logo
news image

ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি মন্থর করা নয়-সাইবার ইন্টলিজেন্সকে সতর্ক রাখুন

-ড. মো: ফখরুল ইসলাম*

ভোটের আর মাত্র ক’টা দিন বাকী। গেল সপ্তাহে পোস্টারে ছেয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট-অলি-গলিতে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরী হয়েছিল। এজন্য প্রতিপক্ষের লোকজনের পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও বিস্তর শোনা যাচ্ছিল। শেষ ডিসেম্বরের হিমেল বাতাস ও কনকনে ঠান্ডার সাথে চতুর্দিকে ভারী-ভাঙ্গা গলায় মাইকের আওয়াজ। পাশাপাশি গত দু’দিনের গুড়িগুড়িঁ দিন-রাতভর বেরসিক বৃষ্টি এসে ‘পোস্টার নেই, শুধু টাঙ্গানো রশিগুলো উপহাস করছে’- বলে সংবাদের শিরোনামও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। শুধু নিজের কথা না ভেবে আগ্রাসী প্রতিপক্ষগুলোকে সেজন্য অপরের প্রতি সহমর্মী হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যাহোক, এরপরও থেমে নেই নির্বাচনের প্রচারণা!  
এরই মাঝে হঠাৎ ভোটের মাঠের ’লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই’ বিষয়টির সত্যতা  নিয়ে সিইসি-ইসির-র মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যা মানুষকে হতাশ করছ্। একটি মহান দায়িত্ব পালন করতে একবারে শেষ পর্যায়ে এসে ’লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই’-এর মত একটি ‘হট’ বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে বাকযুদ্ধ করা নিতান্তই হটকারীতার শামিল। এটা অন্তত: কোন প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাজ হতে পারে না- বলে আমার বিশ্বাস। এজন্য নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে শুধু নয়- ভোটারদের মধ্যেও উৎকন্ঠা বেড়েই চলেছে।  কেউ কেউ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট ভিক্ষা চাচ্ছেন, কেউ কেউ অতীতের ভুলের জন্য গণমাধ্যমে ভোটারদের নিকট সরাসরি ক্ষমা চাচ্ছেন!  বিজিবিও ইতোমধ্যে: মাঠ পাহারায় নেমে পড়েছে। মোদ্দাকথা, আজকাল মানুষ চায় ভোটের কাজ দায়িত্বশীলগণ নিরপেক্ষতার সাথে পালন করে একটি নতুন ইতিহাস গড়ুক। কেউ কোনপ্রকারে গোটা ভোট প্রক্রিয়ার কোন স্তরে নির্লজ্জভাবে কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করুক সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ আজ সতর্ক ও উৎকন্ঠিত। এজন্য বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া বা নেটের গতি মন্থর করে দেয়ার মত কাজগুলো করা খুবই অর্বাচীন মনে হবে। একাজগুলা মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার চেয়ে বেশী রুঢ় মনে হয় এবং নির্বাচনে বিশ্বমিডিয়া বা বিশ্ববাসীর চোখ বন্ধ করে দেয়ার মত পদক্ষেপ বলে মনে হবে। আমার কথা হলো, এমুহুূর্তে কোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার অর্থ হলো- মানুষকে অহেতুক ক্ষেপিয়ে তোলা ও ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্বাসরোধ করে দেয়া!

 বর্তমানে দেশের হাজার হাজার বেকার যুবক দেশ বিদেশ থেকে অনলাইনে ডাটা এন্ট্রিসহ বিভিন্ন অর্ডার নিয়ে পার্টটাইম কাজ করছেন। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাশে যোগ দিচ্ছে এবং লাইব্রেরী ঘেঁটে পড়াশুনা করছে। সাইবার শপগুলোতে মানুষ ই-মেইল পাঠানো, চাকুরীর আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন, ফলাফল দেখা, বিভিন্ন ধরনের সেবা বিকি-কিনি করছেন। ব্যাংকের এটিম বুথের মাধ্যমে লেন-দেন করা ও অনলইন শপিং এখন একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সেক্ষেত্রে এক মিনিট বিদ্যুৎ না থাকা বা ইন্টারনেট সেবা মন্থর হওয়া বা বিঘ্নিত হওয়া মানে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির ব্যাপার। দেশের আয় বাড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার এখন ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার সচলতা। তাই হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আমাদেরকে এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

সংবাদ মাধ্যমে জানা গেল ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি মন্থর করে দেয়া হবে। ফলাফল প্রকাশের সময় গতি বাড়ানো হবে। এটা জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করতে পারে। মানুষ ঘরে বসে তথ্য পেতে চায়। হাতের তালুতে প্রয়োজনীয় তথ্য পেলে বাইরে বের হয়ে হৈচৈ করবে কেন? বরং তথ্য পেতে দেরী বা ব্যর্থ হলেই নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ বেড়ে যাবে।
ভোটের দিন সকালে ইন্টারনেটের গতি কমানো ও ফলাফল প্রকাশের সময় গতি বাড়ানো নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করবে মাত্র। সকালে-বিকেলে  গতি কমানো বাড়ানো এসব স্ববিরোধী কথা নির্বাচন কমিশনকে বলে মানুষের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার দরকারই বা কী?  আমার কথা হলো, কোন ধরনের সাইবার অপরাধ আাঁচ করে থাকলে সাইবার ইন্টালিজেন্সকে সতর্ক রাখুন- নেট বন্ধ করতে হবে কেন?

এছাড়া ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল স্তরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সেবাদানকারী জনবলকে সার্বিক জনগণের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ভুমিকা পালন করতে হবে। দেশের সকল জনগণের জন্য জনসেবায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে নির্ভয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এভাবে একটি সুষ্ঠু নির্ভেজাল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অঙ্গনে টেকসই উন্নয়নের একটি মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠুক- আজকের পরিস্থিতিতে এটাই সবার ভাবনা হওয়া উচিত।

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান।E-mail: fakrul@ru.ac.bd

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top