logo
news image

তথ্য প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে ১৬টি ডিজিটাল সেবা চালু

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।  ।  
সবার জন্য তথ্য প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির উদ্যোগে এবছর ১৬টি ডিজিটাল সেবা এবং প্লাটফর্ম চালু করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য এবছরের শুরুতে এটুআই কর্মসূচি অনলাইন-ভিত্তিক প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন ‘কানেক্ট’ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অ্যাক্সেসেবল ডিকশনারি (অভিগম্য অভিধান)’ চালু করা হয়েছে।
এটুআই কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর একুশের বইমেলার উদ্বোধনী দিনে এটুআই-এর অনলাইন-ভিত্তিক প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ‘একসেসিবল ডিকশনারি’-এর উদ্বোধন করেন।
কিশোর কানেক্ট www.konnect.edu.bd তরুণদের জন্য একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম। যেখানে তারা বই, সিনেমা এবং কমিক বই, সৃজনশীল মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী এবং জীবনের কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা শেয়ার বা আপলোড করতে পারে যা তাদের প্রতিভা বিকাশে, সামাজিক ও ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে, ব্যক্তিত্ব গঠন এবং জাতির কল্যাণে কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র এবং চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি যৌথভাবে কিশোর কানেক্ট নির্মাণ করেছে।
অ্যাক্সেসিবল ডিকশনারি, বাংলাদেশের প্রথম বাংলা থেকে বাংলা, বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা এবং ইংরেজি থেকে ইংরেজি অভিধান। যা বিশেষভাবে দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই সার্ভিসটি ব্যবহার করে বিভিন্ন বয়সের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ ইংরেজি ও বাংলা শব্দের উচ্চারণসহ অর্থ শুনতে পারবেন। এটি www.accessibledictionary.gov.bd ওয়েবসাইটে এবং মোবাইল অ্যাপ ফরম্যাট উভয় মাধ্যমেই পাওয়া যায়।
এটুআই’র সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড-এর সামগ্রিক সহায়তায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইপসা এই অভিধানটি তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষকদের ডিজিটাল প্লাটফর্ম কৃষি বাতায়ন এবং কৃষক বন্ধু ফোন সেবার উদ্বোধন করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) এর সহায়তায় এটুআই কর্মসূচি এ সেবা চালু করেছে।
কৃষি বাতায়ন একটি কেন্দ্রীয় সেবা পোর্টাল। এই পোর্টালটিকে তথ্য সমৃদ্ধ করা এবং এথেকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কৃষক ও ডিএই কর্মকর্তাদের বিভিন্ন চাহিদার কথা বিবেচনা করে কিছু মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
কৃষি বাতায়ন তালিকাভুক্ত যে কোন কৃষক তার ফোন থেকে ৩৩৩১ নম্বরে কল করে কৃষি সম্পর্কিত যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন।
এটুআই জনসাধারণকে যে কোন সময় সরকারি তথ্য ও পরিষেবা নীতির আলোকে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সেবা দান এবং সামাজিক সমস্যার সমাধানের পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য গ্রহণের জন্য ৩৩৩ নম্বর কল সেন্টার চালু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ চলতি বছরের ১২ এপ্রিল এ কল সেন্টারের উদ্বোধন করেন। যে কেউ দেশের যে কোনও স্থান থেকে হেল্পলাইন ৩৩৩ ডায়াল করে এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশ থেকে ০৯৬৬৬৭৮৯৩৩৩ নম্বরে কল করে সরকারি সেবা প্রাপ্তির পদ্ধতি, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারিদের সাথে যোগাযোগের তথ্য, পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানসমূহ, বিভিন্ন জেলাসমূহের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন। মোবাইল অপারেটর রবি এবং দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কল সেন্টার পরিষেবাদানকারী সংস্থা জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড এই কল সেন্টার পরিচালনার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
ধীরে ধীরে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সেবা এই কল সেন্টারের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং জনগণ যাতে তাদের কাছ থেকে সেবা পায় সে জন্য ৫ সহস্রাধিক ডিজিটাল কেন্দ্রের উদ্যোক্তাকে নিযুক্ত করা হবে।
এটুআই কর্মসূচি ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে, চলতি বছরের ২৯ মার্চ ই-লাইসেন্সিং এবং ই-লার্নিং সিস্টেম-এর উদ্বোধন করা হয়।
এই অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে পরমাণু শক্তি কমিশনের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি আবেদনের জন্য একটি ট্র্যাকিং আইডি প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে নাগরিকদের সেবা প্রদানের সময় ও খরচ দুইই বাঁচবে।
এটুআই এবং ইউএসএইড এবছর ১৬ আগস্ট থেকে যৌথভাবে ৬টি ডিজিটাল কেন্দ্র চালু করেছে। এগুলোর মধ্যে গাজীপুরের গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি এবং খুলনায় মৎস্য শ্রমিকদের জন্য একটি ডিজিটাল কেন্দ্র রয়েছে। তৈরি পোশাক ও মৎস্যচাষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাগুলো সহজে, দ্রুত ও কম খরচে প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একেন্দ্রগুলো কাজ করছে।
এসব কেন্দ্র থেকে পোশাক ও মৎস্য শিল্পের কর্মীসহ এলাকায় বসবাসকারীরা কম খরচে ও দ্রুত ১৫০ টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি সেবা, আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণ সেবা গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি তারা এজেন্ট ব্যাংকিং এবং গ্রামীণ ই-কমার্স ‘একশপ’ -এর মাধ্যমে ৫ লাখেরও বেশি পণ্য অনলাইনে কেনা বেচা করতে পারে। ডিজিটাল সেন্টার প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
২০২১ সালের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, পরিদপ্তর ও সংস্থাগুলোর ১ হাজার ৯৭৬ টি ডিজিটাল সেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ডিজিটাল সার্ভিস ড্যাশবোর্ড বাস্তবায়ন কার্যক্রম চালু করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং এটুআই এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ডিজিটাল সার্ভিস বাস্তবায়ন ড্যাশবোর্ডের উদ্বোধন করেন সদ্যবিদায়ী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর অফিসার্স ক্লাব অডিটরিয়ামে আয়োজিত ডিজিটাল সার্ভিস বাস্তবায়ন পরিকল্পনা-২০২১ সমন্বয়করণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে এই ড্যাশবোর্ড সিস্টেমটি উদ্বোধন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, সরকার ৫৩ টি মন্ত্রণালয় এবং ৩২৪ টি বিভাগ, পরিদপ্তর এবং সংস্থার ১ হাজার ৯৭৬ ডিজিটাল সেবা প্রদানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
আইসিটি বিভাগ, ইউএনডিপি এবং ইউএসএইড-এর সহায়তায় এটুআই কর্মসূচি ২২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত জাতীয় এপ্রেনটিসশিপ সম্মেলন ২০১৮-এর প্রথম অধিবেশনে দক্ষতা বাতায়ন (skill.gov.bd) চালু করেছে।
এটুআই কর্মসূচির বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নিয়মিত মনিটরিং ও মেন্টরিং, শিল্প প্রতিষ্ঠানের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা সংগ্রহ এবং দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার জন্য এটি একটি অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্ম।
পরিবেশ অধিদপ্তর এবং এটুআই কর্মসূচি যৌথভাবে নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানার বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘ইটিপি মনিটরিং সিস্টেম’ এবং ‘রিমোট রিভার ওয়াটার মনিটরিং সিস্টেম’ নামে দুটি পরিবেশ চ্যালেঞ্জ তহবিল চালু করেছে।
‘ইটিপি মনিটরিং সিস্টেম’ এবং ‘রিমোট রিভার ওয়াটার মনিটরিং সিস্টেম’ পরিবেশ ও নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং নদ-নদীর পানির গুণমানের উপর তথ্য সরবরাহ করে যথাক্রমে দূষণ থেকে নদীগুলোকে রক্ষা করবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার গত ২৯ জুলাই মোবাইল ভিত্তিক জয় অ্যাপ চালু করেছে। এটুআই কর্মসূচির অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স এগেইন্টস উইমেন (এমএসপিভিএ ডব্লিউ) এই অ্যাপ তৈরি করেছে।
যে কেউ যে কোন জায়গা থেকে গুগল অ্যাপ স্টোরে সার্স করে জয় ১০৯ অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড করে ব্যাবহার করতে পারে। জরুরি পরিস্থিতিতে এই অ্যাপস্ ব্যবহারকারী পুলিশ সুপার, মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার, তিনটি নির্বাচিত এফএনএফ নম্বর (বন্ধু ও পরিবার) এবং জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টার (১০৯) এ তাৎক্ষণিকভাবে বিপদের এসএমএস পাঠাতে পারে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top