logo
news image

বাগাতিপাড়ায় গণসংবর্ধনায় ফুলে ফুলে সিক্ত এমপি বকুল

মো. মঞ্জুরুল আলম মাসুম।  ।  
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল গণ সংবর্ধণায় ফুলে ফুলে সিক্ত হলেন। এমপি হিসেবে শপথ গ্রহনের পর প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে পেড়াবাড়িয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ এ গণ সংবর্ধনার আয়োজন করে। উপজেলার প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার জনতা এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিকালে সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল যোগদান করলে বরণ সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁকে বরণ করা হয়। এরপরই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও ব্যাক্তিগত পর্যায় থেকে ফুলে ফুলে অভিনন্দন জানানো হয় এই নবনির্বাচিত সাংসদকে। এর আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ দলে দলে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারন মানুষ অনুষ্ঠান স্থলে হাজির হন। প্রিয় সাংসদকে বরণ করতে জনস্রোতে কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায় স্কুল মাঠ। অনেকেই পাশের রেলের ধারে বসে সাংসদের বক্তব্য শুনেন। অনুষ্ঠান স্থলে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ দিবস উপলক্ষে উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক সেকেন্দার রহমানের সঞ্চালনায় জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল। অনুষ্ঠানে উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের পরই সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। দিক নির্দেশনামুলক ও তাঁর সংসদীয় এলাকা নিয়ে পরিকল্পনার কিয়দাংশ তুলে ধরে প্রায় বিশ মিনিটের এ বক্তব্য উপস্থিত সকলেই মনযোগের সাথে শোনেন এবং সাংসদের ভাষা শৈলীতে মুগ্ধ হন।
সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল তাঁর ভাষণে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ জনপদকে এগিয়ে নিতে হবে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত জনপদ হিসেবে এ এলাকাকে গড়তে চাই’। তিনি বলেন, ‘৩০ বছরের রাজনীতি জীবনে ব্যক্তিগত শক্তি বৃদ্ধি করি নাই। কোন ক্ষেত্রেই দুটি টাকা আত্মসাৎ করি নাই। শুধু আওয়ামী লীগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চেয়েছি। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ কখনও করি নাই। যে ধরনের নেতৃত্ব দেশকে এগিয়ে নিতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে সেই কাজ করেছি।’
সাংসদ বকুল জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি আগেও যে বকুল ছিলাম, এখনও আছি। আমি জনগনের ভালবাসা পাবার জন্য রাজনীতি করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় যত কাঁচা রাস্তা আছে, তা আর থাকবে না। পাকা করা হবে। অনেক এমপি ছিলেন, কেউ কথা রাখেন নি। আমি কথা নয় কাজ করে দেখাতে চাই। আর কোন কাজের জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বা আমার কোন লোককে কোন টাকা দিতে হবে না’।
এই জনপদকে মাদকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর শক্ত অবস্থান তুলে ধরে থানার ওসি’র উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীর পক্ষে আমার দলের কোন তদবির কর্ণপাত করবেন না। আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় কোন নেতা যদি এহেন কাজ করে আমার বলার অপেক্ষায় থাকবেন না, তাকে গ্রেপ্তার করবেন। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। এটা শেখ হাসিনার নির্দেশ। শেখ হাসিনার নির্দেশ মানাই আমার আপনার কাজ’।
চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে সাংসদ বকুল বলেন, ‘চাঁদাবাজি কোন কর্ম হতে পারে না, চাঁদাবাজ মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে না। সেই কারনে যারা এসব কর্মের মধ্যে আছেন, এখন থেকে তারা তওবা করে ঘরে ফিরবেন। কোন চাঁদাবাজি আমি বরদাস্ত করব না। যারা সুষ্ঠু ধারায় ফিরে আসবে তাদের কর্মের ব্যবস্থা আমরা করব।’ তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি এই জনপদে আগামী দিনে কীভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। কীভাবে কৃষকের সন্তানরা পড়া-শুনা শেষ করে কর্ম পেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও পদ্মাপাড়ে অর্থনৈতিক জোনকে পুনর্জীবিত করার মধ্য দিয়ে আমি কৃষক সন্তানদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। সেই কারনে সকলের সহযোগীতা চাই।’
তিনি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কেউ আমার শত্রুতা নয়। কারও সাথেই আমার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নাই। আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। এটি আমি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছি। বিধায় আমার প্রতি সবাই আস্থা-বিশ্বাস রাখবেন। যতক্ষণ আপনারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে থাকবেন, যতক্ষণ আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষা করে যাবেন ততক্ষণ কারও সাথে আমার বিরোধ থাকবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। সংগঠনের স্বার্থ রক্ষা করেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। বর্তমানে আমি এমপি হয়েছি। আমি এমপি শুধু আওয়ামী লীগের নয়, জনগণের। আমি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা হতে চাই না, জনগণের নেতা হতে চাই। অন্যদলের লোকেরাও আমার কাছে আসতে পারবেন।’
তিনি দলের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, ‘এই দেশের যা কিছু আওয়ামী লীগ করেছে। যে সমস্ত দল রাতারাতি রাইফেলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে এই জনপদে তারা কিছুই করে নাই। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য এতকিছু করছে যে, আজকে পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে হচ্ছে, আজকে মেট্রোরেল হচ্ছে, আজকে পাতাল সড়ক হচ্ছে, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। সারা বিশ্বে আজকে রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেখছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সেই কারনে আমাদের উচিৎ শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top