logo
news image

বড়াইগ্রামে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে আনন্দ স্কুল

অাব্দুল কাদের সজল, বড়াইগ্রাম (নাটোর) থেকে
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার প্রত্যন্ত পাড়া-গাঁয়ের দরিদ্র, স্কুল বহির্ভুত, সুবিধা বঞ্চিত ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া শত-শত শিশুদের পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করে তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) ফেইজ-২ প্রকল্পাধীন আনন্দ স্কুল। স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন বড়াইগ্রাম উপজেলা শিক্ষা দপ্তরে রস্ক প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর মো. ওছমান গনি সরকার সহ চার জন মোবাইল পুল শিক্ষক মো. সাইফুর রহমান, মো. আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রাজ্জাক। এ প্রকল্পের অধীনে রয়েছে বড়াইগ্রামে ৪৯টি আনন্দ স্কুল। স্কুলগুলোতে লেখা-পড়া করে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী হতদরিদ্র পরিবারের ১১১৭ জন শিশু। তাদের কারো বয়স আবার ১৫ বা তদুর্ধে। স্কুল বহির্ভুত ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া শত-শত এসব শিশুদের পিতা-মাতাকে বুঝিয়ে  পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। এসব শিশুরা ২০১৪ সালে ভর্তি হয় প্রথম শ্রেনিতে। তারা সবাই এখন পঞ্চম শেণিতে অধ্যয়নরত এবং আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পরীক্ষার্থী। দারিদ্রতার কারণে জীবন যুদ্ধে সংসারের আয়-উপার্জনের জন্য অনেক শিক্ষার্থী লেখা-পড়ার পাশাপাশি কাজ করে অন্যের বাড়িতে, হোটেল-রেস্তোরাতে, মাঠে-ঘাটে আবার কেউবা চালায় রিক্সা কেউবা করে হকারী। গত সোমবার ও মঙ্গলবার বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েকটি আনন্দ স্কুল সরেজমিনে দেখতে গিয়ে এসব তথ্য উঠে আসে।
বড়াইগ্রাম মাদ্রাসাপাড়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা (১৪), সোহেল রানা (১৪) তিরাইল আনন্দ স্কুলের বন্যা খাতুন (১৫) জানায় স্কুলে লেখা-পড়ার পাশাপাশি অন্যের রশুন ও মুগ কালাই সংগ্রহ সহ অন্যান্য কাজ করে উপার্জিত অর্থ পিতা-মাতার হাতে তুলে দেই।  তিরাইল আনন্দ স্কুলের পিতৃহারা শিক্ষার্থী মামুন (১৫) জানায়, রিক্সা চালিয়ে গত ১৫ দিনে উপার্জন করে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি দুই হাজার টাকা। এ দুই স্কুলের চার শিক্ষার্থীই দ্বিতীয় শ্রেণী থেকেই ঝরে পড়ে একসময়। আবারও ভর্তি হয় আনন্দ স্কুলে। অন্যদের মতো লেখা-পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে এখন তারাও।
গত সোমবার বড়াইগ্রাম উপজেলার আগ্রান আনন্দ স্কুলে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, শ্রেনিতে পাঠ দিচ্ছেন স্কুল শিক্ষিকা লিপি খাতুন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.এ পাশ।  তিনি জানান, স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ জন। অসুস্থতার কারণে ১ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। তবে সে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। সেখানে দেখা হয় উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর মো.ওছমান গনি সরকারের সাথে। তিনি জানান, উপজেলার ৪৯ টি আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ১১১৭ জন শিক্ষার্থী ২০১৮ সালের আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের সাথে একই প্রশ্নপত্রে  অংশ গ্রহণ করবে নিকটস্থ মাদার স্কুলে। ছুটির দিন ব্যতিত আনন্দ স্কুলগুলো চলে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই সরবরাহ করে উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং স্কুল ড্রেস, উপবৃত্তি ও  সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণ বিনা মূল্যে প্রদান করে সংশ্লিষ্ট রস্ক প্রকল্প। এছাড়া শিক্ষায় গতিশীলতা আনার জন্য ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপজেলায় কর্মরত চার জন মোবাইল  পুল শিক্ষক প্রতিনিয়ত বিকল্প শিক্ষক হিসেবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পাঠ পরিকল্পনা প্রস্তুত করণে শিক্ষকদের সহায়তা, শ্রেণী কক্ষে শিখণ পদ্ধতি অবলোকন এবং স্কুল পরিদর্শন ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছেন।  
 উপজেলার নগর ও জোয়াড়ী ইউপি চেয়ারম্যান যথাক্রমে নিলুফার ইয়াসমিন ডালু ও চাঁদ মোহাম্মদ  জানান, উপজেলায় সকল গ্রামে যেমন গড়ে উঠেনি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তেমনি যাতায়াতের জন্য তৈরী হয়নি শিশু-বান্ধব নিরাপদ রাস্তা-ঘাট। কোমলমতি শিশুদের দুরবর্তী স্কুলে যাতায়াত যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি বিভিন্ন অসুবিধারও মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এছাড়া উপজেলায় রয়েছে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র আদিবাসি ও মৎস্যজীবীর বসবাস। বিশেষ করে বর্যা মৌসুমে কর্দমাক্ত মাঠ, রাস্তা-ঘাট পেরিয়ে পাশের গ্রামে বা দূরবর্তী কোন স্কুলে যাতায়াতে শিশুরা বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হয়। এসব অসুবিধার কথা ভেবে, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সফলভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ঝরে পড়া “ফাতেমা, সোহেল রানা, বন্যা খাতুন ও মামুনের” ন্যায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা আনন্দ স্কুলে পড়া-শুনা করে আলোকিত হোক, নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হোক, সকল শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত হোক, রস্ক প্রকল্পের কলেবর বৃদ্ধি হোক ও কর্মকান্ড স্থায়ী হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সম্পাদনায়-মআকস

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top