logo
news image

জীবনের যত মানবিক গল্প

সোহরাব হাসান।  ।  
মানুষই খবরের কেন্দ্রবিন্দু। আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদের খবরের আগে খবরের পরে: সংবাদ অনুসন্ধান বইটি আরও একবার আমাদের সেই অমোঘ সত্যটি স্মরণ করিয়ে দিল। আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ প্রথম আলোর সাংবাদিক। ২০ বছরে অসংখ্য মানবিক গল্প তিনি তুলে ধরেছেন প্রথম আলোর পাতায়। তার থেকে বাছাই করা ৩০টি প্রতিবেদন নিয়ে এ বই।
তিনি সত্যিকার অর্থে একজন ‘পর্যটক রিপোর্টার’। তিনি এক জায়গায় বসে খবর সংগ্রহ করেন না, খবর সংগ্রহের জন্য ছুটে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে; তাঁর কর্ম এলাকা রাজশাহী হলেও নাটোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল কিংবা ঢাকায়ও ছুটে যান খবরের খোঁজে।
আমাদের চারপাশে কত বিচিত্র ঘটনা ঘটে; সেটি হতে পারে পারিবারিক সম্প্রীতি বা বিরোধ, হতে পারে অপরাধ কিংবা বিনা অপরাধে শাস্তি পাওয়া; হতে পারে পশুপাখি ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। আজাদ অনুসন্ধানী চোখ দিয়ে সেগুলো তুলে আনেন। তাঁর কোনো খবর মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে, কোনো খবর ভালো কাজে অন্যদের প্রেরণা জোগায়; আবার কোনোটি পাঠককে বেদনায় আপ্লুত করে।
আমরা বৃদ্ধ গহের আলীর কথা জানি। যিনি বৃদ্ধ বয়সে জীবিকার কোনো উপায় না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি আরেকটি কাজ করেন—বাড়ি বাড়ি ঘুরে তালের আঁটি সংগ্রহ করে রাস্তার পাশে লাগিয়ে দেন। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভিমপুর ইউনিয়নের রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কজুড়ে ১২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন তিনি। এই তালগাছ থেকে মানুষ নানাভাবে উপকৃত হন। এলাকাবাসী পাকা তাল খান, তালগাছ থেকে রস নামান, পথচারীরা ক্লান্ত হলে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। তালগাছ আরও একটি উপকার করে—বজ্রপাত থেকে মানুষকে বাঁচায়। ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর পত্রিকার পাতায় আজাদ প্রতিবেদন করেছিলেন, ‘নিঃস্ব গহের আলীর তালসাম্রাজ্য।’ পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯–এ পরিবেশ সংরক্ষণে অবদানের জন্য সরকার তাঁকে স্বর্ণপদক দেয়।
পলান সরকার নামে যে বইপাগল মানুষটি গ্রামে গ্রামে ছেলেমেয়েদের বই বিলিয়ে বেড়াতেন, তাঁকেও খুঁজে বের করেন আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ। পলান সরকার চৌকিদারি ট্যাক্স আদায় করতেন। বাঘা উপজেলার আড়ানি বাজারের বইয়ের দোকান থেকে পাইকারি দামে বই কিনে তিনি উপহার দিতেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। পরীক্ষায় যারা প্রথম থেকে থেকে দশম স্থান পেত, তাদের সবাইকে বই উপহার দিতেন।
২০০৭–এর ১৭ ফেব্রুয়ারি পলান সরকারকে নিয়ে প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয় ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’। এরপরই চারদিকে পলান সরকারের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালে তিনি পান একুশে পদক।
এভাবে আজাদ খুঁজে বের করেছেন অজস্র মানুষকে। তাঁদের কেউ জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন, কেউবা সামাজিক অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। তাঁর ‘সম–অধিকার ও সাপের গল্প’ কিংবা ‘গরু ফেরে, স্বামী ফেরে না’, ‘চোখে স্বপ্ন পা জোড়া রিকশার প্যাডেলে’, ‘সাপ ও নারীর সম-অধিকার’, ‘অভিমানী যুবক ও ফেনসিডিলের ট্রাক’, ‘কৃষকের পাঠাগার’, ‘দুই বন্ধুর একটাই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট’, ‘রাজবাড়ীর মিসড কল’, ‘শিয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব’, ‘রাজকন্যার হাতের ছোঁয়া’—এগুলো অনেক হৃদয়গ্রাহী মানবিক গল্পের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। তাঁর প্রতিবেদনের কারণেই ঘোড়সওয়ার তাসমিনার একটি ঘোড়া পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
বইটি সাধারণ পাঠক তো বটেই, সাংবাদিকতার শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের জন্যও অবশ্যপাঠ্য বলে মনে করি। এমন একটি গ্রন্থ রচনার জন্য আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদকে ধন্যবাদ।-সূত্র: প্রথম আলো

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top