logo
news image

শেষ হলো নির্বাচনী প্রচারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক।  ।  
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। এখন ভোটের অপেক্ষা। মাঝখানের আর মাত্র একদিন পর ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০০ সংসদীয় আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সার্বিক নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রতীক বরাদ্দের পরপরই সারাদেশে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা শুরু করেছিলেন প্রচার-প্রচারণা। সেই উৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে আজ সকাল ৮টায়। এখন শুধু শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের অপেক্ষায় আছেন নির্বাচন কমিশন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটাররাও অপেক্ষায় আছেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটটি ঠিকভাবে দেয়ার জন্য।
নির্বাচন কমিশনও তার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। দেশের প্রায় সব নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার। মাঠে নামানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও নির্বাচনী মাঠে নামানো হয়েছে। দেশের মোট ছয়টি আসনে ভোট হবে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন)।
ইসি সূত্রে জানা যায়, এবারের সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই অংশ নিচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা উভয়ই জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে। একক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) সবচেয়ে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে দলটির ২৯২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ও জোট মিলিয়ে ২৭২ জনকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা আছেন ২৫৮ জন। বাকিরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর। তাদের বাইরে জোট শরিক জেপির দুজন নিজস্ব প্রতীকে (বাইসাইকেলে) ভোট করবেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া জাতীয় পার্টি ২৬টি আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া আলাদাভাবে লাঙ্গল প্রতীকেও নির্বাচন করছেন দলের অনেক প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের ২৫৮ জনের পাশাপাশি ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচ, জাসদের তিন, তরিকত ফেডারেশনের দুই, বাংলাদেশ জাসদের এক ও বিকল্পধারার তিনজন নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন।
অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা পেয়েছে ১৯টি আসন। ২০ দলীয় জোটের শরিকরা পেয়েছে ৪০টি আসন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে গণফোরাম পেয়েছে সাতটি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি চারটি, নাগরিক ঐক্য চারটি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ পেয়েছে চারটি আসন।
অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াত ২২টি, এলডিপি ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর নিবন্ধিত অংশ ৩টি ও অনিবন্ধিত অংশ ১টি, খেলাফত মজলিসের ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি, এনপিপি ১টি, পিপিবি ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি এবং লেবার পার্টি ১টি আসন পেয়েছে।
এই তালিকার বাইরে দুটি আসনে বিএনপির সঙ্গে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জামায়াত।
৬ আসনে ইভিএমে ভোট
৩০০টি আসনের মধ্যে এবার ৬টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। আসনগুলো হলো ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, খুলনা-২, রংপুর-৩ ও সাতক্ষীরা-২।
ভোটের প্রস্তুতি
নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসি কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় প্রচারণা শেষ হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এই মুহূর্ত পর্যন্ত যতটা প্রস্তুতি দরকার, সেটা আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। নির্বাচনী সামগ্রীসহ ব্যালট পেপার অনেক আসনে পৌঁছে গেছে। বাকি এলাকাগুলোতে ব্যালট পেপার যেতে শুরু করেছে।
অপরদিকে নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কায় সব সরকারি ও সামরিক হাসপাতাল জরুরি সেবাদানের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। একইসঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সগুলোও স্ট্যান্ডবাই রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম হল থেকে চট্টগ্রামের সব আসনের উপজেলা নির্বাহী ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের সরঞ্জাম হিসেবে ব্যালট পেপার, স্ট্যাম্প প্যাড, দাফতরিক সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, মোমবাতি, চার্জলাইট, মার্কার কলমসহ নানা সামগ্রী চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়। তবে ব্যালট পেপার পৌঁছায় বৃহস্পতিবার।’
রিটার্নিং অফিসার ও বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘১৬টি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএম এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার কারণে চট্টগ্রাম-৪ আসন বাদে বাকি ১৪টি আসনের ব্যালট পেপার আমরা বুঝে পেয়েছি। সেগুলো সেসব উপজেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে নগরজুড়ে তুমুল প্রচারণায় অংশ নেয় আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থীরা। প্রার্থীরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাতভর প্রচারণা চালান কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে। নৌকার পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে অলিগলি রাজপথ, জনপদ। অপরদিকে দমন-নিপীড়নে মাঠে প্রচারে নামতে না পারলেও ভোটারদের ঘরে ঘরে কড়া নেড়েছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী, নেতাকর্মী, সমর্থকরা। তাদের প্রচারণার ধরণ ছিল ‘ম্যান টু ম্যান’ ‘ডোর টু ডোর’। এ ছাড়া ক্ষুদে বার্তা ও অনলাইনে প্রচারণার চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ১৬টি আসনে ভোটগ্রহণের জন্য ৩৭ হাজার ৪৪০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আগামীকাল (২৯ ডিসেম্বর) কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ সব নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অবস্থান নেবেন। তারা মোট এক হাজার ৮৯৯টি ভোটকেন্দ্র ও ১০ হাজার ৬৮৩টি বুথে (ভোট কক্ষ) ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের জন্য ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৬টি ব্যালট পেপার, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৫টি, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) ২ লাখ ২ হাজার ৬৩৫টি, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ৪ লাখ ৩০ হাজার ১২৪টি, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৬০টি, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩২টি, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৬টি, চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং) ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৪টি, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) ৫ লাখ ৭ হাজার ৪০৯টি, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৬টি, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ার-কর্ণফুলী) ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৬৬টি, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩টি, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৭টি এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের জন্য ৩ লাখ ৩ হাজার ১২৩টি ব্যালট পেপার পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ৩২ থানার এক হাজার ৮৯৭ কেন্দ্রের মধ্যে ১১শ’র বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর ১৬ থানার অধীন ৫৯৫ কেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেক কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এই সংখ্যা ২৯৬। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য সাধারণ কেন্দ্রের চেয়ে দ্বিগুণ পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে জেলার ১৬ থানার আওতাধীন এক হাজার ৩০২ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৩২টি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৫টি আসনে সেনাবাহিনী ও বিজিবি এবং একটি আসন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগে, ভোটগ্রহণের দিন ও পরে আইন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ব স্ব দায়িত্বপাপ্ত এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচন কমিশন অথবা অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে। মোতায়েন করা হয়েছে ১৪৫ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও মানব বিপর্যয়ের যে কোনও ঘটনা তাৎক্ষণিক মোকাবেলায় চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৪৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে অবস্থান নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। নির্বাচনের মাঠে এবারই প্রথম সরাসরি অংশ নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৮০০ সদস্য।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top