logo
news image

বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা ও বাংলাদেশ

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।  ।  
মিস ওয়ার্ল্ড হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ও প্রধান আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যুক্তরাজ্যের এরিক মোর্লে ১৯৫১ সালে এই প্রতিযোগিতাটির গোড়াপত্তন করেছেন ও অদ্যাবধি ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
২০০০ সালে এরিকের মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী জুলিয়া মোর্লে প্রতিযোগিতার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।  মিস ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এটির প্রতিপক্ষ হিসেবে মিস ইউনিভার্স এবং মিস আর্থ সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। তবে, মিস ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতাটিই বর্তমান বিশ্বে সৌন্দর্যপ্রিয় জনগোষ্ঠীর কাছে সবচেয়ে বেশী প্রচারিত ও প্রচলিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন সুন্দরী
প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে পরবর্তী এক বছরের জন্য ভ্রমণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়ভার প্রদান করে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে মিস ওয়ার্ল্ড পদবী ধারী নারীকে ঐ সময়কালে লন্ডনে অবস্থান করতে হয়। বর্তমান ২০১৮ মিস ওয়ার্ল্ড মেক্সিকোর সুন্দরী ভেনেসা পেন্স দে লিওন। এর আগের বছর ২০১৭ সালে মিস ওয়ার্ল্ড ছিলেন ভারতের মানুষী চিল্লার।
মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিকিনি প্রতিযোগিতা উৎসবকে প্রতিপক্ষ করে।
এতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সাম্প্রতিককালে প্রস্তুতকৃত সাঁতারের পোষাককে প্রদর্শন করা হয়েছিল যা প্রচার মাধ্যমে মিস ওয়ার্ল্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটির পরিকল্পনা হয় একটি সাধারণ ঘটনা হিসেবে। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এরিক মোর্লে সিদ্ধান্ত নেন যে, সাঁতারের পোশাক প্রদর্শনীটি বাৎসরিকভাবে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা হিসেবে জনসমক্ষে তুলে ধরবেন। বিপক্ষের বিকিনি পরিধানের প্রদর্শনীর বিকল্প হিসাবে আধুনিক সাঁতার পোশাক পরিধান প্রদর্শনীটি ১ম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তুলে ধরা হয়।
১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসি মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতাটি সর্বপ্রথম সরাসরি সম্প্রচার করে। টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের ফলে অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ এর দশকে বিশ্বব্যাপী ৩ কোটি দর্শকের ভোটে দেখা যায় যে, ব্রিটিশ টেলিভিশনটির মিস ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানটি বছরের যে কোন সময়ে তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠান ছিল।
১৯৮০’র দশকে প্রতিযোগিতায় সৌন্দর্যই উদ্দেশ্য শিরোনামে বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়াও মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতাটি নিজ দেশ ব্রিটেনেই পুরনো ধাঁচের এবং রাজনৈতিকভাবে অস্বচ্ছতাপূর্ণ ছিল। ’৮০ এর দশকে ট্রান্সওয়ার্ল্ড কমিউনিকেশন্সসের কাছে অল্প কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ১৯৯৮ সালে চ্যানেল ফাইভ কর্তৃক সম্প্রচারের পূর্ব পর্যন্ত বৈশ্বিকভাবে বিপুল আবেদন থাকা স্বত্ত্বেও প্রতিযোগিতাটি ব্রিটিশ টেলিভিশন নেটওয়ার্কের আওতাধীন প্রধান চ্যানেলগুলোতে বেশ কয়েক বছর ধরে সম্প্রচারিত হয়নি।
নতুন শতাব্দীতে বিশ্ববাসী প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান বিজয়ী হিসেবে ২০০১ সালে আগবানী ডেরিগোকে মিস ওয়ার্ল্ড হিসেবে দেখতে পায়।এর বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা ও কৌশল হিসেবে একজন মিস ওয়ার্ল্ড নির্ধারণের লক্ষ্যে আপনার সিদ্ধান্ত শীর্ষক টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করার ব্যবস্থা করা হয়। এতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, দৃশ্যের আড়ালে এবং সমুদ্র সৈকতে গমন ও দর্শকদেরকে ফোন
কিংবা অন লাইনের তাদের পছন্দের প্রতিযোগিকে ভোট দানের ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়াও প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে প্রতিভা, সৈকতের সৌন্দর্য এবং খেলাধুলার
সামগ্রী টেলিভিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করে। ২০০২ সালে নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা’য় মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজনের স্থানটি ছিল সংঘাতময় বিশেষ করে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আমিনা লয়াল নাম্নী এক নারীকে শরীয়া আইনে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু মিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ তাদের প্রচার কার্যে বৈশ্বিক সচেতনতার বৃহত্তর স্বার্থে এবং আমিনা’কে সম্মান প্রদর্শন করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বার্ষিকভাবে নিয়মিত অনুষ্ঠিত মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে ও
পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন। ১৯৫১ সাল থেকে চলে আসা সংগঠন হিসেবে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ২৫০ মিলিয়নেরও অধিক পাউন্ড শিশুদের দাতব্য তহবিলে দান করে আসছে। মিস ওয়ার্ল্ড লিমিটেড একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান এবং এর আয় ব্যয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। মিস ওয়ার্ল্ডের সৌন্দর্যই উদ্দেশ্য শিরোনাম শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দাতব্য সংস্থার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করা এর অন্যতম কাজ। এছাড়াও ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৭ এবং ২০১০ সালে চীনের স্যানিয়ায় মিস ওয়ার্ল্ড
ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ায় আশ্চর্যজনকভাবে আয়োজক শহরটির পর্যটন শিল্পে সরাসরি অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৈশ্বিকভাবে মিস ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক প্রতিযোগীকে তার নিজ দেশের পদক অথবা বিশেষ রূপরেখার মাধ্যমে মিস ওয়ার্ল্ড ন্যাশনাল প্রিলিমিনারী বিজয়ী হতে হয়। মিস ওয়ার্ল্ড ন্যাশনাল প্রিলিমিনারি সংশ্লিষ্ট দেশের লাইসেন্স প্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিজয়ীকে ঐ দেশের মিস ওয়ার্ল্ড নামকরণে ভূষিত করা হয়।
বার্ষিক প্রতিযোগিতা সাধারণত মাসব্যাপী হয়। এতে বিভিন্ন প্রাথমিক স্তরের গালা, ডিনার, বল এবং অন্যান্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে ও ১৫ থেকে ২০ জনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা মিস ফটোজেনিক পুরস্কার পেয়েছে চার বার (১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬)।
চারজন মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ী মিস ফটোজেনিক পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন-অস্ট্রিড ক্যারোলিনা হেরেরা ভেনেজুয়েলা ১৯৮৪, ঐশ্বরিয়া রাই ভারত ১৯৯৪, জ্যাকুইলিন এগুইলারা ভেনেজুয়েলা ১৯৯৫ ও ডায়ানা হেডেন ভারত ১৯৯৭ ২০০৩ সাল থেকে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে প্রাথমিক পর্বে অংশগ্রহণের সময় ফাস্ট ট্র্যাক পর্যায়েও অংশগ্রহণ করে। ফাস্ট ট্র্যাক বিজয়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে পদার্পণ করে। ফাস্ট ট্র্যাক পর্যায়ে যে সকল পদবী প্রদান করা হয় তাহলো-বিচ বিউটি ২০০৩ থেকে বর্তমান, মিস ট্যালেন্ট ২০০৩ থেকে বর্তমান, মিস স্পোর্টস ২০০৩ থেকে বর্তমান, বিউটি উইথ এ পারপাজ ২০০৫ থেকে বর্তমান, টপ মডেল ২০০৪ ও ২০০৭ থেকে বর্তমান, পিপিলস চয়েজ ২০০৩, পার্সোনালিটি ২০০৩, কন্টেস্টেন্টস চয়েজ ২০০৪।
১৯৫১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মিস ওয়ার্ল্ড এর খেতার জিতেছেন ৮০ জন।
এদের মধ্যে ভারত থেকই রয়েছেন ৬ জন। এরা হলেন- রিটা ফারিয়া ১৯৬৬, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ১৯৯৪, ডায়না হেইডেন ১৯৯৭, যুক্তামুখী ১৯৯৯, প্রিয়াংকা চোপড়া (২০০০) এবং সর্বশেষ মানসী চিল্লার (২০১৭)।
রিটা ফারিয়া উপমহাদেশের প্রথম মিস ওয়ার্ল্ড খেতাবধারী সুন্দরী তিনি। ১৯৬৬ সালে তিনি মিস ওয়ার্ল্ড নির্বাচিত হন। তবে বিশ্বসুন্দরীর তকমা লাভ করেও রিটা মিডিয়া জগতে পা রাখেননি। বরং তিনি বেছে নিয়েছেন চিকিৎসা শাস্ত্রকে। ১৯৭১ সালে আয়ারল্যান্ডের চিকিৎসক ডেভিড পাওয়েলকে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ী হন এই সুন্দরী।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ১৯৯৪ সালে মিস ওয়ার্ল্ড এর মুকুট জয় করেন। এ মুকুট লাভের পর তিনি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। পরে প্রচুর হিন্দি, ইংরেজি, তামিল ও বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সাফল্য পান। ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল ঐশ্বরিয়া অমিতাভ জয়া বচ্চনের ছেলে অভিষেক বচ্চনকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তানের নাম আরাধ্যা।
১৯৯৭ সালে মিস ওয়ার্ল্ড হিসেবে মনোনীত হন ডায়না হেইডেন। বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব লাভের পর রুপালি জগতে পা রাখলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরে মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী কলিন ডিককে বিয়ে করেন ডায়না। বর্তমানে এক কন্যা সন্তানের জননী তিনি। যুক্তামুখী ভারতের হয়ে চতুর্থবারের মত বিশ্বসুন্দরীর খেতাব লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে এ খেতাব পান তিনি। মিস ওয়ার্ল্ড হওয়ার পর তিনিও পা রেখেছিলেন বলিউডে। তবে ডায়না হেইডেনের মত বলিউডে স্থায়ী হতে পারেননি তিনিও। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা এ বিশ্বসুন্দরী অবশ্য এ জন্য নিজের উচ্চতাকেই দায়ী করেন। পরে প্রিন্স টুলি নামের এক শিল্পপতিকে বিয়ে করেন যুক্তামুখী। কিন্তু সেই সংসারও স্থায়ী হয়নি। এক পুত্র সন্তানের জননী তিনি। প্রিয়াংকা চোপড়া। ২০০০ সালে বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব পান তিনি। এরপরই বলিউডে তার সরব পদচারণা শুরু হয়। তিনি বলিউডে অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবির নায়িকা। তার ঝুলিতে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ফিল্ম ফেয়ারের মত বড় বড় পুরস্কার। প্রিয়াংকাকে ভারত সরকার চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী`তে ভূষিত করেন। এছাড়াও ২০১৬ সালে টাইম ম্যাগাজিনের শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় নাম ছিল প্রিয়াংকার।
মানুষী চিল্লার ভারতের হয়ে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব লাভ করেন। ২০ বছর বয়সী মানুষী চিল্লার ১৯৯৭ সালের ১৪মে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তার উচ্চতা ১৭৫ সেন্টিমিটার। তিনি মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে ব্যাচেলরস ডিগ্রি নিচ্ছেন। ১৭ বছর বিরতির পর কোন ভারতীয় এ খেতাব পান।
মিস ওয়ার্ল্ডে অংশগ্রহণকারী সুন্দরীরা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হন। ১৯৫১ সালের মিস ওয়ার্ল্ড খেতাবধারী সুইডেনের কিকি হাকেনসন সবচেয়ে বেশী সময় ধরে তার মুকুট ধরে রেখেছিলেন। ২৯ জুলাই, ১৯৫১ তারিখে লন্ডনে মুকুট পড়ার পর ৪৭৫ দিন তিনি এ বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৯৭০ সালের মিস ওয়ার্ল্ডে নারীবাদী বিক্ষোভকারীরা লন্ডনের রয়েল আলবার্ট হলে ময়দার বোমা নিক্ষেপ করে।
প্রথম আমেরিকান হিসেবে ১৯৭৩ সালের মিস ওয়ার্ল্ড মারজোরি ওয়ালেসকে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে খেতাব কেড়ে নেয়া হয়। আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষের মতে তিনি দায়িত্বপালনকালে সাধারণ শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ী হেলেন মরগ্যান যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন ও চার দিনের মাথায় জানা যায় যে, তিনি কুমারী মাতা ছিলেন। মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ী হিসেবে জার্মানির গ্যাব্রিয়েলা ব্রুম ১৯৮০ সালে ১ দিন পরেই বয়ফ্রেণ্ডের
অসন্তুষ্টিজনিত কারণে পদক ফিরিয়ে দেন। কয়েকদিন পর জানা যায়, একটি সাময়িকীতে তার নগ্ন ছবি মুদ্রিত ছিল।
ভারতের ব্যাংগালোরে ১৯৯৬ সালের মিস ওয়ার্ল্ড ব্যাপকভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। ফলে সুইমস্যুট পর্বটি সিচিলিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়। এতো বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও প্রতিযোগিতাটি শান্তিপূর্ণভাবে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৯৮ সালের মিস ওয়ার্ল্ডধারী ইসরাইলের লাইনর অবরগিলের মুকুট পড়ার পরদিনই জানা যায় তিনি দু’মাস পূর্বে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ধর্ষককে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান সুন্দরী হিসেবে নাইজেরিয়ার আগবানি ডেরিগো ২০০১ সালের মিস
ওয়ার্ল্ড মুকুট পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার সান সিটিতে। ২০০৫ সালের মিস ওয়ার্ল্ড খেতাবধারী আইসল্যান্ডের উন্নার বিরনা ভিলজামসদোতির সবচেয়ে কম সময়ের জন্য মুকুট পড়েছিলেন। মিস ওয়ার্ল্ডের ইতিহাসে তিনি ২৯৪ দিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ তারিখে চেক প্রজাতন্ত্রের তাতানা কুচারোভা’র মাথায় নিজ মুকুট হস্তান্তর করেন। প্রথম পূর্ব এশিয়ার নাগরিক চীনের ঝাং জিলিন ২০০৭ সালে চীনের সানিয়া’য় মিস ওয়ার্ল্ড পদবী ধারী সুন্দরী হন।
এই ধরণের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিছে চলেছে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস ওয়ার্ল্ড। বিশ্ব সৌন্দর্যের এই লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। এই বছর মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার ৬৮ তম আসরের সেরা সুন্দরীদের তালিকার সেরা ৩০’এ স্থান পেয়ে ইতিহাস গড়েন মিস বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় এটিই বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জন। হাজারও সুন্দরীদের পেছনে ফেলে ঐশী বিশ্ব সুন্দরী হওয়ার দৌড়ে শক্ত অবস্থানে ছিলেন। প্রতিযোগিতায় হেড টু হেড চ্যালেঞ্জে গ্রুপ ৬ এ মিস নাইজেরিয়াকে ৩-০ ভোটে হারিয়ে এ কীর্তি গড়েন।
সাক্ষাৎকারে মিস বাংলাদেশ ঐশী বলেন, আমার দেশের ইতিহাস নিয়ে আমি গর্ব করি আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় এটিই বাংলাদেশের সেরা অর্জন। গত বছর এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলো জেসিয়া ইসলাম। সেরা ৪০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
তবে বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ভুল করেন ঐশী। তিনি বলেন- মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ২য় বার অংশগ্রহণ করছে। তবে মূলত এটি বিশ্ব সুন্দরীর লড়াইয়ে অফিসিয়াল ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যানারে বাংলাদেশের ৩য় অংশগ্রহণ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন জেসিয়া ইসলাম। এর আগে ১ম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০১ সালে ৫১তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তাবাসসুম ফেরদৌস শাওন।
এই বছরের প্রতিযোগী ঐশী বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সী এই সুন্দরী চলতি বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এ বছর ৩০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ খেতাব জিতে নেন তিনি।
এবারের বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশ গ্রহণ বিষয়ে এই প্রতিযোগিতার বাংলাদেশের ফ্যাঞ্চাইজি প্রধান অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট স্বপন চৌধুরী বলেন, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয় মুকুট দেশের জন্য জয় করাই আমাদের লক্ষ্য। ধীরে ধীরে আমরা যেভাবে উন্নতি করছি ধারাবাহিকভাবে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বিজয় হবেই। এই বছর সেরা ৩০ আসতে পেরেছি আমরা। আগামী বছর বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে বিজয়ী করতে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো। আমরা যেভাবে এগিয়ে চলেছি তাতে বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট পেতে আমাদের আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। সূত্র: চ্যানেলই আই অনলাইন

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top