logo
news image

কোন অশুভি শক্তিই আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ভাষাকে ধ্বংস করতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।  ।  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন অশুভি শক্তিই আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ভাষাকে ধ্বংস করতে পারবে না বলে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের জনগণ আজ বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য ঘুরে দাাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যা কিছু অর্জন তার সবই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয়েছে। পাকিস্তানী শাসকগণ এবং ’৭৫ পরবর্তী শাসকেরা বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল। ভবিষ্যতেও কেউ বাংলার জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে বাংলদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় বারের মত সরকারে এসেছে। অর্থাৎ জনগণের যে আস্থা ও বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমাদের দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ননের যে ধারাটা আজকে সূচিত হয়েছে এ ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। আর সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে তাঁর সরকার উন্নয়ন করতে পেরেছে বলেই আজকে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ একটা সম্মান পেয়েছে, মর্যাদা পেয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসিবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আভির্ভূত হবে এবং দেশের টেকসই উন্নয়ন ও জনগণের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে একশ’ বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি ঘরে পৌঁছায় ইনশাল্লাহ দেশকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলবো। তৃণমূলের, সেই গ্রামের মানুষটাও সব রকমের নাগরিক সুবিধা পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে।
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আলোর পথে যে যাত্রা আমাদের শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত রাখা হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।
দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কালের কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
দলেন প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা আখতারুজ্জামান, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একেএম রহমতউল্লাহ ও সাদেক খান এবং মেরিনা খান কবিতা।
তিনি বিএনপি’র নীতিহীনতার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলা ১৪শ’ সাল উদযাপনে বাধা প্রদানের কথাও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘একটি শতাব্দি থেকে আমরা আরেকটি শতাব্দিতে পদার্পণ করছি। সেটা উদযাপনের জন্য আমরা কবি সুফিয়া কামালকে প্রধান করে কমিটি করি। আমরা বিরোধী দল থেকেই এই নতুন ১৪০০ সালকে বরণ করার উদ্যোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠান করতে দেবে না বলে বাধা দিল এবং সে জায়গা ঘেরাও করে রাখলো। বাঙালি বাধা মানেনি। ¯্রােতের মত মানুষ সেখানে ঢুকে গেল এবং ট্রাকের ওপর মঞ্চ বানিয়ে আমরা ১৪০০ সালকে বরণ করে নিয়েছিলাম। কারণ জাতির পিতা বলে গেছেন- বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং বুধবার দিবাগত রাতে চক বাজারের অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই পকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচনা করা হয় এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা এবং বাজেটে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। যা ’৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল জারি করে ক্ষমতা দখলের পর বন্ধ হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালিরা যখনই কোন সুযোগ পেয়েছে তখনই এর ওপর কোন না কোন আঘাত আসার যে প্রক্রিয়া পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন ভাল থাকে তখন স্বৈরশাসকদের চাটুকার কিছু মানুষ রয়েছে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর যথন কোন অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসে তখন তারা খুব তৃপ্তি অনুভব করে, কারণ তখন তাদের মূল্য বেড়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই নিজেদের ক্ষমতার আস্বাদ গ্রহণের জন্য তারা (স্ধুাবাদি গোষ্ঠী) সবসময় জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘লড়াইয়ের মধ্যদিয়েই আমরা আমাদের এই দাবি আদায় করতে পেরেছি। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি।’
এই মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে পাকিস্তানের একটি গোষ্ঠীর ভাষা উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পকিস্তানী শাসকেরা বহু খেলা খেলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা স্কুলে পড়ার সময় দেখেছেন- বাংলা অক্ষরের পরিবর্তে আরবী হরফে এবং পরে রোমান হরফে বাংলা লেখানোর চেষ্টা করা হয়। যেটার প্রতিবাদও ছাত্ররা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবে নতুন নতুন চেষ্টা আর ফর্মূলা বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবারই আমরা ছাত্ররা এবং বাংলাদেশের জনগণ প্রতিবাদ করেছি। ১৯৪৮ সালে যেমন ছাত্রলীগের জন্ম তেমনি ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম, কাজেই এসকল প্রতিবাদে সংগঠনটি শুরু থেকেই অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে।’ ‘কাজেই এই বাঙালি জাতির যা কিছু অর্জন তার সবই সংগ্রামের মধ্যদিয়েই অর্জিত হয়েছে।’
এ সময় তিনি ১৯৯৬ সালে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কতৃর্ক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণায় কানাডা প্রবাসী রফিক এবং সালামসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়ে গেছে তাদের রক্ত কখনও বৃথা যায় না, বৃথা যায়নি। তাই এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদা পাওয়ায় আজ বিশ্বের বহুদেশে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছে এবং দিবসটি পালিত হচ্ছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে গৌরবের বিষয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে মহৎ দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ একটি ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র।’
’৭৫ পর পরবর্তী শাসকগণ বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের অস্তিত্বের কোনটাতেই বিশ্বাস করতো না উল্লেখ করে ’৭৫-এর বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বাঙালির জীবনে যদি এ দিনটি না আসতো তাহলে বাংলাদেশ আরো বহু আগেই একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেত।’
২০০১ সালের নির্বাচনের পর নৌকার সমর্থক সাধারণ জনগণ, সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসকে একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৈরাজ্য ও নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন- ‘হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আমরা হারিয়েছিলাম, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করা হয়, দুইজন সংসদ সদস্যকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল এবং নারীরা গণধর্ষণ শিকার হয়।’
এবারের নির্বাচনে বিএনপি’র ভরাডুবির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে ৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট মাত্র ২৮টি সীটে জয়লাভে সমর্থ হয়েছিল।’
এ সময় ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অগ্নি সন্ত্রাস, পুড়িয়ে প্রায় ৫শ’ মানুষ হত্যা, সরকারি এবং বেসরকারি সম্পদ ধবংস, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৯ জন সদস্যকে হত্যা, ৫৮২টি স্কুলে অগ্নিসংযোগ, রাস্তা-ঘাট, রেল লাইন ও গাছপালা বিনষ্ট, লঞ্চ পুড়িয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন দিয়ে সেই আগুনে ফেলে বিদ্যুতের প্রকৌশলী হত্যার অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেই ভয়াবহ স্মৃতি সকলেরই মনে আছে, খুব বেশি দিনের কথা নয়। কাজেই জনগণ এদেরকে ভোট দেবে কেন? এদের প্রতি কারো সহানুভূতি দেখি না। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের এবারের নির্বাচনকালীন ভূমিকার সমালোচনা করে প্রতি আসনে টাকার বিনিময়ে দুই তিনজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে প্রতিটি আসন নিলামে তুলে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের ঘটনার উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তারা ৩শ’ আসনে প্রায় ৯শ’ জনকে মনোনয়ন দেয়। অর্থাৎ একেক আসনে দুই-তিনজন করে মনোনয়ন দেয়। বিএনপি মনোনয়ন প্রত্রিয়া অকশনে দেয়, যে যত বেশি টাকা দিচ্ছে সে মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছে। যাদের মনোনয়র দিলে সেসব আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনা ছিল তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলে অনেক প্রার্থী নিজেরাই এই অভিযোগ করে গেছে।
বিদেশে অবস্থানকারী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘লন্ডন থেকে ফোন পেয়েছে এত টাকা হলে মনোনয়ন পাবে, সে টাকা দিতে পারেনি বলে যোগ্যরা মনোনয়ন পায়নি।’
এ প্রসঙ্গে বিদেশে অবস্থানকারী বিএনপি’র এক প্রার্থী দলীয় সুপ্রীম কমান্ডের সবুজ সংকেত পাওয়ায় সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান এবং দূতাবাসে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রকাশ্যেই সেই নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের বাণিজ্য করেছে তারা জেতার স্বপ্ন দেখে কিভাবে? আর জিতবে কিভাবে? সবচেয়ে বড় কথা যুদ্ধাপরাধী- জামায়াত যারা নিবন্ধিত নয়, তাদেরকেও মনোনয়ন দেয়ায় জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদেরকে এদেশের মানুষ ভোট দেবে না এবং দেয়নি।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top