logo
news image

বিস্মৃতির স্মৃতি

-ইমাম হাসান মুক্তি।  ।  
আমাদের ক্যাম্পাস নিয়ে লেখার মন আর নেই। যত স্মৃতি-বিস্মৃতি আছে তা লিখতে গেলে পুরো স্মরণিকায় ধরবে না। তাই আমার বন্ধুদের বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না। আমি শুধু কিছুটা স্মৃতি চারণ করবো। মনের মানুষদের প্রতি একটু কৃতজ্ঞতা জানাবো।
ক্যাম্পাসের কথা মনে হতেই আবেগ আপ্লুত হয়ে যাচ্ছি। চোখের সামনে ভেসে উঠছে আপন মুখ। অশ্র“সিক্ত হয়ে হয়ে যাচ্ছে চোখ। আমরা হারিয়েছি শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক জনাব মো. হাবিবুর রহমান স্যারকে। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু বিদ্যুৎ রঞ্জন দত্ত এবং মরণব্যাধি ক্যান্সারে মো. আবুল কালাম আজাদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তা আজও বিশ্বাস হয় না। তাঁদের আত্মার শান্তির জন্য প্রাণভরে দোয়া করি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর ভালবাসা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ১৯৮৭ সালে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি।১৯৯৩ সালে খোলা হয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ। ১৯৯৪ সালে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনাব তুলসী কুমার দাস ও জনাব মো. ফখরুল ইসলামকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে সমাজকর্ম বিভাগ। ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষা বর্ষে প্রথম ব্যাচে ৪৮ জন শিক্ষার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত øাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে ৪২ জন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুলাই গঠিত হয় সমাজকর্ম সমিতি। শুরু থেকেই সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীদের পদচারণা দেখা যায় ক্যাম্পাস জুড়ে। এমন কোন ক্ষেত্র ছিল না, যেখানে সমাজকর্ম বিভাগের সম্পৃক্ততা নেই। শাকসু’র মহিলা সম্পাদক ও নাট্য সম্পাদক, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যায় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, শিকড়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সাস্ট ডিবেটিং ক্লাবের আহবায়ক, চোখ ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় ডিএণ্ডসি ক্লাব টিম ক্যাপ্টেন, শাহপরাণ হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নির্বাচিত ও মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও অহনা, রোটারেক্ট ক্লাব, সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ট্যুরিস্ট ক্লাব, রোভার স্কাউটস-এর সদস্য পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল, হ্যাণ্ডবল, বাস্কেট বল, ক্রিকেট টিমসহ সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া নৈপূন্যে দখল দারিত্ব ছিল অনস্বীকার্য। রাজনৈতিক অঙ্গনেও তাদের পদচারণা ছিল নক্ষত্রের মতো। সমাজকর্ম এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভারত সফরের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক শিক্ষা সফরের এক নজীর সৃষ্টি করে।
ডিসেম্বর ১৯৯৩- জুলাই ১৯৯৮। সাড়ে চার বছর। এ সময়ে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান স্যার ছাড়াও শিক্ষক হিসেবে ছিলেন, জনাব তুলসী কুমার দাস, জনাব মো. ফখরুল ইসলাম, জনাব মোস্তফা হাসান, জনাব মাহবুবা সুলাতানা, জনাব মো. রেজাউল ইসলাম, জনাব মো. আবুল হোসেন, জনাব আমিনা পারভীন, জনাব মো. ছাদেকুল আরেফিন, জনাব সৈয়দা সুলতানা পারভীন, জনাব শর্মিষ্ঠা রায়, জনাব কে এম রবীউল করিম, জনাব মো. হাসান রেজা জামী, জনাব নাসির আহমেদ এবং নিয়াজ আহমেদ। খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ছিলেন, জনাব মো. নাজিমুদ্দিন আহমেদ ও জনাব মো. নূরুল হক চৌধুরী। অফিস সহকারী ছিলেন, জনাব মো. ফজলুল হক ও ফারুক আহমেদ। পিয়ন ছিলেন, সৈয়দ আনিসুর রহমান ও মণিলাল দাস।
স্মৃতির পাতা উল্টাতে গিয়ে প্রথম ব্যাচের বন্ধুদের নামগুলো উল্লেখ না করে পারছি না। কারণ বন্ধুদের ভালবাসার ঋণ শোধ করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। বন্ধুরা ভালবাসা ভরে স্মরণ করি তোমাদের, মোহাম্মদ তৌহিদ চৌধুরী, হেলাল আহাম্মদ, মোহম্মদ জাহিদ হোসেন, শামীমা খানম উর্মী, মো. আসাদুজ্জামান, মো. আবু ইউসুফ, মো. জামাল হোসেন রিয়াদ, মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, নবারুন দে বাবু, নওশিন হামিদ চৌধুরী লুনা, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন রওনক, মো. মাছুদুল হক, শাহিনা আক্তার, তানজিনা সালাম মুন্না, রোমান বখত চৌধুরী, মো. আব্দুর রশিদ, নকুল চন্দ্র পাল, মোহাম্মদ আবুল কালাম টুটুল, জুনেদ হুসেইন চৌধুরী, মো. ইমতিয়াজুল ইসলাম পাভেল, মীনাক্ষি দাস পাপ্পু, রাজবীন সাবেকা রিজু, সাঈদা রশীদ মুনা, সুমিতা দে, তাহজিবা আশরাত জাঁহা চৌধুরী ডালিয়া, দিলরুবা চৌধুরী, কামাল উদ্দীন, বিদ্যুৎ রঞ্জন দত্ত, আহমদ তানভীর তামান্না, মো. আবুল কালাম আজাদ, শফিকুর রহমান চৌধুরী, মু. জিল্লুর রহমান, আবুল খায়ের মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান স্বাধীন, মো. সাঈদ হোসেন রুবেল, মোহাম্মদ মনজুরুল হক লিটন, তাসলিমা বেগম নাসরিন, কে এম শামীম সাগর, সাহেদা বেগম, মোহাম্মদ মাসুক আজাদ সালেহীন ও ঝিনি সেন।
বন্ধুরা দেখা হবে ক্যাম্পাসে। দেখা হবে ডি বিল্ডিয়ের করিডরে। দেখা হবে শাহপরাণ হলে। দেখা হবে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে। সে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আসবে নতুন প্রভাত। প্রথম আলো। ভাল থেকো। সুখে থেকো।
(লেখাটি সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম পূনর্মিলনী'২০১৩ তে প্রকাশিত)

* ইমাম হাসান মুক্তি: অধ্যক্ষ, মাজার শরীফ টেকনিক্যাল এণ্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট উইমেন্স কলেজ ও সম্পাদক, দৈনিক প্রাপ্তি প্রসঙ্গ। 

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top