বাস করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরুপণ করলে এদেশে ৮০% অধিক লোক দরিদ্রতার মধ্যে বাস করে। এই ব্যাপক দারিদ্রের মাঝে অধিকাংশ প্রবীণ জনগণ স্বাস্থ্য-পুষ্টি সমস্যা সহ বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার শিকার হচ্ছে। সঠিক বিবেচনায় দেশের অন্যান্য জনসাধারণের তুলনায় প্রবীণ ব্যক্তিরা তত খারাপ থাকার কথা নয়। তবুও প্রবীণদের একট বৃহৎ অংশ পারিবারিক ভাঙ্গন, মানসিক চাপ, পীড়ন, নিঃসঙ্গতা, অযতœ-অবহেলার মধ্যে কালাতিপাত করছেন।
মানব জীবনের যে চারটি স্তরের তার মধ্যে বার্ধক্যই সবচেয়ে নাজুক অবস্থার স্তর। কৈশোরের চঞ্চলতা, যৌবনের উদ্যমতা তখন থাকে না। জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ যখন বার্ধক্যে এসে উপনীত হয় তখন অবসন্ন ও অলসতা গ্রাস করে। কর্মউদ্দীপনা ফুরিয়ে যায় আর সেই সাথে সাথে মানুষিক দৃঢ়তাও হ্রাস পায়। পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় মন উতলা হয়। এই সময়টাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না অনেকেই। আর তাই বার্ধক্যে দেখা যায় বহুবিধ সমস্যা। বার্ধক্যকে সহজে গ্রহণ করা, এর সাথে সহাবস্থানের প্রবণতা, মানুষিক দৃঢ়তা ও অভিযোজন ক্ষমতার হ্রাসই বার্ধক্য সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রবীণরা কোন বস্তু নয় যে পুরাতন হলে, ভেঙ্গে গেলে বা অকেজো হলে ফেলে দিতে বা অন্যত্র সরিয়ে রাখলেই চলে। প্রবীণরা আমাদের অস্তিত্ব। এই পৃথিবী যতদিন থাকবে, জন্ম-মৃত্যু যতদিন ঘটবে বার্ধক্যও একইভাবে মানব জীবনে পদার্পন করবে। তাই বার্ধক্য সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের পরিবর্তন করতে হবে। প্রবীণদেরকে অবাঞ্চিত না ভেবে ফিরিয়ে দিতে হবে হারানো মর্যাদা। অধিষ্ঠিত করতে হবে শ্রদ্ধার আসনে। তারা যে এ পরিবারের এবং এ সমাজেরই একজন এই আস্থাটুকু প্রবীণদের দিতে হবে।
শেষে বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাভাবিক আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক উন্নয়নের সাথে সাথে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এবং তাদের সমস্যার ভয়াবহতাও ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে প্রবীণদের জটিল সমস্যা মোকাবেলা তাই আমাদেরকে নিতে হবে কার্যকরী ও বিজ্ঞানসম্মত সাহায্যদান কৌশলের আশ্রয়। পেশাগত সমাজকর্ম এক্ষেত্রে আমাদেরকে দিতে পারে সঠিক দিক নির্দেশনা। অর্থাৎ প্রবীণদের জন্য নিবেদিত সেবাকর্মে পেশাগত বৈশিষ্ট্য দিতে হবে। কেননা বাঁচার ইচ্ছা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মূল অংশ। তাই বার্ধক্যেও মানুষ বাঁচতে চায়। মানব জীবনের এ চাহিদা অমোঘ এবং শ্বাশত। তাই প্রবীণদের সে অজানা অনিশ্চিত পথ যেন সুন্দর, সাবলীল এবং মহানুভবতার রসে সিঞ্চিত হয় এটাই তাদের একান্ত বাসনা। আর সে কারণেই সেবা কর্মগুলো হবে সুপরিকল্পিত, লাগসই, মিতব্যয়ী, গণসমাদৃত এবং প্রবীণদের জন্য ইস্পিত ও উপযোগী। ১৯৯১ সাল থেকে জাতিসংঘ ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ঘোষণার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও প্রবীণ কল্যাণ কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সরকার, পৃষ্টপোষকের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে এসেছে। উন্মুক্ত হয়েছে দাতা সংস্থাগুলোর অর্থের ঝাঁপি। প্রবীণদের জন্য এগুলো আশার সংবাদ। কিন্তু এখন প্রয়োজন প্রবীণদের জন্য দেশজ ব্যবস্থা। উন্নত দেশের সামাজিক প্রযুক্তি আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসামঞ্জস্য প্রতীয়মান হয়। তাই সমাজকর্মীদের সহায়তায় বিদেশী সামাজিক প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রণয়ন করা দরকার কার্যকরী দেশজ প্রবীণ কল্যাণ ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে বর্তমান কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলিষ্ঠ উদ্যোগ, “তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই”। কারণ আজকের নীতি নির্ধারক, পরিকল্পনাবিধ, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এক দশক অথবা দু’দশক পরেই পরিগণিত হবেন প্রবীণ হিসেবে। আজকে যদি তিনি প্রবীণদের জন্য গড়ে তুলেন কর্মসূচি ও অবকাঠামো তবে কাল তিনিই হবেন এর পরিতৃপ্ত ভোক্তা। সৃজনশীল কর্মী হিসেবে বার্ধক্যে তিনিই থাকবেন একজন গর্বিত ও সফল প্রবীণ ব্যক্তিত্ব হয়ে।
আমরা যারা এখনও দেহ মনে শক্তিতে ভরপুর আছি, সর্বপ্রকার অলসতা পরিহার করে সময় থাকতেই সেই অনাগত জবুথুবু অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে সেই শক্তিকে সৎ, সুন্দর ও কর্মমূখর করে তুলি । বার্ধ্যক্যের পুঁজি যৌবনের সৎ, সুন্দর ও কর্মময় দিনগুলোকে কেন্দ্র করে সঞ্চিত হয় বিধায় যৌবন কালকে সবার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে অতিবাহিত করতে হবে। অলসতা, অসততা, অনৈতিকতা পরিহার করে নিজ নিজ ধর্ম পালনের মধ্য দিয়ে একটি নির্ভেজাল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। যৌবনকালে নিজ নিজ দায়িত্বে অবহেলা না করে সময়ের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। যৌবনের সৎভাবে অর্জিত সম্পদ পরিমিতভাবে সৎকাজে ব্যয় করার পর কিছুটা সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যৌবনকালে অবহেলা না করে পরিবারের ছোট সদস্য ও পোষ্যদেরকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। কারণ, পরিবারের ছোটরা দক্ষ ও সৎ মানব সম্পদে পরিণত হলে ভবিষ্যতে প্রবীণদের জন্য প্রতিদিন শান্তির সুখবর শোনাতে পারবে, এতে প্রবীণদের স্বাস্থ্য ভাল খাকবে ও আয়ু বেঢ়ে যাবে। তাই আসুন, সবাই নিজ নিজ যৌবনকালকে সৎভাবে কাজে লাগাই। জর্জ গ্রসভিল-এর সেই কথারই প্রতিধ্বনি হোক, “যৌবন যার সৎ, সুন্দর ও কর্মময় তার বার্ধক্যকে বলা যায় স্বর্ণ যুগ”।

* প্রফেসর ড. মোঃ ফখরুল ইসলাম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান।  E-mail: fakrul@ru.ac.bd

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top