logo
news image

শ্রদ্ধায় স্মরণ মহানায়িকার প্রয়াণ দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা।  ।  
অভিনয় গুণে যিনি হয়ে উঠে ছিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের মহানায়িকা, ২০১৪ সালের এই দিনে ৮৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।  
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী মহানায়িকা পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের ৫ম প্রয়াণ দিবস স্মরণে পদযাত্রা, আলোচনা সভা ও সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্রের গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষ্যে সকাল দশটায় পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে (সুচিত্র সেন সংগ্রহশালা) স্থাপিত সুচিত্রা সেনের মুর‌্যালে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। পরে সেখান থেকে এক স্মরণ পদযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে সুচিত্রা সেনের শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যাপিঠ পাবনা টাউন গার্লস স্কুলে এসে শেষ হয়। সেখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সহ-সভাপতি ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতিয়ুর রহমান, পাবনা সংবাদ পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারন সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু প্রমূখ।
এছাড়াও বেলা ১২ টায় স্থানীয় অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি অডিটরিয়ামে স্মরণ সভার আয়োজন করে সপ্তসুর সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনের উপদেষ্টা প্রলয় চাকীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, সাধারন সম্পাদক আখিঁনুর ইসলাম রেমন, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। পরে সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন করা হয়।
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেন। যার অনবদ্য অভিনয় আজও দাগ কেটে আছে কোটি দর্শকের হৃদয়ে। অভিনয় গুণে যিনি হয়ে উঠেছিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের মহানায়িকা। আজ ১৭ জানুয়ারি তার পঞ্চম প্রয়াণ দিবস। ২০১৪ সালের এই দিনে ৮৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। সুচিত্রা সেনের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তার জন্মস্থান পাবনায় স্মরণসভার আয়োজন করেছেন জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন।
পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি জেলার সংস্কৃতিপ্রেমীদের আবেগের একটি জায়গা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়িটিকে গত কয়েক বছরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘কিংবদন্তী মহানায়িকা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ হিসেবে।
সেখানে সুচিত্রার ছবি এবং তার জীবনের বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত বিলবোর্ড, পুস্তিকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ রয়েছে। বাড়ির আঙিনায় সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে সুচিত্রার একটি মুর‌্যাল। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে মহানায়িকার বিশালাকৃতির একটি ম্যুরাল। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন সব ফুলের গাছ।
পাবনাবাসীর আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে সুচিত্রা সেনের নাম। তাই মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়িটিকে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভে পরিণত করার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের দখলে ছিল কিংবদন্তি বাড়িটি। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে জেলা প্রশাসন এটিকে দখলমুক্ত করে।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান এই বাড়িতে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাবনায় বেড়াতে যাওয়া ভ্রমণপিপাসুরা সুচিত্রার বাড়িতে গিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
দর্শণার্থী রেজাউল হোসেন বলেন, আমি পাবনার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখের জন্য ভোলা থেকে এসেছি। সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি ঘুরে আমি মুগ্ধ। সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালার মাধ্যমে এটির সংরক্ষণ করায় তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান মৌ বলেন, পাবনাবাসীর আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুচিত্রা সেনের নাম। স্বচক্ষে না দেখলেও তার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে আমার মনে হয়েছে সে যুগে সমাজের আধুনিকায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। মহান এই নায়িকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।  
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত সুচিত্রা সংগ্রহশালা দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী নুরুজ্জামান জানান, এখানে আমি ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে কাজ করছি। সোমবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এই সংগ্রহশালা খোলা থাকে। পাবনা ছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু দর্শনার্থী এখানে আসেন। কলকাতা থেকেও প্রায় প্রতিদিনই আসেন দর্শনার্থীরা। এই সংগ্রহশালা দেখে তারা মুগ্ধ ও আনন্দিত হন।  
পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, বাড়িটি সুচিত্রা সেনের স্মৃতিবিজড়িত বিধায় আমরা সেভাবেই এটিকে সাজিয়েছি। এবারেও আমরা ১৭ জানুয়ারি প্রয়াণ দিবসের স্মরণসভায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে এই মহানায়িকার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো এবং আমাদের ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা সম্ভব হবে। এই জায়গাটিকে ঘিরে স্থানীয় কিংবা পর্যটকদের কোনও পরিকল্পনা থাকলে আমরা সেটাও বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তা করব। কয়েকদিন আগে সাংস্কৃতিক সচিব এসে এখানে ঘুরে যান। তিনি আমাদের সবগুলো পরিকল্পনাতে সাড়া দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top