logo
news image

দেশের ইতিহাসে প্রথম পথ বইমেলা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর।  ।  
রাস্তার পাশে শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত চা-আড্ডার চত্বর। দিনরাত চা পানে সেখানে আসেন অসংখ্য মানুষ। তবে ২১ শে ফেব্রুয়ারীর সকালে যারা চা পানে এ চত্বরে এসেছেন, সকলেই হয়েছেন অভিভূত। আড্ডার জায়গায় কোন বইমেলা বসতে পারে, নাটোরকে বাংলা সাহিত্যে আলোকিত করা লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা বসতে পারে, তা কল্পনাও করেননি অনেকে।
বইমেলার চিরায়িত দৃশ্যপট খানিকটা বদলে এবার নতুন এক বইমেলার সাক্ষী হয়েছে নাটোর। এবারের একুশকে সামনে রেখে নাটোরে পথ বই মেলার আয়োজন করা হয়। এই পথ বই মেলা ছিল প্রকাশ্যে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের ধারে। খোলা মেলা এই পথ বইমেলার স্থান করা হয়েছে শহরের কানাইখালীস্থ নাটোর প্রেসক্লাবের বিপরীতে সড়কের ধারে বসা কয়েকটি চায়ের দোকান সংলগ্ন একখন্ড জায়গাতে।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই পথ বই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার হামিদা আক্তার বানু, যিনি একজন গর্বিত মা। স্থানীয় লেখক বদরে মুনি সানির গর্ভধারিণী মাতা। নাটোরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই পথ বইমেলা আয়োজন করা হয়। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান ছিল নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকা।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রান্তজন স্থানীয় প্রয়াত তিন সাহিত্যানুরাগী লেখক হানিফ আলী শেখ, রশিদুজ্জামান সাথী ও দেবরাজ সাহার নামে বইমেলাটি উৎসর্গ করেছে। এই বই মেলার প্রধান আর্কষণ ছিল স্থানীয় লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্ম তথা বই প্রদর্শনী বইমেলা।
এ পথ বইমেলার আয়োজক দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিম বলেন, স্থানীয় লেখক-কবি-সাহিত্যিকরা তাদের লেখনী দ্বারা দেশব্যপী সমাদৃত ও পরিচিত । তাদের সৃষ্টিকর্মগুলোর সাথে নাটোরবাসীকে পরিচয় করিয়ে দেয়াই পথ বইমেলার মূল উদ্দেশ্য।
লেখকদের এতো বই কেউ দেখেনি আগে:
এক স্টলে নাটোরের লেখকদের এত বই এর আগে দেখেনি নাটোরের কেউ। কবিতা, ছড়া, গল্প, সাসপেন্সসহ বিভিন্ন বই যে নাটোরের লেখকরা লিখেছেন, তা জানতেন না অনেকেই।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নাটোর প্রেসক্লাবের বিপরীতে উন্মুক্ত স্থানে একদিনের এই বইমেলায় স্থানীয় লেখক, ছড়া ও গল্পকার, প্রবন্ধ লেখক, চিত্রশিল্পি, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতিতে উদ্বোধনের পর পাঠকের ঢল নামে কানাইখালীর পথবইমেলায়। ‘লেখক পাঠক বই, একত্রিত হই’ শ্লোগানে মেলায় নাটোরের ৩০ জন লেখকের শতাধিক বই অটোগ্রাফসহ বিক্রি ও প্রদর্শিত হয়। মেলা চলবে রাত্রি নয়টা পর্যন্ত। বইমেলার স্থান নির্ধারণে বৈচিত্র্য আনায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানের ভুয়সী প্রশংসা করেন উপস্থিত গুণীজনরা।
মেলায় নাটোরের লেখকদের মধ্যে এম আসলাম লিটন, কামাল খাঁ, শিবশঙ্কর পাল, রিপন মাহমুদ, বদরে মুনীর, শামীম সাইদ, রফিকুল কাদির, আতোয়ার হোসেন, জাহিদুল মাসুদ, আশীক রহমান, গণেশ পাল, মুজিবুল হক শাওন, কার্তিক উদাস, আসাদ জামানসহ প্রমুখ বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
গুণীজনরা বলেন, নাটোরের এই পথ বইমেলা সম্ভবত বাংলাদেশে প্রথম আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় চিত্রশিল্পি, লেখক, কথা সাহিত্যিক, ছড়া ও গল্পকার এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট গুণীজনরা যে চা চত্বরে বসে আড্ডা দিয়েছেন, সেখানেই তৈরি করেছেন নতুন নতুন গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, শিল্প ও সাহিত্যের মননশীল চর্চা করেছেন, সেই জায়গাটিকে ঘিরেই এই পথ বই মেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। এই খোলা মেলা পথ বইমেলার আয়োজনই প্রথম আনন্দ, প্রথম উচ্ছাস এবং প্রথম ভালবাসা। এই আয়োজন সামান্য হলেও নাটোরের বিদগ্ধ পাঠককুলকে নাড়া দিয়েছে। এই আয়োজন সফল হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রথমবারের মতো নাটোরের লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের বইগুলো একত্রিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই পথ বই মেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামী দিনেও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
পথ বইমলো নিয়ে যা বললেন গুণীজনরা:
নাটোরের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক প্রান্তজন আয়োজিত একুশের প্রথম পথ বইমেলার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাঠক-গুণীজনরা। এমন আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান ছিল তাদের কন্ঠে।
নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, নাটোরে একসাথে এতো লেখকের মিলনমেলা ও তাদের সৃষ্টি সমাহার তিনি কোনদিন দেখেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তার সম্পাদক মালেক শেখ বলেন, পথ বইমেলাটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। সৃষ্টিশীলতাকে সম্মান জানানোর এ আয়োজন নাটোরের ইতিহাসে সত্যিই ইতিহাস হয়ে থাকবে।
নাটোর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কলামিস্ট রেজাউল করিম খান বলেন, ব্যতিক্রমী পথ বইমেলার আয়োজন তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করবে মানসম্পন্ন লেখার জন্য। আগামীতে এ আয়োজন অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পি ও লেখক এম আসলাম লিটন বলেন, ঐতিহ্যের নাটোরে এ ধরনের আয়োজনে আমরা গর্বিত। নাটোরের লেখকদের দেয়া বিরল এ সম্মান আমরা সাদরে গ্রহন করছি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুজিবুল হক নবী বলেন, এই আয়োজন চেনাজানা অনেকের মিলন মেলা। যা অভিভূত করছে সকলকে। এ এক অন্যরকমের অনুভূতি।
লেখক খালিদ বিন জালাল বাচ্চু বলেন, এ আয়োজন নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। আমাদের সকলকে আনন্দ দিচ্ছে। একত্রে এত লেখকের বই দেখে ভাল লাগছে। যারা রয়েছেন তাদের সাথে পরিচিত হওয়া এবং তাদের লেখা সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাঠকদের সমৃদ্ধ হওয়ার এমন সুযোগ কখনও হয়নি। এজন্য আয়োজন প্রতিষ্ঠানকে সাধুবাদ জানাতে হচ্ছে।
ছড়াকার কামাল খা বলেন, এই উদ্যোগ প্রথমবারের মতো নাটোরের লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের বইগুলো একত্রিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
যে কোন ভালো উদ্যোগে পাশে থাকবে জাগোনাটোর:
দায়িত্বশীলতার সাথে সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি নাটোরের যে কোন ভালো উদ্যোগে পাশে থাকবে অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগোনাটোর টোয়েন্টিফোর ডটকম। জেলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যেকে দেশসহ বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে মিডিয়াসাপোর্টর মাধ্যমে পৃস্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসবে শুধুমাত্র নাটোরের সংবাদ প্রকাশ করা এ নিউজপোর্টালটি।
বৃহষ্পতিবার সকালে শহরের কানাইখালী চা চত্বরে স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক প্রান্তজন আয়োজিত দেশের প্রথম পথ বইমেলায় বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন জাগোনাটোর টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রকাশক, একুশে টেলিভিশন ও দৈনিক সমকালের নাটোর প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু এবং সম্পাদক ও ইংরেজী পত্রিকা ডেইলি এশিয়ান এইজের নাটোর প্রতিনিধি নাইমুর রহমান।
জাগোনাটোর টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রকাশক নবীউর রহমান পিপলু বলেন, প্রকাশনার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে দৈনিক প্রান্তজন পথ বইমেলার আয়োজনের মাধ্যমে লেখকদের সাহস যুগিয়েছে যা অনন্য। পথ বইমেলায় বিপুল পাঠক-লেখকের অংশগ্রহন জানান দেয় নাটোরের সব মানুষ লেখালেখি না করলেও লেখকদের কদর করতে জানে।
নিজের বক্তৃতায় জাগোনাটোর টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক নাইমুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে শহরের সবচে’ ব্যস্ত চা-আড্ডার চত্বরে প্রান্তজন আয়োজিত পথ বইমেলায় আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারীর যারা চা পানে এ চত্বরে এসেছেন, সকলেই হয়েছেন অভিভূত। আড্ডার জায়গায় বইয়ের মেলা বসতে পারে, নাটোরকে বাংলা সাহিত্যে আলোকিত করা লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা বসতে পারে, তা কল্পনাও করেননি অনেকে। দৈনিক প্রান্তজন তা করে দেখালো। সংবাদপত্র হিসেবে নিয়মিত প্রকাশনার পাশাপাশি নাটােরের লেখক ও তাদের সৃষ্টিকর্মকে সম্মানিত করার এ প্রয়াস দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। নাটোরের লেখকদের সাহিত্যকর্ম একত্র করার সুযোগ করে দিয়ে তাদের সম্মানিত আর পাঠকদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতির সুযোগ করে দিয়েছে প্রান্তজন। প্রান্তজনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আগামীতে নাটোরের যে কোন ভালো উদ্যোগে পাশে থাকবে জাগোনাটোর টোয়েন্টিফোর ডটকম।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top