logo
news image

মৃণাল সেনকে শেষ বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা।  ।  
শেষ হয়ে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের একটি স্বর্ণযুগের। যে যুগের কান্ডারি ছিলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক আর মৃণাল সেন। সেই বিশ্ববরেণ্য চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে অগ্নিতে বিলীন হয়ে গেলেন। মরদেহ নিয়ে শোক মিছিলের পর এই মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এই প্রথিতযশা পরিচালক কলকাতার ভবানীপুরের নিজ বাসভবনে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। মৃণাল সেনের একমাত্র ছেলে কুণাল সেনের আসার জন্য তাঁর মরদেহ কলকাতার হিমঘর পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয়। গতকাল সোমবার কুণাল সেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে কলকাতায় আসার পর আজ মৃণাল সেনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
বেলা আড়াইটায় পিস ওয়ার্ল্ড থেকে তাঁর মরদেহ সবার শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে মতিলাল নেহরু রোডে তাঁর সাবেক বাসভবনের সামনে আনা হয়। এই বাড়িতে জীবনের ১২টি বছর কাটিয়েছেন তিনি। এখান থেকেই তাঁর চলচ্চিত্রে উত্থান ঘটে। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী এখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ রাখা হয়। তারপর এখান থেকে শোক মিছিল করে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে।
মতিলাল নেহরু রোডের বাসভবনের সামনে রাখা মৃণাল সেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছুটে আসেন কলকাতা ছবিপাড়ার শিল্পী, কলাকুশলীসহ সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। সবাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় মরদেহের কাছে উপস্থিত ছিলেন কুণাল সেন।
মৃণাল সেনকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন কবি শঙ্খ ঘোষ, চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদার, সন্দীপ রায়, অঞ্জন দত্ত, অশোক বিশ্বনাথন, অপর্ণা সেন, ত্রিদিব মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র, অভিনেতা প্রসেনজিৎ, কৌশিক সেন, রঞ্জিত মল্লিক, মমতা শংকর, শ্রীলা মজুমদার, মাধবী মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, বিকাশ ভট্টাচার্য, শ্যামল চক্রবর্তীসহ কলকাতার টলিউড এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।
সবাই মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র অঙ্গনে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। বলেন, বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের শেষ মহিরুহের পতন হয়ে গেল। শেষ হয়ে গেল সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল যুগের। সত্যজিৎ রায়ের ছেলে পরিচালক সন্দীপ রায় দাবি করে বলেন, ‘সংরক্ষণ করা হোক মৃণাল সেনের ছবিগুলো।’ নন্দিতা দাস বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক এবং অভিভাবক। তিনি চলে যাওয়ায় আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’ অপর্ণা সেন বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার বাবার মতো। আর ফিরে পাব না তাঁকে।’ প্রসেনজিৎ বলেছেন, ‘মৃণাল সেনের তুলনা নেই। তিনিই আমাদের চলচ্চিত্রের পথপ্রদর্শক। বাংলা চলচ্চিত্র হারাল এক গুণী শিক্ষককে।’
মৃণাল সেনের শেষ ইচ্ছে ছিল, তাঁর মরদেহে কেউ যেন ফুল আর মালা দিয়ে শ্রদ্ধা না জানায়। তাই পরিবার থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, কেউ যেন ফুল আর মালা নিয়ে মৃণাল সেনকে শেষ শ্রদ্ধা না জানান। এই শোকযাত্রায় কারও হাতেই ছিল না ফুল আর মালা।
গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর ভবানীপুরের নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন মৃণাল সেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে। মৃত্যুর পর বিকেলেই তাঁর মরদেহ ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় রাখা হয় কলকাতার হিমঘর পিস ওয়ার্ল্ডে। ৫ জানুয়ারি কলকাতার গোর্কি সদনে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে ১৯২৩ সালের ১৪ মে জন্ম মৃণাল সেনের।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top