logo
news image

মন্ত্রী হিসেবে নাটোরে ডাক পাচ্ছেন কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর।  ।  
গত বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) শপথ গ্রহন করেন নাটোরের চারটি আসনের সংসদ সদস্যরা। এরপর থেকেই মন্ত্রীত্ব পাওয়া নিয়ে জোর লবিং শুরু করেছেন তারা। এরই মধ্যে অনেক সংসদ সদস্য নিজের জনমত গঠনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের ঢাকায় ডেকেছেন। ফেসবুকে ঝড় উঠছে মন্ত্রীত্ব নিয়ে। সংশ্লিস্ট এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলছেন মন্ত্রী দেখা নিয়ে। মন্ত্রীসভায় ঠাই পাওয়া নিয়ে যাদের স্বপ্ন, তারা অবশ্যই নিজের মুখে মন্ত্রীত্বের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন না। এরই মধ্যে অনেকের নাম পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে। তবে এমপিদের হয়ে এলাকাবাসী বা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মন্ত্রীত্বের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন।
তবে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী থেকে এবারের মন্ত্রীসভায় পুর্ণ মন্ত্রী হতে পারেন। বিগত দিনে প্রতিমন্ত্রী পলক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নিরলস ভাবে কাজ করে যাওয়ার কারনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ভাল অবস্থান রয়েছে। এজন্য এবার তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পুর্ন মন্ত্রী হতে পারেন। অবশ্যই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই এমন দাবীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদকে টপকিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চকম দেখান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল। অবহিলত বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে ১৯৭৩ পরবর্তী ৪৬ বছর পর নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। তাই এলাকাবাসীর দাবী উঠেছে বকুলকে মন্ত্রীসভায় ঠাই দেওয়ার জন্য।
লালপুর-বাগাতিপাড়া নিয়ে গঠিত আসনে এই প্রথমবারের মত জনগনের প্রত্যক্ষভোটে আওয়ামী লীগের প্রথম এমপি হিসেবে শহিদুল ইসলাম বকুল নির্বাচিত হয়েছেন। এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৪০ ভোট পেয়ে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
এবারের উদ্যমী মন্ত্রী পরিষদে দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মী, সুধীমহল ও সাধারণ ভোটাররা শহিদুল ইসলাম বকুল এমপিকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।
বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, নাটোর-১ আসনের সর্বস্তরের জনগনের প্রাণের দাবি একজন মন্ত্রী। নাটোর জেলার সব উপজেলা থেকে মন্ত্রী হলেও মন্ত্রী বঞ্চিত উপজেলা বাগাতিপাড়া থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রথম এমপিকে এবার মন্ত্রী করার দাবি উঠেছে। আমরা বাগাতিপাড়া ও লালপুরবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা রাখি এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত ত্যাগী সৈনিক এমপি বকুলকে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হিসেবে দেখতে চাই।
তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মন্ত্রী সভায় ঠাই পাওয়ার জন্য শহিদুল ইসলাম বকুল জোর লবিং করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিনি ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রধান মন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এক নামে বকুলকে চিনেন এবং জানেন বলেই, মন্ত্রী সভায় সে ঠাই পেতে পারে বলে দাবী সূত্রটির। তবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এটা নিয়েই তাকে সন্তোষ্ট থাকা লাগতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম বকুলকে মন্ত্রী করার দাবিতে লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় প্রতিদিন মিছিল ও সমাবেশ করছেন নেতা কর্মীরা।  এরই অংশ হিসেবে রোববার (৬ জানুয়ারি) সকালে বকুলের একমাত্র সহচর, দুর্দিনের সঙ্গি, উদীয়মান নেতা তোহিদুল ইসলাম বাঘার নেতৃত্বে লালপুরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট তাদের একটাই দাবি শহিদুল ইসলাম বকুলকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। 
এক সময়ের বিএনপির দূর্গখ্যাত নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার পর এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় ভোটাররা। বর্তমান সরকারের নানামুখি উন্নয়নের ধারাবাহিকতার দ্রুত ছোঁয়ায় নাটোর-২ আসনকে অলংকৃত করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতেই তাদের এই প্রত্যাশা। তবে শফিকুল ইসলাম শিমুল মন্ত্রীসভায় ঠাই পাওয়ার পর জন্য উচ্চ মহল থেকে জোর লবিং করেছেন। এরই মধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঢাকায় ডেকেছেন তিনি। তার পক্ষে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের কাছে সুপারিশ করার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জোর লবিং চালিয়ে যাবেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন।
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া এমকে ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক জানান, এর আগে আ’লীগ নেতা আহাদ আলী সরকার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু বিগত সংসদীয় সময়ে নাটোর-২ আসনে কোন মন্ত্রী ছিলেন না। নাটোর সদর আসনে শিমুলকে মন্ত্রী করা হলে নাটোর জেলাকে আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন তিনি। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর পরিক্ষিত আ’লীগ কর্মী শফিকুল ইসলাম শিমুলকে মন্ত্রী করার দাবী জানাচ্ছি।
অল্প বয়সে সংসদ সদস্য হয়ে চমক দেখানে নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক। এরপর মহাজোট সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। এছাড়া অবহেলিত চলনবিলবাসীকে দিয়েছে উন্নয়ন।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতমিন্ত্রী জুনাইদ আহমদে পলক ২ লাখ৩০ হাজার ৮৮১ পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতদ্বিন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দাউদার মাহমুদ ধানরে শীষ প্রতীকে মোট ভোট পান ৮ হাজার ৭৫০। এলাকাবাসীর ভালোবাসায় পলক দুই লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হন। তাই এবার জুনাইদ আহমেদ পলককে প্রতিমন্ত্রী থেকে পুর্ন মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান চলনবিলবাসী। গত বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহনের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পলককে পুর্ন মন্ত্রী করার জন্য জোর তুলেছেন তার এলাকার নেতা-কর্মীরা।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিমন্ত্রী পলক উপজেলায় বিভিন্ন কাজের জন্য এলাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয় তিনি। গত মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ খাতে অনেক কাজ করেছেন তিনি। তাই আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তার কোন বিকল্প নাই। তাই এবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী থেকে তাকে পুর্ন মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এলাকাবাসীরা।
নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকেও মন্ত্রীসভায় ঠাই দেওয়ার জন্য দাবী জানিয়েছেন তার এলাকার নেতা-কর্মীরা। মন্ত্রীসভায় নতুন মুখের মধ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার নাম উঠে এসেছে। এজন্য মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন তিনি। এরআগে সাংসদ আব্দুল মন্ত্রী পশু সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনে আব্দুল কুদ্দুস ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জয়লাভ করেন। গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামবাসীর একই চাওয়া ও পাওয়া যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে, সেখানে তাঁকে স্থান দেবেন সংসদ নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে নতুন মন্ত্রীসভায় ঠাই পাওয়ার জন্য এমপি কুদ্দুসের পক্ষে জোর লবিং করছেন তার মেয়ে কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি।
তবে নাটোর জেলার যে কোন আসনে একজন মন্ত্রী থাকছে এমন বিষয় নিশ্চিত করেছেন অনেকে। তবে একাধিক মন্ত্রীত্ব নিয়ে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী পলক অথবা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এই দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে ধারনা দলীয় নেতা-কর্মীদের। তবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে আগামী সোমবার বিকেলে মন্ত্রীসভার শপথের মধ্যে দিয়ে। সে পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top