logo
news image

বিশ্ব টেলিভিশন দিবস

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।  ।  
২১ নভেম্বর বিশ্ব টেলিভিশন দিবস। ১৯২৬ সালের এই দিনে টেলিভিশন উদ্ভাবন করেন জন লোগি বেয়ার্ড। তার এই উদ্ভাবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দৈনন্দিন খবর জানতে ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এই যন্ত্রটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কম্পিউটার ও স্মার্টফোন এসে বিনোদন ও খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের জায়গা অনেকটাই দখল করে নিলেও এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে।
বিশ্ব টেলিভিশন দিবস উপলক্ষে পেশাজীবী টেলিভিশন প্রযোজকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় র‌্যালি আয়োজন করেছে। প্রধান অতিথি হিসেবে র‌্যালির উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম টেলিভিশন। স্বল্প সময়েই এটি দেশের বিনোদনক্ষেত্রে বেশ পোক্ত জায়গা করেছে। তৈরি করেছে অপার সম্ভাবনা। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি আছে নানা ধরনের সংকটও। ছোট বাজারে বেশি চ্যানেল, কম বাজেট, একই ধরনের অনুষ্ঠান, অনলাইন মাধ্যমগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন—সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বব্যাপী দিনটিকে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হবে। টেলিভিশন দিবস সামনে রেখে দেশের কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানালেন এসব সংকটের কথা। দেশে ৪০টিরও বেশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আছে। তার ওপর আছে বেশ কিছু বিদেশি চ্যানেলও। বাংলাদেশের দর্শক ও বাজার হিসাবে চ্যানেল–সংখ্যা বেশি মনে করেন তাঁরা। এটা একটি বড় সংকট। এর মধ্যে আবার আলাদা বৈশিষ্ট্যের চ্যানেলের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। এনটিভির হেড অব প্রোগ্রাম মোস্তফা কামাল সৈয়দ বলেন, ‘দেশে বাজার ও দর্শক হিসাবে চ্যানেল–সংখ্যা বেশি। চ্যানেল বেশি হওয়াটাও ইতিবাচক, তবে এ ক্ষেত্রে নতুন যে চ্যানেলগুলো আসবে, তার একটি নির্দিষ্ট চরিত্র থাকা দরকার। তা না হলে প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হবে। সব চ্যানেল বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল, তাই একটি বিশেষ চরিত্রের না হলে দর্শক আগ্রহী হন না। তাই আলাদা বৈশিষ্ট্যের চ্যানেল হলে অনুষ্ঠানের ধরন পরিবর্তন হবে। মানও বাড়বে।’
প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে নানা প্ল্যাটফর্ম এসেছে। অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউব একটি বড় বিনোদনমাধ্যম হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। এখন কনটেন্ট দেখার জন্য টিভি সেটের সামনে বসতে হয় না। অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনের মাধ্যমে কনটেন্ট চলে এসেছে হাতের মুঠোয়, যা টেলিভিশনের জন্য অন্যতম বড় সংকট হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগে টেলিভিশনকে নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা করতে হতো। এখন অনলাইন মাধ্যমগুলোর সঙ্গেও পাল্লা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন–অর–রশীদ বলেন, ‘টেলিভিশনকে বলা হয় বিশ শতকের মাধ্যম। একুশ শতকে এসে অন্য মাধ্যমগুলো চলে আসছে। কনটেন্ট দেখার মানুষ বেড়েছে কিন্তু টেলিভিশন সেটের সামনে বসে কনটেন্ট দেখার মানুষ আনুপাতিক হারে কমেছে। এটা টেলিভিশনের জন্য বড় সংকট। হ্যান্ডহোল্ড ডিভাইসের কারণে কনটেন্ট মানুষের হাতে চলে গেছে। টেলিভিশনকে মানুষের কাছে পৌঁছানোই এখন চ্যালেঞ্জ।’
টেলিভিশনের আয়ের বড় উৎস বিজ্ঞাপনও ভাগ হয়ে যাচ্ছে অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে। অথচ একসময় এসব বিজ্ঞাপন ছিল শুধু টেলিভিশনের আয়ত্তে। বাংলাভিশনের প্রোগ্রাম ইনচার্জ তারেক আখন্দ বলেন, একটা সময় ছিল, টেলিভিশনগুলো নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করত। এখন সেই প্রতিযোগিতার পরিধি বেড়েছে। কারণ, টেলিভিশনের পাশাপাশি অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে যে টিভিসির উদ্ভব হলো, সেটাই কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনের কনটেন্ট–ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে দেওয়া হচ্ছে।
তবে মানহীন ও একই ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণের কথাও বললেন অনেকে। যদিও বাজেট কম থাকায় ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে মত দেন কেউ কেউ। দুরন্ত টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন, ‘সব টেলিভিশন চ্যানেলে প্রায় একই ধরনের কনটেন্ট তৈরি হয়। আলাদা কনটেন্টের মাধ্যমে চ্যানেলের আলাদা চরিত্র তৈরি হচ্ছে না। এ ছাড়া দুরন্ত যেহেতু শিশুদের জন্য একটি বিশেষ চ্যানেল, শিশুদের কনটেন্ট তৈরিও একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।’
পাশাপাশি চ্যানেলগুলো যাতে টেলিভিশন কেব্ল নেটওয়ার্ক সরবরাহকারীর কাছ থেকেও একটা অর্থ পায়, সেদিক থেকে নীতিমালা থাকার কথা উঠে আসে। এটি থাকলে দর্শকের কাছ থেকেও সরাসরি একটি অর্থ পাবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো, যা বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা কমাবে বলে মনে করেন তাঁরা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top